সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও শেয়ারবাজারে বড় পতন ডিএসইর লেনদেন কমে হাজার কোটি টাকার নিচে
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দুই কার্যদিবস মূল্যসূচক বাড়ার পর টানা বড় দরপতন দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের মেষ কার্যদিবস দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন কমে হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে।
[২] এদিকে প্রায় দেড় বছর পর গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাসে ৩৫ প্রতিষ্ঠান বাদে সবগুলো থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে রোববার লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধানসূচক ২১৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষ দিকে বিক্রির চাপ কমায় প্রধান সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
পরের কার্যদিবস সোমবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে প্রায় ছয় মাস পর ডিএসইতে হাজার কোটি টার ওপরে লেনদেন হয়। এ পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেলে আরও ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
পরের কার্যদিবস মঙ্গলবার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও বাড়ে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। তবে বুধবার লেনদেন কমার পাশাপাশি কমে সবকটি মূল্যসূচক গতকাল আরও কমে যায়।
[৩] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের জন্য যারা অনবরত চাপ দিচ্ছিল, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর দুই কর্মদিবস তাদের কিছুটা সক্রিয় ছিল। তারপর ফের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। স্মাট বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় গত দুই কর্মদিবস বাজারে বড় পতন দেখা গেল। তারা ফের কম দামে বাজার থেকে শেয়ার তোলার কৌশল নিয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ তুলছেন।
গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রবণতা বাড়তে থাকে। ফলে একদিকে দরপতনের তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
[৪] গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০.২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২০.৬১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ২৪.৫২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে যথাক্রমে ১৩৫২ ও ২১১৪ পয়েন্টে।
ডিএসইতে ৮৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।
[৫] ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৯টি কোম্পানির। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৫টির, কমেছে ২৮২টির এবং শেয়ারদর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির। টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। দিনভর কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৩৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজ ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, বিডি থাই অ্যালুমেনিয়াম, আইএফআইসি ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, অলিম্পিক এক্সোসরিজ এবং সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৫৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৬০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৮টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।