পতন থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে শেয়ারবাজার ডিএসইর লেনদেন ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার পতন থেকে বেরিয়ে টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। একই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে লেনদেনের গতি। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই সূচকের বড় উত্থান হলো। আর এই নিয়ে টানা ৬ কার্যদিবস ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। পাশাপাশি লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর শেয়ারবাজারে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো। অর্থাৎ ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ডিএসইতে।
[২] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার পর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল তা কেটে গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, বাজারে এখন ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী সক্রিয় হয়েছেন। যেসব বিনিয়োগকারী এতদিন সাইডলাইনে ছিলেন, তারাও বাজারে ফিরছেন। যে কারণে বাজারে শেয়ারদর বাড়ার সাথে সাথে লেনদেনেও বড় গতি দেখা যাচ্ছে। তারা আশা করছেন, সামনে বাজার আরও ভালো হবে।
[৩] এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রথম দফায় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার প্রথম কর্মদিবস রোববার প্রধান শেযারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উদ্বোধনী সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার প্রথম সপ্তাহে ডিএসইর সূচকের বড় পতন হয়। সপ্তাহশেষে সূচক ১৮০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। সূচকের এমন পতনে মার্জিন ঋণ বিনিয়োগকারীদের বারোটা বেড়ে যায়। ব্রোকারেজ হাউজ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সুযোগ পেয়ে তাদের শেয়ার ফোর্স সেল করে দেয়। এরফলে অনেক মার্জিন বিনিয়োগকারী বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
[৪] ফোর্স সেলের চাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসও বাজারে বড় পতন অব্যাহত থাকে। তারপর ফোর্স সেল যখন থেমে যায়, বাজার তখন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় টার্ন নেয়। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার থেকে বাজার বড় আকারে বুলিশ ট্রেন্ডে রূপ নেয়। সর্বশেষ তিন কর্মদিবসেই ডিএসইর সূচক বেড়েছে ১৬৯ পয়েন্ট।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন ডিএসইর সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। গতকাল ডিএসইর সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩২২ পয়েন্টে। অর্থাৎ আর মাত্র ১৪ পয়েন্ট বাড়লেই ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে শেয়ারবাজার।
[৫] গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের সময় ১০ মিনিট গড়ানোর আগেই বেশিকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। এতে লেনদেনের ২৭ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ পয়েন্ট কমে যায়।
অবশ্য অল্প সময়ের ব্যবধানেই আবার ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। দাম কমার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৩টির। আর ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬২টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড (একদিনে যতটা বাড়া সম্ভত ততোটাই বেড়েছে) হয়েছে ২৪ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
[৬] অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩২২ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৫৪ কোটি ৭৮ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৪০ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর আগে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৮১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। এর পর একদিনে আর এতো লেনদেন হয়নি।
এই লেনদেন বাড়াতে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি থাই অ্যালুমেনিয়ামের ৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।
[৭] এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, আইটিসি, আইএফআইসি ব্যাংক, এনভয় টেক্সটাইল, ফরচুন সুজ এবং অলিম্পিক এক্সসরিজ।
[৮] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭২টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।