সরকার কি রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারবে
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনা শুরু করেছেন এবং দ্বাদশ সংসদের অধিবেশনও চলছে। সে জায়গা থেকে দেখলে অনেক ধরনের বাধা-বিপত্তি থাকার পরেও নির্বাচনি বৈতরণী ভালোভাবেই পার করেছেন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল থেকে সেভাবে কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলনের মাঠে নতুন করে কে কী করতে পারবে, সেটি আসলে দেখার বিষয়। কিন্তু সরকার বলছে যে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমরা দেখি যে প্রায় সব জিনিসের দাম বাড়তি। সবকিছু আসলে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, অথবা কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হলো দীর্ঘদিন থেকে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। সরকার হয়তো নানা রকম চেষ্টা করছে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনতে। কেথাও কোথাও অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর। সবকিছুর আসলে একটিই লক্ষ্য যে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনা এবং এটি এ কারণেই বেশি জরুরি যে সামনে রমজান মাস।
রমজান মাসে আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের উন্মাদনা চলে যে কত বেশি দামে জিনিস মানুষের কাছে বিক্রি করা যায়। সবকিছু বিবেচনায় অনেকগুলো কাজ হয়তো সরকারকে করতে হতে পারে। সেটি সরকারের একটি দায়িত্বের মধ্যে পরে এবং সেটি কতটা সফল বা ব্যর্থ হবে আমরা হয়তো দিনশেষে তা দেখতে পাবো। সরকারের চেষ্টার বাইরে ভোক্তারা কী নিজেরা কিছু করতে পারে? মানুষ বেশি কিনছে বা মানুষকে কম কিনতে বলা এ ধরনের কথাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে ভিক্টিম ব্লেম গেম।
রমজান মাসে একটি কাণ্ড ঘটে বাংলাদেশে। আমরা দেখি যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনার একধরনের বাতিক আছে মানুষের মধ্যে। আমরা কেন এরকম করি বা নাগরিক সমাজের ভেতরে কেন এটি এসেছে সে ব্যাখ্যায় আজ যাবো না। আমি নিজে দেখেছি ইফতার আইটেম কেনার সময় বেইলী রোড, গুলশান বা বড় ইফতার বাজারগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। গাড়ি ভরে বাজার করতে দেখেছি কারওয়ান বাজার থেকে। এগুলো কতটা খাওয়া হয় বা কতটা নষ্ট হয় সেগুলো কখনো আমরা চিন্তা করি না।
বিপুল পরিমাণ ইফতার প্রতি রমজানে অপচয় ঘটে। আমরা যেটুকু খেতে পারি তার চাইতে বেশি আয়োজন করি। বিশেষ করে নগর অঞ্চলে এটি বেশি হয়। ইফতারের ব্যপারে একটু চিন্তা করা দরকার যে প্রতিটি বেলায় আসলেই কি আমাদের নানা পদের ইফতার আইটেম বানাতে হবে কিনা। নিজেরাও আসলে কন্ট্রিবিউট করা যায় অর্থনীতিতে যদি ভোক্তারা সচেতন হয়। আমি কিন্তু সেটি বলছি না যে মানুষ রমজান মাসে খাবে না। পেঁয়াজের দিকে যদি তাকাই দেখতে পাই যে পেঁয়াজের দাম বাড়তি এবং রমজান আসতে আসতে হয়তো তা আরো বাড়বে।
অনেকে বলে পেঁয়াজ বা বেগুনি না খেলে কী হয়। আমি সেটি বলছি না। কিন্তু আমার যদি দরকার হয় ৫ কেজি পেঁয়াজ এর চেয়ে বেশি না কিনে বরং কমিয়ে ৩ কেজিতে আনা যায় কিনা সেটি একটু চিন্তা করা যায় কী? তেল কী একটু কম খরচ করা যায়? হয়তো এটিতে তেমন কোন পরিবর্তন আসবে না কিন্তু নিজস্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এরকম করে প্রতিটি আইটেমের বেলায় বোধহয় চিন্তা করা যায়। অনেক বেশি ভালো খেতে হবে, অনেক বেশি বিলাসিতা করতে হবে রমজান মাসে এরকম কিছুইতো নেই। আসলে রমজানের পুরো মাসইতো সংযমের মাস।
প্রচুর পরিমাণে ইফতার পার্টি হয় এই রমজান মাসে। আসলে এই ইফতার পার্টিগুলোতে যতটুকু খাওয়া হয় তার চেয়ে অনেক বেশি অপচয় করা হয়, যা আমি নিজে দেখেছি। এগুলো বাজারে অযাচিত চাহিদা তৈরি করে। ইফতার পার্টিগুলো কেন এভাবে হুলস্থুল করে করা হয়? এটি যে জিনিসপত্রে ক্ষেত্রে একটি অসম্ভব রকমের চাহিদা তৈরি করছে সেটি আমরা হয়তো বুঝতে পারি না। আমরা কাউকে নিষেধ করতে পারি না কিন্তু চিন্তাতো করতে পারি। প্রতিটি স্থরে আমরা নিজেরা কিছুটা হলেও নিজস্ব বা পারিবারিক অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারি।
আমরা জানি এই মাসে নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব কঠিন সরকারের পক্ষে। সরকার চেষ্টা করবে। নানা ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকবে। কিন্তু নিজের একটু ভাবতে হবে যে আমি আমার চাহিদাটি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারি কিনা। আমরা অবশ্যই ভোগ করবো, কিন্তু ভোগ করাটা কতটুকু যৌক্তিক হবে সেটি চিন্তা করা দরকার। অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য অসম্ভব রকমের বেড়েছে, এটি স্বীকার করে নিয়েও আমরা চিন্তা করতে পারি যে নিজে কীভাবে সে অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে নিজেকে রেহাই দিতে পারবো।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার ফেসবুক পেজের ভিডিও কনটেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন সঞ্জয় চন্দ্র দাস