ব্যয় হবে ৪২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা সিঙ্গাপুর থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির প্রস্তাব ওঠছে ক্রয় কমিটিতে
সোহেল রহমান : [১] বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে আগামী মার্চের জন্য স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এটি চলতি পঞ্জিকা বছরের চতুর্থ কার্গো আমদানির প্রস্তাব। পেট্রোবাংলা এটি আমদানি করবে। কার্গোটিতে এলএনজির পরিমাণ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড এই কার্গো সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ৯ দশমিক ৯৩ ডলার হিসাবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ মোট ব্যয় হবে ৪২৯ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
[২] জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে ফেব্রুয়ারির জন্য এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৮৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ওই কার্গোটি আমদানিতে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ মোট ব্যয় হবে ৪৭০ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে হিসাবে মার্চের কার্গো আমদানি প্রস্তাবে তুলনামূলকভাবে ব্যয় কমছে।
[৩] সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৩ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। এর মধ্যে আগামী মার্চের জন্য চার কার্গো এলএনজি প্রয়োজন হতে পারে। এর বিপরীতে এক কার্গো আমদানির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হচ্ছে। [৪] সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র অনুমোদনক্রমে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২২টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ (এমএসপিএ) চুক্তি সই করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মার্চের জন্য এক কার্গো এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলা কর্তৃক দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে এবং সবকটিই রেসপন্সিভ হয়। দরপত্রে অংশ নেয়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑ সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড’ (প্রস্তাবিত দর প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.২৩ ডলার); যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জি এলপি (প্রস্তাবিত দর প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.৩০ ডলার); সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড (প্রস্তাবিত দর প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.৯৮ ডলার) এবং সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গানভর সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড (প্রস্তাবিত দর প্রতি এমএমবিটিইউ ১১.৯৮ ডলার)।
[৫] জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি’র মূল্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুনে বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে।
[৬] সূত্র জানায়, তবে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানির বর্ধিত ব্যয় নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জারিকৃত এসআরও অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়, যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে।