এলএনজি সরবরাহ বাড়াতে ১৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা
সোহেল রহমান : [১] স্থানীয়ভাবে গ্যাসের উত্তোলন কমতে থাকায় ভবিষ্যতে আরও বেশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হবে বাংলাদেশকে। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত আমদানি চালান সরবরাহের জন্য ১৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে নতুন একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
[২] জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বড় কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে আগামী ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের বর্তমান গ্যাস রিজার্ভ সম্পূর্ণ নিঃশেষিত হয়ে যাবে। তখন গ্যাসের দৈনিক চাহিদা হবে ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এ প্রেক্ষাপটে আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের চাহিদা ও আমদানির কথা মাথায় রেখে নতুন এ পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আগামী এক বছরের মধ্যে এটি শেষ হলে প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় সম্পর্কে জানা যাবে। প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব (পি-ডিপিপি) নীতিগত অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন লাভের পর বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হবে।
[৩] সূত্রমতে, পি-ডিপিপি অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ২৯৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহেশখালী/মাতারবাড়ী-বাখরাবাদ পাইপলাইনটির বাস্তবায়ন কাজ চলতি বছরই শুরু করে ২০২৯ সালের মধ্যে তা শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যমান পাইপলাইনগুলো বাখরাবাদে এলএনজি সরবরাহের জন্য যথেষ্ট নয়। নতুন পাইপলাইনটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে অতিরিক্ত দূরত্বে গ্যাস সরবরাহের জন্য নির্মাণ করা হবে। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ীতে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল থাকবে। আরও টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে।
[৪] জানা যায়, প্রস্তাবিত স্থল-ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল থেকে আমদানি করা এলএনজি সরাসরি ঢাকায় পৌঁছে দেবে প্রস্তাবিত নতুন পাইপলাইন। এটি গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানা, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে দৈনিক অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করবে। [৫] জানা যায়, বর্তমানে গ্যাসের মোট দৈনিক চাহিদা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে আমদানি করা এলএনজি এবং বাংলাদেশের দৈনিক গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে দৈনিক উত্তোলন (উৎপাদন) করা হচ্ছে ২ হাজার ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এছাড়া মহেশখালী-আনোয়ারা, আনোয়ারা- ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ পাইপলাইনগুলোর মাধ্যমে দৈনিক আরও ৮৫০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
[৬] প্রসঙ্গত: দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ। এ সংকট মোকাবিলায় গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। মহেশখালীতে প্রত্যেকটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুটি ভাসমান স্টোরেজ ও রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) নির্মাণ করেছে এক্সিলারেট এনার্জি (২০১৮ সালে) ও সামিট (২০১৯ সালে)। এ দুটি স্থাপনা থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৮৫০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হতো। তবে এক্সিলারেট এনার্জির ইউনিটে বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে, এজন্য মহেশখালী থেকে দৈনিক মাত্র ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।
[৭] এছাড়া, সামিট মহেশখালীতে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার তৃতীয় এফএসআরইউ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। এক্সেলরেট এনার্জিও তাদের ইউনিটের বিদ্যমান সক্ষমতা দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
[৮] এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। এ প্রেক্ষিতে ২০২৬ সাল নাগাদ মহেশখালী থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
[৯] এছাড়া মাতারবাড়ীতে একটি ভূমি-ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনাসহ ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে এই সরবরাহ দৈনিক ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।