নির্বাচনোত্তর সুশাসনের চ্যালেঞ্জ : দেশের রাজনীতি, কূটনীতি ও অর্থনীতি
[১] ড. আইনুন নিশাত, জলাবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ : নির্বাচনোত্তর চ্যালেঞ্জটিই যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে চ্যালেঞ্জ কে করবে? পার্লামেন্টের সদস্যরা? উত্তর হচ্ছে না। যদিও আমি পেশায় শিক্ষকতা করি, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে কিছু কিছু পড়াশোনা করেছি। আমরা দেখি মাঝে মাঝে ডিসি সাহেব বদলি হন সেখানকার এমপিদের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার জন্য। স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আমি মনে করি যে, এই মুহূর্তে সরকারকে কিছু জিনিসে নজর দিতে হবে। যেমন অর্থ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠিকমতো বুঝে খাদ্য নিরাপত্তা এবং মেগা প্রজেক্টের লাগাম টানা। মেগা প্রজেক্টগুলো যতোদূর সম্ভব দেশীয় অর্থায়নে হওয়া উচিত। গ্লোবাল সিচুয়েশনগুলো মনিটর করতে হবে। কারণ তার সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনীতির সম্পর্ক আছে। আর শিক্ষার ব্যাপারে আমি কনফিউজড আসলে কী হচ্ছে এটি। মনে রাখতে হবে যে ফিনল্যান্ডের পদ্ধতি আমাদের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।
[২] নাসিরউদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব : আমি মনে করি, সংসদে বিরোধী দল নেই। পুরো দেশটাকে একটি বিপর্যয়ের দিকে আমরা ঠেলে দিতে পারি না। আরো বেশি বিরোধী দল আসলে আরো বেশি মানুষ ভোট দিতে যেতো কথাটা সত্যি বলে আমি মনে করি। কিন্তু যারা ভোট দিতে গেছে তারা কি ভোট দিতে পেরেছে? আমার দেখা বা আমাদের তথ্যমতে পেরেছে। কোনো রকম বাধা বা চাপ তৈরি করা হয়নি ভোটের সময়। এখানে আমার কোনো আপত্তি নেই এবং আমার মনে হয়েছে গ্রহণযোগ্য ভোট হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে অংশগ্রহণমূলক ভোট হয়নি। কিন্তু যে ৪১ বা ৪২ শতাংশের মতো দাবি করছে সরকার, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি দুপুর ১টার সময় ভোট দিতে গিয়ে ১৮ শতাংশ ভোট দেখেছি। পরে সারা দেশের ২০০টি জায়গায় একটি অবজারভেশনের তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। সকালে ভোট নেই, কিন্তু দুপুরে এতো ভোটের ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তরে উনারা বললেন, গ্রাম এলাকায় শীতকালে ১টার পর থেকে লোকজন এসে ভোট দেওয়া শুরু করে। সকাল বেলায় মানুষ আসে না। এবারের নির্বাচন একটি নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য। একই দলের দুজন দাঁড়িয়েছে এবং কেন্দ্র থেকে যাকে নমিনেশন দিয়েছে সে হেরেছে। তার মানে তৃণমূলের যে ওপিনিয়ন সেটি কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এই বিষয়গুলো আগে কখনো খবরে ছিলো না।
[৩] ড. রাশেদা রওনক খান, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: এখনকার জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রত্যেকে চায় দেশের বাইরে যেতে। ইকোনোমি একসময় এর একটি বড় কারণ ছিলো। এখন দেশ এবং বিদেশের ধারণাটি অনেক বেশি গ্রে লাইনে চলে গেছে। তাদের কাছে দেশে বা বিদেশে থাকা একই কথা। আমাকে প্রতিদিন প্রথম ক্লাসে উত্তর দিতে হয়, আমি কেন দেশে এসেছি। বিষয়টা এমন না যে বিদেশ গেলেই দেশপ্রেম চলে গেলো, আবার আসলেই সে দেশপ্রেমিক হয়ে গেলো। ২০০ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও আমরা কলোনিয়াল লেগেসি থেকে বের হতে পারিনি। রাজাকার বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তার প্রজন্ম যে সেই লিগেসিটি বহন করবে নাÑ এরকম কোনোভাবে টেকেন ফর গ্রান্টেড ভাবার জায়গা নেই। কোনো না কোনোভাবে সে লেগেসিটা বহন করতে পারে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, ‘সাইলেন্স ইজ অলসো আ রেসপন্স’। যদিও বিএনপি এখানে সাইলেন্ট থাকেনি। উনারা বিভিন্নভাবে বার্গেইন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকারের কৌশলের কাছে হেরে গেছে। আমি বলবো তারা কৌশলগত কারণে হেরে গেছে। আমার ধারণা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সদিচ্ছাই তাদের ছিলো না। নির্বাচন উত্তর চ্যালেঞ্জে এই সরকারকে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে আমার মনে হয়। ইকোনোমি, জিও পলিটিক্যাল অবস্থা সেই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে পড়ে। সরকারকে এখন দেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যারা ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করেছে তাদের সন্তুষ্টি লাভের জন্য দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হবে। জিও পলিটিক্যালি বাংলাদেশ এমন একটি পর্যায়ে যাচ্ছে যেখান থেকে বাংলাদেশের বার্গেইন করার অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে এই জিও পলিটিক্যাল অবস্থা বিল্ডআপ করতে হবে সবার সঙ্গে এক হয়ে।
[৪] শ্যামল দত্ত, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব। সম্পাদক, দৈনিক ভোরের কাগজ : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতে, নির্বাচনের পরে ৩ রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে সরকার। অর্থনীতি, কূটনীতি এবং রাজনীতি। নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক ব্যাপারটি একটি নতুন জায়গায় চলে গেছে। বিএনপি বলছে, ভোটার আসেনি, তাই ভোটারদের ধন্যবাদ। সরকার আবার ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছে ভোটারদের। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে আরেকটি বড় অর্থনৈতিক সংকট আসবে এবং আমাদের এটি মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশ কিন্তু সাকসেসফুলি অনেকগুলো সংকটের মোকাবেলা করেছে। ব্যাংকিং খাতে অনেক দুর্নীতি আছে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও বাংলাদেশটা এখন যে জায়গায় গেছে সেটি আপনি কোন ধরনের লেন্স পড়ে দেখবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সকল মানুষ বিদেশে যেতে চায় এই কনসেপ্টের সঙ্গে আমি একমত নই। সাধারণ মানুষের একটা বড় চাওয়া হচ্ছে, একটা ভালো চাকরি। জিও-পলিটিক্সের কথা যদি বলি তাহলে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের জায়গায় যাওয়া শুরু হয়েছে, যেটা বাংলাদেশ ফরেন পলিসির মূল বক্তব্য।
[৫] ব্যারিস্টার তানজিব-উল আলম, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট : নির্বাচন নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু কিংবা গ্রহণযোগ্যÑ এই যে তিনটি ব্যাপার আমরা ব্যবহার করছি, প্রতিটির ক্ষেত্রে জাজমেন্ট দেওয়াটা সাবজেক্টিভ এবং অবজেক্টিভ দুটোর কম্বিনেশন হয়। এ ক্ষেত্রে আমার কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিষয় নিয়ে যেটি মনে হয় কন্সটিটিউশনাল পার্সপেক্টিভ থেকে এখানে কোনো রিলেটিভ ডিগ্রির বিষয় আছে কি না যে ৫০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সুতরাং আমরা এটাকে ভ্যালিড বলছি, অথবা ৪৯ শতাংশ হয়েছে সেজন্য ইনভ্যালিড। পার্টিকুলার নম মেনে যদি একটি নির্বাচন করা হয় এবং সেটি যদি আইনের চোখে বৈধ হয়, তাহলে সেটাই গ্রহণযোগ্য। প্রশ্ন হচ্ছে যে কন্সটিটিউশনাল ডিস্পেনসেশনে সাধারণ জনগণের যে গ্রহণযোগ্যতা বা অংশগ্রহণের কতোটুকু রিফ্লেকশন হয় সেটি যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সমালোচনা করতে যান, তাহলে সারা পৃথিবীতে দেখা যায় যে একচুয়াল ইলেকশন প্রসেসে কতোভাগ জনগণ অংশগ্রহণ করছে। বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে উনাদের এমন কন্ডিশন করা হয়েছে যাতে করে তারা নির্বাচনে আসতে না পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে সাধারণ জনগণ তাদের এই অভিযোগটিকে কতোটা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে বা সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে সেটির রিফ্লেকশন কতোটুকু আসছে? এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের