
পৃথিবীতে সব থেকে মধুর ভাষা বাংলা ঘুমের জন্য ওষুধ নয়, বই পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী

মাসুদ মিয়া: [১] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পৃথিবীতে সব থেকে মধুর ভাষা বাংলা। এত চমৎকার ভাষা কোথাও আছে কি না জানি না। হয়তো এটি আমাদের মাতৃভাষা বলে এমনটা মনে হয়। তিনি বলেন, পড়ার অভ্যাস সবার থাকা উচিত। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা যদি শিখায় সেটি ভালো হয়। অনেকে ঘুমের জন্য ওষুধ খায়, প্রয়োজন নেই। বই পড়লেই ঘুম চলে আসে। বেশি মজাদার বই পড়লে আবার ঘুম আসবে না। এ জন্য আবার বই বাছাই করতে হবে। [২] গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন প্রকাশকদের শুধু কাগুজে প্রকাশক হলে চলবে না, ডিজিটাল প্রকাশক হতে হবে। তাহলে আমরা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবো। বিদেশেও পৌঁছাতে পারবো। লেখার পাশাপাশি অডিও থাকবে, এমনটাই করা উচিত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। অনুবাদ করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য আছে, অনুবাদ না করলে আমরা কীভাবে জানবো? পাশাপাশি আমাদের বইগুলোও বাংলা থেকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। বইমেলায় প্রাণ ফিরে পাওয়ার স্মৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে এলে ভালো লাগে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসার মজা নেই। ডানে ঘুরলে নিরাপত্তা, বামে ঘুরলে নিরাপত্তা। এ নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতাই হারিয়ে গেছে। এখানে স্কুল জীবন থেকে আসতাম। সে মজা এখন নিরাপত্তার কারণে তা পাই না। [৩] প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগৃহীত রচনা: দ্বিতীয় খন্ড’ এবং ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’ (বাংলা একাডেমীতে শেখ হাসিনার গত ২০ বারের ভাষণের সংকলন) শীর্ষক দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
[৪] এছাড়া, উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ১৬ জনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়। বিভাগগুলো হলো-কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ/গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশুসাহিত্য বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র, জীবনী এবং লোক কাহিনী। প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী ( কথা সাহিত্য), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক ও নাট্য সাহিত্য), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।
[৫] বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথা সাহিত্যক সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
[৬]অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো’ পরিবেশিত হয়। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বইমেলা ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
[৭] বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে।
রমনা কালী মন্দিরের পাশে সাধুসঙ্গ এলাকায় ‘শিশু চত্বর’ স্থাপন করা হয়েছে।
পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েনসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
[৮] এদিকে প্রতি কর্মদিবসে বইমেলা বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।
