নির্বাচনের আগে কিছু পণ্যের দাম কমলেও আবারও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম পেঁয়াজ সবজি চাল ও গরুর মাংস
মাসুদ মিয়া: [১] কোন ভাবেই নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। নির্বাচনের আগে কিছু পণ্যের দাম কমলেও আবারও সেই সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনের পর আবারও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সক্রিয় থাকায় কারণ ছাড়াই বাড়ছে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বিবিন্ন বাজারে বেড়েছে ডিমের দাম। একইভাবে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দামও। অন্যদিকে শীতের সবজি ভরপুর থাকলেও চড়া দামে বিক্র হচ্ছে। চালের দাম যে হারে বেড়েছিল এখনো তা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। তাতে সাধারণ ক্রেতারা পড়েছেন অস্বস্তিতে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। তবে বড় বাজারে ডিমের ডজন ১৪০-১৪৫ টাকায় মিলছে। নির্বাচনের আগে ডিমের ডজন ছিল ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা গরুর মাংসের কেজি ছিল ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা। এখন সেই গরুর মাংস ৭০০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
[২] রামপুরা বাজারে পাইকারি ডিম বিক্রেতারা জানান, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, শীতকালীন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের হার বাড়ায় চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দুইয়ে মিলে ডিমের দাম বাড়ছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে উত্তপ্ত ছিল দেশের পেঁয়াজের বাজার। জানুয়ারি মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম ৮০ টাকায় মধ্যে নেমে আসে। মাসের শেষে নতুন করে বাজারে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে বেশিরভাগ দোকানেই নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। পুরোনোর কেজি ৯০ টাকা। তবে বড় বাজারে ৮০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।
[৩] পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মতিঝিল বাজারের বিক্রেতারা বলেন, মুড়িকাটা শেষ, নতুন হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে কিছুদিন সময় লাগবে।
[৪] মোকামে দাম বেড়েছে। পাবনায় প্রতি মণ ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা কেনা পড়ছে। যা আগের থেকে ৪০০ টাকা বেশি। নির্বাচনের পর সারাদেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল চালের দাম। সে সময় প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়ে। এরপর গত দুই সপ্তাহ ঢাকাসহ সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করে খাদ্য অধিদপ্তর। এ অভিযানের ফলে কোথাও কোথাও ধান ও চালের দাম কিছুটা কমেছে।
[৫] তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগেই উচ্চমূল্যে থাকা চালের দাম কমেছে সামান্যই। বাজারে মিনিকেট চাল কেজিতে সাড়ে ৬ টাকা বাড়লেও অভিযানের পর কমেছে ২ টাকা।
[৬] গতকাল মতিঝিল বাজারে চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল সাড়ে ৭৩-৭৫ টাকা। তবে ভোটের আগে এ মিনিকেট বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৮-৭০ টাকায়। হিসাব অনুযায়ী মিনিকেট চালের বাজার বেড়েছিল ৬ টাকা। অভিযানের পর সেই চালের দাম কমেছে মাত্র ২ টাকা।
[৭] এভাবে ব্রি-২৮ জাতের চালের কেজি আগে ৫৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হলেও সর্বশেষ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়, স্বর্ণা ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হলেও এখন ৫৩-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[৮] সবজির বাজারে অস্বস্তি দীর্ঘদিনের। যদিও এখন শীতকাল, চলছে সবজির ভরা মৌসুম। তারপরও বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। যা সাধারণের নাগালের বাইরে।
[৯] এছাড়া মৌসুমি ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি মাঝারি আকারের লাউ ৮০-১০০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-২০ টাকা বেড়েছে।
[১০] এছাড়া খুচরা বাজারে শীতকালীন বেগুন ৯০-১১০ টাকা কেজি, দেশি শিম ৬০-১০০ টাকা, টমেটো ৭০-৯০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
[১১] এদিকে, কিছুদিন দাম একটু কমলেও ফের বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনি এলাকা ভেদে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
[১২] সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, এ বছর সবজি ও আলুর সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আবহাওয়ার কারণে অক্টোবর এবং নভেম্বরে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।যদিও বাজারে আলুর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। অন্যান্য বছরের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এর দাম বেশি হলেও শেষ কয়েক মাসের তুলনায় কম।
[১৩] মতিঝিল বাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজি কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। কারণ, বৃষ্টিতে সরবরাহ কম। এতে পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ অবস্থা ব্যবসা করাই কঠিন এখন। মাছের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে আগে থেকেই। চাষের মাছের দামও এখন বেশ চড়া। এক্ষেত্রেও সরবরাহ সংকট এবং বাজারে ইলিশ কম থাকার কথা বলছেন বিক্রেতারা।
[১৪] আগে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, একই মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও ৩০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। চাষের কই, পাবদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকার বেশি দরে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এক কেজির বেশি ওজনের হলে ৩৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আর বড় মাছের কেজি ছুঁয়েছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
[১৫] বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে তিনটি হবে- এমন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। যা গত বছর একই সময়ে ৪০০ টাকা ছিল। আকারে একটু বড় ইলিশ দামেও বেশি। একেকটি ৮০০ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকার বেশি। এক কেজি সাইজের ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। আর কেজির বেশি ওজনের হলে দুই হাজার টাকা বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। দর কষাকষি করে হয়তো কিছুটা কমে কেনা যাচ্ছে। তবে তা সাধারণ ভোক্তাদের একেবারেই নাগালের বাইরে। এদিকে মতিঝিল বাজারে জাকির নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমার বেতন এ বছরের শুরুতে যা ছিল এখনো তাই আছে। বেতন বাড়েনি নির্বাচনের আগে গরুর মাংস ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা কিনছি ভেবে ছিলাম আরও কমবে এখন দেখি সেই আগের দামের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। কিন্তু প্রায় সবকিছুরই দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার মাসিক খরচ অন্তত ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। এই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে গিয়ে সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় করতে হচ্ছে।