ভবিষ্যতের কথা বা উন্নতির কথা চিন্তা করি তাহলে নির্বাচন হয়ে যওয়ার পরে আমরা কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করছি দেশের উন্নয়নের জন্য কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাকে আরও বেশি অর্থবহ করার জন্য। অনেকের মতে, আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী নিজেরাই বলছেন যে নির্বাচন অবাধ হয়নি। তাদের অভিযোগের নিশ্চয় কোনো না কোনো ভিত্তি আছে। আমি আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে হাই কোর্টে আপিল ফাইল করবেন। তার মানে এই নয় যে বাকি যে ২৯৯টি আসন আছে সেগুলো অবৈধ হয়ে গেছে। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী তার অভিযোগ করার ক্ষমতা আছে। বিএনপি বললো, উনারা এখন রিফ্লেকশনের মুডে আছে, নির্বাচন উত্তর কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে। তার মানে উনারা নির্বাচন পরবর্তী রিয়েকশন হিসেবে একটা মিছিলের কথাও চিন্তা করেনি। নির্বাচনি প্রক্রিয়াটিতে একদলের ব্যর্থতাকে প্রতিপক্ষের কর্মফলের জন্য বলেন, তার মানে হলো সেই দলের প্রিপারেশনে কোনো না কোনো ঘাটতি আছে।
[৬] ফারুক ফয়সাল, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র: আমরা নির্বাচনের আগে থেকেই বলে আসছি যে ,এটি আওয়ামী লীগের একটি আবৃত নির্বাচন। এটি নিয়ে এখন আর চিন্তা নেই। এখন আলোচনার ব্যাপার হচ্ছে কীভাবে আমরা সুশাসনের দিকে যেতে পারি। এই নির্বাচনের প্রভাব জনগণের উপর যতোটুকু পড়েছে তার চাইতে বেশি পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের উপরে এবং এটা আরো চলতে থাকবে। দেশের জনগণের অংশগ্রহণের চইতে বিদেশিরা কী বলছে, সেটা আমাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথাব্যাথা থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের কী হবে না হবে সেটি জনগণের লক্ষ্য। জনগণের লক্ষ্যর চাইতে বেশি হয়েছে ভূ-রাজনীতি এবং অন্যদের কী স্বার্থ জড়িত আছে সেটি। আমি মনে করি সুশাসন যদি বলতে হয় তাহলে যে সরকারই ক্ষমতায় তাকে নিজের দলের ভাঙন ঠেকানো এবং দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, মানিলন্ডারিং বন্ধ করার ব্যবস্থা তাদের করা উচিত। এখন সেটি যদি করতে পারে তাহলে গ্রহণযোগ্যতা ভেতর থেকেই আসবে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় আমি কয়েকটি অংশ দেখেছি। এখানে একদলীয় শাসন আছে, সেটি বলা যাবে না। এক ব্যক্তিক শাসন আছে। এক ব্যক্তি যাদের উপর খুশি তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। নতুন মানুষ নিয়ে আসা হয়েছে। পুরোনো যাদের উপরে এক ব্যক্তি খুশি নন তারা হাওয়া হয়ে গেছে। বর্তমান মন্ত্রিসভাকে আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। কিন্তু দেখার কথা হচ্ছে যে তারা ডেলিভারিটি কী দেয়।
[৭] ড. নাভিন মুরশিদ, শিক্ষক, কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র : আমরা যারা ৭১-এর পরে জন্ম হয়েছি, আমরা কেউই দেশদ্রোহী নই। আমরা যেই দল করি না কেন, তাতে ধরে নেওয়া যায় না যে আমরা দেশের বিরুদ্ধে। আমাদের বিভিন্ন ধরনের ইডিওলজি থাকতে পারে। আমরা ভাবতে পারি যে গণতন্ত্র আমাদের জন্য না বা হ্যাঁ বা যাই হোক না কেন, বেসিক জায়গাটি আমাদের শুরু করতে হবেÑ এটি মাথায় রেখে যে আমরা ৭১ এর পক্ষের লোক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক এবং আমরা সবাই দেশের উন্নয়ন চাই। আমাদের কন্সটিটিউশনে তো অনেক কিছুই আছে। আমাদের তো একটি সমাজতন্ত্র হওয়ার কথা ছিলো। সমাজতন্ত্রটি তাহলে কোথায়? আমরা যদি সমাজতন্ত্রের পথে না থাকি তার মানে কি আমরা দেশদ্রোহী? আমরা কেন ক্যাপিটালিস্ট একটা ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি। তার মানে কি আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি না বা কন্সটিটিউশন মেনে চলছি না? কিন্তু একজন একটা কিছু বলছে বলে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে!
এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে জনগণ কোথায়? আমি বলবো যে জনগণ যদি চায় তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়তো হতে পারতো। জনগণের দ্বারা যুদ্ধ হয়েছে, এরশাদকে নামানো হয়েছে, আবারো হতে পারে বা হবে সেই আশা আমরা রাখি। কিন্তু কেন হচ্ছে না? এটার জন্য আমাদের হয়তো ভাবতে হবে যে আমরা এমন একটি সময়ে আছি যেখানে আমরা এরকম পলিটিক্যাল রিফ্লেকশন দেখিনি। যেমন আমাদের বাড়িতে যে খালা কাজ করেন উনার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিছিল করার জন্য। কিন্তু এক্সপ্লোশন এক্টে এবং আমি যেটা জানতে পারলাম যে প্রতি রাতে নাকি রেইড করে করে ছেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই জিনিসটি কখনোই খবরের কাগজে আসে না। যেহেতু আমি দেশের বাইরে থাকি, তাই ভাবলাম যে এই সময় যদি আমি এখানে না থাকতাম, তাহলে বিষটি জানতামই না। বিভিন্ন রকম জরিপ আছে যে আমাদের দেশের ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ বলে যে তারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়। উনারা কেন দেশ ছেড়ে যেতে চাইছে? এখানে অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি একটা রাজনৈতিক দিকও আছে। উনারা একধরনের অনিশ্চয়তা বোধ করে। আমরা যদি আবার নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে হয়তো আবার প্রশ্ন আসতে পারে যে, জনগণ কোথায়? সেদিক থেকে আমি বলবো বিরোধী দলীয় নেতারা যখন বলেন যে উনাদের ডাকে কেউ ভোট দিতে যায়নি, সেটিও হয়তো পুরোপুরি সত্য নয়। আগে প্রশ্ন উঠেছিলো যে ভোটে না যাবার অধিকার বিরোধী দল রাখে। কিন্তু সেই অধিকারটি রাখলেও আমাদের দেখতে হবে যে অসুবিধাটি আসলে কোথায়? আমি বলবো অসুবিধাটি হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক ইন্সটিটিউশনে। আমাদের বিশ্বাস নেই আমাদের রাজনৈতিক ইন্সটিটিউশনগুলোর প্রতি, যদি থাকতো তাহলে এ ধরনের অসুবিধা হতো না। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা যখন আসে তখন মনে হয় যে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে ঠিকমতো কাজ করছে না।
[৮] খুশি কবির, মানবাধিকারকর্মী, সমন্বয়ক, নিজেরা করি : আসলে আমরা কী ধরনের রাজনীতি চাই? আমরা একটু দায়িত্বশীল রাজনীতি চাই। দেশের সকল জনগণের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে এরকম রাজনীতি। সেখানে অনেক সমস্যা আছে সেগুলোও আমাদের জানতে হবে। কিন্তু আমি যদি এই নির্বাচনের কথা বলি তাহলে নির্বাচন উত্তর সুশাসনের চ্যালেঞ্জটা কী। বর্তমানের রাজনীতি হচ্ছে কিছু কিছু সরব বা যারা একটু অর্থ বা কোনো কিছু দিয়ে প্রভাব কাটাতে পারে তাদের সন্তুষ্ট করা। এখানে ধর্মকে ব্যবহার করা হয় সার্বিকভাবে। এই ধর্মকে ব্যবহারের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীরা। আমি যদি দেখি যে আমাদের আদিবাসীদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত যে আইন ছিলো বিশেষ করে যেখানে সম্পদের ব্যাপার আছে সেগুলো আমরা মানি না। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি যে সুশাসন চাইলে সেটি সবার জন্য থাকতে পারে। বর্তমান সরকার জানে তাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী। দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন এখনো দেখিনি, আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা!
[৯] ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারম্যান, সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজ : প্রথমত এটিকে নির্বাচন ঠিকমতো বলা যাবে না। অবাধ বা অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না। অংশগ্রহণের পরিবর্তে আংশিক নির্বাচন হয়েছে। গ্রহণযোগ্যতার কথাটি হচ্ছে আমরা গ্রহণযোগ্যের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছি কোন কোন দেশের রাষ্ট্রদূতরা অভিনন্দন জানাচ্ছে সেটির উপরে। কিন্তু দেশের জনগণ কতোটা গ্রহণ করেছে বা কতো ভাগ ভোট দিয়েছে সেই বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্ন আছে। মোটামুটি ১০০ আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সুতরাং এই নির্বাচনকে কোনোভাবেই একটি ভালো নির্বাচন বলা যায় না। এই নির্বাচন কোনোভাবেই সম্পূর্ণ হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য এই সবগুলো বিষয়ই এখানে আংশিক ছিলো।
সূত্র : একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ টকশো ‘এডিটর গিল্ড’-এর আলোচনা থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন সঞ্জয় চন্দ্র দাস। সংক্ষেপিত।