৭ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারও সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই বাড়লো সূচক। আর টানা ৭ কার্যদিবস ধরে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। [২] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার প্রথম সপ্তাহে ডিএসইর সূচকের পতন হয় ১৮০ পয়েন্ট। পরের সপ্তাহে কমে যায় আরও ৫৯ পয়েন্ট। দুই সপ্তাহে ডিএসইর সূচকের পতন হয় ২৩৯ পয়েন্ট। সূচকের এমন পতনে মার্জিন ঋণ বিনিয়োগকারীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। [৩] ব্রোকারেজ হাউজ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর তাদের শেয়ার ফোর্স সেলের আওতায় নিয়ে নেয়। ফলে অনেক মার্জিন বিনিয়োগকারী বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফোর্স সেলের চাপ বন্ধ হওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস থেকে অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। বাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় টার্ন নিলে বাজারে ফিরতে শুরু করে সকল শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। [৪] এরফলে বাজারে বড় উত্থান দেখা যায়। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন ডিএসইর সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। গতকাল ডিএসইর সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পূর্বের অবস্থাকে টপকিয়ে এগিয়ে গেল দেশের শেয়ারবাজার।
[৫] এদিকে গত কয়েক কার্যদিবসে টানা দাম বাড়া বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম মঙ্গলবার কিছুটা কমেছে। এতে দাম বাড়ার থেকে কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এরপর বেড়েছে মূল্যসূচক। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণের। এরপরও সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েছে। পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমলেও এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। [৬] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়ে যায় ৮ পয়েন্ট। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়।
[৭] লেনদেনের শেষদিকে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। ফলে ছোট হয়ে আসে দাম বাড়ার তালিকা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৪টির। আর ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম কমার তালিকা বড় হলেও দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৮টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড (একদিনে যতটা বাড়ে সম্ভবত ততটাই বেড়েছে) হয়েছে ১১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
[৮] এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে এক হাজার ৬৫১ কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৬৫৪ কোটি ৭৮ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। ৫৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।
[৯] এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ওরিয়ন ইনফিউশ, ফরচুন সুজ, এনভয় টেক্সটাইল, দেশবন্ধু পলিমার এবং আইএফআইসি ব্যাংক।
[১০] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৬টির। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩২টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা।