গুলশানে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন বাড়ি দখল সালাম মুর্শেদীকে বাদ দিয়ে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আমিনুল ইসলাম : [১] পরিত্যক্ত সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা রেকর্ডপত্র তৈরি করে হস্তান্তর, অনুমতি ও নামজারি অনুমোদন করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি নম্বর বাড়িটির দখলে আছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট সালাম মূর্শেদী। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ থাকলেও তাকে বাদ দিয়েই এ মামলা দায়ের হয়েছে।
[২] মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটির উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত বাদী হয়ে সজেকা ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। [৩] মামলার আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম ও প্রকৌশলী এম আজিজুল হক, সাবেক সদস্য (এস্টেট) লে. কর্নেল (অব.) এম নুরুল হক, সাবেক পরিচালক আবদুর রহমান ভূঁঞা, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট) মো. আজহারুল ইসলাম, রাজউকের সহকারী পরিচালক (নিরীক্ষা ও বাজেট) শাহ মো. সদরুল আলম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. হাবিব উল্লাহ। অন্যদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব আবদুস সোবহান, সাবেক শাখা সহকারী মো. মাহবুবুল হক এবং কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা মীর মোহাম্মদ হাসান ও তার ভাই মীর মো. নুরুল আফছারকে আসামি করা হয়েছে। [৪] নথি জালিয়াতির মাধ্যমে সালাম মূর্শেদীকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয় এমন অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ১১ আগস্ট দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দুদক আবেদন আমলে না নেওয়ায় একই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি।
[৫] রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মূর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন। রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি এবং চলতি বছরের ৪ জুলাই রাজউক চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মূর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন, রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
[৬] ২০২২ সালের ১ নভেম্বর এ সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে ১০ দিনের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান এবং আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে হলফনামা আকারে নথি দাখিল করতে বলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগে আব্দুস সালাম মূর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, দুদক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে রুলের জবাব দিতে বলেন হাইকোর্ট। এরপর দুদক অভিযোগটি আমলে নেয়। পরবর্তীতে উপ-পরিচালক ইয়াছির আরাফাত ও জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে অনুসন্ধানী টিম গঠিত হয়।