অংশগ্রহণ বাড়াতে সর্বজনীন পেনশনের প্রচারণায় নানামুখী উদ্যোগ চালু করা হবে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন
সোহেল রহমান : [১] সর্বজনীন পেনশনকে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে পেনশন স্কিম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে দেশের প্রতি বিভাগে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাসহ সব জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে প্রত্যেক বিভাগে সভা হবে। হবে। প্রথম কর্মসূচী পালন করা হবে সিলেট বিভাগে।
[২] জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বিভাগে কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার থেকে নিবন্ধন করার সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যারা অনলাইনে প্রবেশ করে নিবন্ধন করতে পারেন না, তারা ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করতে পারবেন। এজন্য একটি সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হবে।
[৩] জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ধারা বিবরণীতে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে জিঙ্গেল। সেই সঙ্গে কল সেন্টারও চালু করা হয়েছে।
[৪] এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগের একটি নীতিমালা করার কথা থাকলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। যদিও ইতোমধ্যে এ খাতের ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
[৫] প্রসঙ্গত: সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে যে হারে মানুষের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল, পরবর্তীসময়ে সেই হার কিছুটা কমেছে। প্রথম মাসেই যেখানে ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করে, পাঁচ মাস পর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৫০ জন। আর তাদের জমা দেয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রথম মাসে যে পরিমাণ মানুষ চাঁদা জমা দিয়েছে, পরবর্তী চার মাসে চাঁদা জমা দেয়া মানুষের সংখ্যা তার অর্ধেকেরও কম। অবশ্য শুরুর মতো এখনো চাঁদা দেওার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। জমা পড়া চাঁদার অর্ধেকের বেশিই দিয়েছেন তারা।
[৬] জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্র মতে, নতুন যে কোন কিছু একটা ম্যাচিউরড জায়গায় যেতে একটু সময় লাগে। আশা করছি শিগগির এটার একটা মোমেনটাম হবে। এটা বাড়বেই। না বাড়ার কোনো কারণ নেই। তার কারণ এখানে আর কোনো অপশন নেই। সামাজিক নিরাপত্তায় এরচেয়ে আর কোনো ভালো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আসতেই হবে এবং আসবে মানুষ।
[৭] প্রসঙ্গত: প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা- এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু করেছে সরকার। উদ্বোধনের পর প্রথমদিনই অর্থাৎ ১৭ আগস্ট নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন। প্রথম এক সপ্তাহে চাঁদা পরিশোধ করেন ৮ হাজার ৫৫১ জন এবং তাদের জমা দেয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর প্রথম এক মাস শেষে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৯ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
[৮] বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৭ হাজার ৫৯২ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১৪ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে এখনো পর্যন্ত যে চাঁদা জমা পড়েছে তার ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা।
[৯] চাঁদা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা। তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৭ হাজার ৫৭৩ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৯ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ মোট চাঁদার ৩৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ এসেছে এই স্কিমের মাধ্যমে।
[১০] যাদের বর্তমান আয়ের সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এই স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ২ হাজার ৫৬৭ জন। তাদের জমা দেয়া চাঁদার পরিমাণ ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। মোট জমা হওয়া চাঁদার ৩ দশমিক ২০ শতাংশ এসেছে এই স্কিমের মাধ্যমে। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ১ হাজার টাকা। এরমধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
[১১] সর্বজনীন স্কিম গ্রহণকারী প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এ পর্যন্ত তারা ২ কোটি টাকার ওপরে জমা দিয়েছেন। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা দিয়েছেন ৫১৮ জন। তাদের জমা দেয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট জমা পড়া চাঁদার ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এসেছে এ স্কিমের মাধ্যমে।