স্পট মার্কেটে এলএনজি কার্গোর দাম ক্রমান্বয়ে কমছে সিঙ্গাপুর থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির প্রস্তাব ওঠছে ক্রয় কমিটিতে, ব্যয় হবে ৪২৫ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা
সোহেল রহমান : [১] বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে আগামী মার্চের জন্য স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এটি চলতি পঞ্জিকা বছরের জন্য পঞ্চম কার্গো আমদানির প্রস্তাব। প্রসঙ্গত: চলতি পঞ্জিকা বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) স্পট মার্কেট থেকে মোট ১৩ কার্গো এলএনজি আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর বিপরীতে শুধু আগামী মার্চের জন্য চার কার্গো এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হবে বলে জানা যায়।
[২] জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কার্গোটিতে এলএনজির পরিমাণ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘গানভর সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড’ এই কার্গো সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ৯ দশমিক ৮৪৭ ডলার হিসাবে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ মোট ব্যয় হবে ৪২৫ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। [৩] সূত্র জানায়, এলএনজি কার্গো আমদানির লক্ষ্যে গত ৩০ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার সঙ্গে ‘মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ’ (এমএসপিএ) চুক্তি সইকৃত ২২টি প্রতিষ্ঠান বরাবর ই-মেইলে দরপত্র আহবান করা হয়। এর বিপরীতে মোট চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয় এবং এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘গানভর সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড’-কে মনোনীত করা হয়েছে। দরপত্রে অংশ নেয়া অপর তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেÑ সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড’-এর প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৯ দশমিক ৮৮ ডলার; সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড’-এর প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ১৭ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক্সিলারেট এনার্জি এলপি’-এর প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ২২৮৯ ডলার।
[৪] ইতোপূর্বে ক্রয় কমিটির সভায় অনুমোদিত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির দর পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্পট মার্কেটে এলএনজি’র দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। গত ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি এলপি থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪২ কোটি ২৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এরপর ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড’ থেকে আমদানিতব্য প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি’র দর ধরা হয়েছিল ১০ দশমিক ৮৮ ডলার। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড’ থেকে আমদানিতব্য প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি’র দর ধরা হয় ৯ দশমিক ৯৩ ডলার। এর বিপরীতে বর্তমান প্রস্তাবে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি’র দর হচ্ছে ৯ দশমিক ৮৪৭ ডলার।
[৫] জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি’র মূল্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুনে বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে।
[৬] সূত্র জানায়, তবে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানির বর্ধিত ব্যয় নির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জারিকৃত এসআরও অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়, যা গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে।