![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
অর্থনীতি কোনো ম্যাজিক গেইম নয়
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2024/01/Syed-Ishtiaque-Reza-400x225.jpg)
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
অর্থমন্ত্রীর হাতে কি কোনো ম্যাজিক আছে? সম্প্রীতি এই কথাটি উঠছে। কারণ অর্থনীতি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি সরকারের দিকে তাকাই তাহলে দেখি যে নির্বাচন শেষ করে সংসদের অধিবেশনও ঠিকঠাক মতো শুরু হয়ে গেছে। রাজপথে বিরোধী পক্ষের দিক থেকে সেদিন যে কালো পতাকা মিছিল হওয়ার চেষ্টা হয়েছে সেটি পুলিশ হতে দেয়নি। এর অর্থ হলো সরকার এখনো হার্ডলাইনে আছে এবং সরকার এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে এই মুহূর্তে প্রস্তুত নয়। কিন্তু সরকার কি পারবে অর্থনীতিকে শৃঙ্খলায় আনতে? প্রশ্নটি উচ্চারিত হওয়ার কারণ হলো রাজনীতি দিনশেষে অর্থনীতির শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। টানা চতুর্থবারের মতো চলমান আওয়ামী লীগ সরকারের নবগঠিত মন্ত্রীসভার জন্য বড় কাজের জায়গাটিই হলো অর্থনীতি। নির্বাচনের মাধ্যমে আপাতত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিরোধ এগুলোর একটি সমাধান হলেও সংকটাপন্ন অর্থনীতি নিয়ে এখনও ভাবনা আছে। অর্থনীতির চেহারার এখনো বদল ঘটানো সম্ভব হয়নি। আমরা জানি দেশের অর্থনীতি নানা প্রকার চক্রাকার সমস্যার মধ্যে আবদ্ধিত হচ্ছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। গত ১৫ বছর বা তার বেশি সময়ে অর্থনীতি বা এর কাঠামোটির দিকে যদি আমরা নজর দিই তাহলে দেখবো অর্থনীতি নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। মানুষের ভেতরে বড় উন্নয়নের স্পৃহা তৈরি হয়েছে সরকারের বড় বড় বিনিয়োগের করণে।
চলাচল সহজ করলেও বা বিদ্যুৎ উৎপাদন বড় আকারে হলেও উন্নয়ন প্রকল্প মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সেভাবে আনতে পারেনি। এক্ষেত্রে করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ একটি বড় প্রভাব রেখেছে। অর্থনীতির বর্তমান সঙ্গীন অবস্থা যে শুধু এসবের জন্য দায়ী তা নয়। যদি বলা হয় নতুন সরকারের প্রধান কাজ কী? একবাক্যে উত্তর আসবে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে আনা। এ কথাটি সরকার নিজেও বলছে। সাধারণ মানুষ যখন দিশেহারা, সরকার যখন কার্যকর অনেককিছু করার চেষ্টা করছে, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি আসন্ন রমজান মাস। নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে রমজান মাসকে, দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীও ঠিক একই কথা বলেছেন। কিন্তু তারা যখন এরকম কথা বলছেন তখন আমরা দেখলাম পেঁয়াজের দাম শতক ছাড়িয়েছে। অনেকদিন থেকেই টাকার দাম পড়ছে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ২০২০ সাল থেকে বলতে গেলে কোনো পরিবর্তন নেই। কিছুদিন আগেও একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিয়ে বাজারে গেলে যতোটা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা যেতো এখন তা থেকে অনেক কম পরিমাণে কিনতে পাওয়া যায়। মানুষ কম খাচ্ছে কারণ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে।
সবাই কম খাচ্ছে বলা যাবে না, কারো কারো ক্ষেত্রে এটি সত্য। সরকারের সব পরিসংখ্যানই বলছে যে খুচরা বাজারে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার ঠেলে উপরের দিকে যাচ্ছে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির অবস্থা ভয়াবহ। দাম বাড়ার কারণে গরিব মানুষের উপর পরেছে অনেক বড় বোঝার চাপ। এর কারণ হলো শহরের তুলনায় গ্রামে অনেক বেশি গরিব মানুষ বাস করে। স্বচ্ছলদের তুলনায় গরিব মানুষ খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করে এবং পরোক্ষ করের কারণে ধনী-গরিব সকলকেই সমান হারে কর দিতে হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে কেন এ কথাটি অনেকদিন থেকেই বলা হচ্ছে। কারণ অবশ্যই যে মুনাফাখোরদের কথা বলা হচ্ছে, ব্যাংক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আছে এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও রয়েছে। কিন্তু বড় কারণ হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। ২০২২ সালে যে একসঙ্গে প্রায় ৫১ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছিলো, তারপর আর কমানো হলো না। অথচ বলা হয়েছিলো বিশ্ব বাজারে দাম কমলে আমাদের দেশেও কমবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পণ্যের উৎপাদন খরচ, পরিবহন খরচ বাড়ে, সঙ্গে সঙ্গে বাকি সব জিনিসের দাম বাড়ে। সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ এই জ্বালানি পণ্যের দাম।
এটি কমাতে পারলে নিশ্চয়ই অনেকখানি পণ্যের মূল্য কমে আসতো। অনেক সময় সিন্ডিকেটের কথা বললেও জ্বালানি তেলের প্রসঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে কেউ কথা বলছে না। খাদ্যশষ্যের যোগানে টান না পরলেও দাম কেন কমে না এর একটি বড় কারণ জ্বালানি তেলের দাম। বাজার শুধু বাজারের কারণেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা কিন্তু নয়, হয়েছে শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেও। ব্যাংক এবং আর্থিক খাতে বহুদিন ধরে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটছে, নীতিবিরুদ্ধ কাজ চলছে ইত্যাদিকে মানুষ লুটপাট বলেই অভিযোগ করছে। দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। প্রায় সব ব্যাংকেই তারল্য সংকট। ধার দিয়ে বা টাকা ছাপিয়ে অনেক ব্যাংককেই কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণের হার এমন জায়গায় গেছে যা আগে কখনো হয়নি। আর্থিক খাতকে সুপথে আনার বড় কোনো কাজ এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখাতে পারেনি। এর কারণ হলো দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা। সঞ্চয় আহোরণের পুরো কাজটি ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর ছেড়ে দিয়ে সরকারি সঞ্চয় অধিদপ্তরকেও যদি বিলুপ্ত করা যায় তাহলে তার একটি ইতিবাচত প্রভাব আসবে। একজন একক ব্যক্তির কথা শোনা যায় যার হাতে পুরো ব্যাংকিং খাতটি জিম্মি রয়েছে। তার ব্যাপারে কী করা হবে তা আমরা জানি না। দ্রব্যমূল্য কমানোর আরেকটি উপায় হলো ব্যাপক আমদানি করে বাজারে ভারসাম্য আনা। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না ডলার সংকটের কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ক্ষয়িষ্ণু দশা আরো ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। সরকারের আসল সমস্যা হলো আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং সেটি ভারসাম্যে আনার কোনো চেষ্টাও দৃশ্যমান নয়। সরকারের রাজস্ব আদায়ে কোনো গতি নেই। অর্থবছরে ৬ মাসের হিসাবে এরই মধ্যে ঘাটতি হয়ে গেছে ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি একটি বড় চাপের মধ্যে আছে। এই মুহূর্তে সংকট মোচনের কোনো ম্যাজিক কি অর্থমন্ত্রীর কাছে আছে? সম্ভবত নেই। নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রধান কাজ হবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরানো। আর্থিক খাত সংস্কার এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ধরে কাজ করতে হবে অর্থনীতিকে।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার ফেসবুক পেইজের ভিডিও কনটেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছে সঞ্জয় চন্দ্র দাস
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)