টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের এ দাবীর এখনই প্রতিবাদ করছেনা বাংলাদেশ
বিশ্বজিৎ দত্ত : [২]’টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতের দাবীর এখনি কোন প্রতিবাদ করছে না বাংলাদেশ। গতকাল টেলিফোনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ কথা জানান।
[৩] তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি বাংলাদেশের পণ্য এটি বিশ্বজুড়েই জানে। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসাবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি বিষয়। টাঙ্গাইল জেলার সাথে এর নাম জড়িয়ে আছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারত দাবি করেছে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ তাদের পণ্য। এনিয়ে আমাদের ব্যার্থতা কোথায় তা খুঁজে বের করবো। তারপরে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় চিন্তা করবো।
[৪]গত বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেইজে একটি পোস্টে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের বহিঃপ্রকাশ । চলতি বছরের জানুয়ারির দুই তারিখে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশকপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
[৫]ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’র তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তশিল্প বিভাগ এর জন্য আবেদন করেছিলো ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে।
টাঙ্গাইল শাড়িকে ধরা হয় নদীয়া ও পূর্ববর্ধমানের পণ্য হিসেবে। একইসাথে মুর্শিদাবাদের গরদ ও করিয়াল নামে আরো দুটি শাড়িও যুক্ত হয় জিআই নিবন্ধিত তালিকায়।
[৬]পাঁচই জানুয়ারি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এসব শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেন। [৭]বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য জিআই’র তালিকায় টাঙ্গাইল শাড়ির উপস্থিতির কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বিসিক এর বিপণন শাখার মহাব্যবস্থাপক অখিল রঞ্জন তরফদার। এ খবরে ‘বিস্মিত’ হয়েছেন বলে বিবিসি বাংলায় মন্তব্য করেন। তিনি ঢাকাই জামদানি, রংপুরের শতরঞ্জি ও শীতলপাটির মত পণ্যগুলোর জিআই প্রাপ্তির সময় এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
[৮] টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে যুক্ত হরিপদ বসাক বিবিসি বাংলাকে জানান, “১৮৫০ সাল বা তার কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন ধামরাই এবং চৌহট্ট নামে দুটি গ্রামে মসলিনের উত্তরসূরী কিছু তাঁতি বসবাস করতেন। সন্তোষ, করটিয়া, দেলদুয়ারে জমিদারি পত্তনের সময় অন্যান্য পেশাজীবীদের পাশাপাশি ওই তাঁতিদেরও সেসব জায়গায় নিয়ে বসতি স্থাপন করা হয়।”এসব গ্রামের মানুষেরা যে শাড়ি বয়ন করতেন তাই ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
[৯]২০১৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার তাঁতীদের নিয়ে একটি গবেষণা করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক সুব্রত ব্যানার্জি, মো. মনিরুজ্জামান মুজিব ও সুমনা শারমিন। সেখানে নলশোধা গ্রামের উদাহরণ টেনে উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতার পর পুরো গ্রামেই বাড়িতে বাড়িতে তাঁত থাকলেও ২০১৪ সালে সরেজমিনে তারা দেখতে পান মাত্র ২২ টি পরিবার এই পেশায় যুক্ত আছে।
[১০]বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁতশিল্প নিয়ে গবেষণা করেন নিলয় কুমার বসাক। তিনিও ওই তন্তুবায় সম্প্রদায়ের উত্তর প্রজন্ম।
মি. নিলয় বিবিসি বাংলাকে বলেন, “১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বসাক সম্প্রদায়ের বড় অংশই ভারতে চলে যান। তাদের ভিড়টা বেশি হয় নদীয়া জেলার ফুলিয়া গ্রাম এবং পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রী গ্রাম ও সমুদ্রগড়ে।”