প্রশাসনিক দক্ষতার ওপর স্মার্ট প্রযুক্তির ইতিাবচক প্রভাব
মো. আল-আমিন : স্মার্ট বাংলাদেশ ডিজিটালের একটি শাখা। কারণ বাংলাদেশ একটি জাতীয় আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে; ভিশন ২০৪১ অর্জনের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ নিবেদিত, যাকে কথোপকথনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলা হয়। আমরা স্বাধীনতা লাভের পঞ্চাশ বছর পর ২০২১ সালের মধ্যে মর্যাদা, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার অনেক ডিজিটাল প্রযুক্তি-সম্পর্কিত উদ্যোগ শুরু করেছে ও বাস্তবায়ন করেছে। জাতীয় আইসিটি নীতি ২০০৯-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিলো ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত জাতি হিসাবে স্থান দেওয়া।
সরকারের নীতি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ দেশের অগ্রগতির জন্য মৌলিক। বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক হলো দেশের স্মার্ট ভিশন ২০৪১। বিভিন্ন বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন এখনও কাজ করছে। আমরা বেশ কয়েকটি ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প শেষ করেছি ও এখন আরও অনেকগুলোতে কাজ করছি। ৪.৩ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহকের সঙ্গে, দেশ এখন বিভিন্ন ডোমেনে ডিজিটাইজেশনের সুবিধা ভোগ করছে। আরও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে যেখানেই সম্ভব, শেষ লক্ষ্য হলো আরও বেশি করে পরিষেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ডেটা তৈরি, সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম ডিভাইস, সিস্টেম ও যন্ত্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। মাইক্রোপ্রসেসর, যা অনেক অপারেশন চালানোর জন্য প্রোগ্রামেবল, ডিজিটাল প্রযুক্তির যুক্তি ও ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বজায় রাখে। প্রশাসনিক দক্ষতা হলো একটি ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার খরচ, কর্মী, উপকরণ, সময় ও অন্যান্য সংস্থান কমিয়ে কাক্সিক্ষত ফলাফল তৈরি করার ক্ষমতা। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তথ্য অ্যাক্সেস, ই-গভর্ন্যান্স ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেক্টর এই ছাতার অনেকগুলো প্রকল্প ও প্রোগ্রামের লক্ষ্য। বাংলাদেশ সরকার আইসিটি কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জাতীয় আইসিটি নীতি তৈরি করেছে। এটি আইসিটি উদ্যোক্তা, অবকাঠামো, এইচআর ও ই-গভর্নেন্সকে উৎসাহিত করে। ২০০৭ অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এ২আই) প্রোগ্রাম ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্সেসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও নাগরিক-কেন্দ্রিকতা উন্নত করতে। এটি জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি ছাড়াও অনেক ইলেকট্রনিক শাসন ও ডিজিটাল পরিষেবা প্রচেষ্টাকে সক্ষম করেছে। সরকার আঞ্চলিক স্তরে ডিজিটাল পরিষেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে যাতে বাসিন্দাদের বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবার অ্যাক্সেস দেওয়া হয়, যেমন জন্ম নিবন্ধন করা, সম্পত্তির রেকর্ড দেখা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা ও অফিসিয়াল ফর্ম জমা দেওয়া।
বাংলাদেশ.গভ.বিডি-এ অনলাইনে অ্যাক্সেসযোগ্য, বাংলাদেশ জাতীয় পোর্টাল অফিসিয়াল ডকুমেন্ট, এজেন্সি ও তথ্য খোঁজার জন্য একটি ওয়ান-স্টপ শপ। নাগরিকদের জন্য ওয়ান-স্টপ শপ হিসেবে, এটি সরকারি প্রকাশনা, ফর্ম ও অন্যান্য সংস্থানগুলোর প্রশাসন পরিচালনা করে। সরকার ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য চাপ দিচ্ছে আর্থিক পরিষেবাগুলোতে অ্যাক্সেস বিস্তৃত করার ও শারীরিক অর্থ লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করার একটি প্রচেষ্টা। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) বিকাশ ও নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাগুলো দেশব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি বাংলাদেশের সরকারের প্রশাসনিক দক্ষতা ও উন্মুক্ততাকে উন্নত করেছে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অগ্রসর করেছে যার মধ্যে রয়েছে: ডিজিটাল প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটাইজড প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, কাগজপত্র ও ত্রুটিগুলো হ্রাস করে। প্রক্রিয়াগুলো সরলীকরণের ফলে লাইসেন্সিং, সংগ্রহ ও নাগরিক পরিষেবা সহ সরকারি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটালাইজেশন সরকারি তথ্যকে জনসাধারণের কাছে আরও সহজলভ্য করেছে, উন্মুক্ততা ও জবাবদিহিতা বাড়িয়েছে। অনলাইন পোর্টাল ও প্ল্যাটফর্মগুলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে সরকারি পরিষেবা, বাজেট, ব্যয় ও প্রকল্পগুলোকে ব্যাপকভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য করতে সক্ষম করে। সামাজিক মিডিয়া ও ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি সরকারি প্রক্রিয়াগুলোতে জনসাধারণের অংশগ্রহণকে সহজ করে তোলে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যক্তিদের মতামত প্রদান করতে, সমস্যাগুলো রিপোর্ট করতে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে দেয়, গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক করে তোলে। ইলেকট্রনিক সরকারি পরিষেবা : ইলেকট্রনিক সরকারি পরিষেবাগুলোকে আরও অ্যাক্সেসযোগ্য ও সুবিধাজনক করে তোলে। ই-ট্যাক্স ফাইলিং, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ও ডিজিটাল জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন সরকারি অফিসে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ও সরকারি কর্মচারীদের সময় ও সম্পদ সাশ্রয় হয়েছে। ডেটার সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ : ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশাল ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ডেটা অ্যানালিটিক্স টেকনোলজি সরকারগুলোকে বিভিন্ন শাসনের কারণ বুঝতে সাহায্য করে, যা উন্নত নীতির দিকে পরিচালিত করে।
সক্ষমতা বিকাশ : ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য সরকারি কর্মচারীদের তাদের দক্ষতা উন্নত করতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তি কাজে লাগানোর জন্য সরকারি কর্মীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন। ইউডিসি কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ইমেইলের মাধ্যমে ই-পরিষেবা প্রদান করে। প্রতিদিন শত শত গ্রামীণ মানুষের জন্য ইউডিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ইউডিসি দুইজন ই-সেবা-প্রশিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়োগ করে। বর্তমান ডিজিটাল পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে : অনলাইন টেন্ডারিং, একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, বিদেশি কর্মসংস্থান নিবন্ধন, অফিসিয়াল ফর্ম সংগ্রহ ও অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলিং। অনলাইন ব্যাংকিং দেশব্যাপী আর্থিক লেনদেনকে ত্বরান্বিত করেছে। ই-পাসপোর্ট, এসএমএস থানায় অভিযোগ প্রতিবেদন, অনলাইন ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট ও প্রবাসীদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ। ডিজিটাল নোটি (ডি-নোথি) সফ্টওয়্যারটি সরকারি কর্মীদের নাগরিক অ্যাপ্লিকেশন ও অফিসের তথ্য অ্যাক্সেস করার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে ও পদক্ষেপ নিতে দেয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ কাগজবিহীন কাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
লেখক : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের গবেষক। সূত্র : ডেইলি অবজার্ভার। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