বার্মায় জেনারেলরা আর কতদিন টিকিয়ে রাখবে রাজধানী
ওয়াসী মাহিন
বার্মার এই ম্যাপটা দেখে হাসি পায় আবার হতাশ লাগে। হতাশ লাগার কারণ হল যুগে যুগে প্রমাণিত সত্য যে মানুষ অতিত থেকে খুব কম শিক্ষা নেয়। বিশেষ করে ক্ষমতা ও দাম্ভিকতা বৃদ্ধির সাথে অতিত থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রবণতা বিপরীতমুখী। অর্থাৎ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে ধীরে ধীরে উপেক্ষা করার প্রবণতা বাড়ে। পুরো বার্মার ম্যাপে সবুজ অংশ জান্তার নিয়ন্ত্রনে। অন্য রঙের অংশগুলি বার্মার বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রনে।
হাসি পাবার কারণ হল, জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে আরো সুনিশ্চিত করতে রাজধানী সরিয়ে নেইপেদহতে নিয়ে যায়। তাদের যুক্তি ছিল এটি হল দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত হবার কারণে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার সুরক্ষা দিবে। আরো অনেক কারণের মাঝে জান্তা জনমানবহীন শূন্য স্থানে শুরু করে নতুন রাজধানীর কাজ। নির্মাণ হয় বিশ্বের অন্যতম ভূতুড়ে শহর যেই শহরে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার নিদর্শনে ক্যান্টনমেন্ট স্টাইলে সুসজ্জিত করা হয় পুরো নেইপেদহকে। ২০ লেন বিশিষ্ট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ হয় কিন্তু সড়কটি যানবিহীন শূন্য পড়ে থাকে। ফুল সজ্জিত চকচকে নকশার চত্ত্বর, বিশাল বিশাল প্যাগোডা, স্থাপত্যে নিপুন সব সরকারি ভবন। সমস্যা হল, নতুন রাজধানী সামরিক চিন্তার জেনারেলদের কাছে নির্ভেজাল বিলাসি শহর হলেও এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থান নয়। কোন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নয়। কোন ব্যবসায়ীক কেন্দ্রও নয়। যে কেউ নেইপেদর সৌন্দর্য দেখে বলবে “বাহ বার্মা কত্ত সুন্দর গোছালো”। কিন্তু দেশের অধিকাংশ রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ। দুর্গম। রেল এখনো প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা। আশেপাশের প্রধান শহর বলতে মান্দালয় আর সিত্তও। সিত্তও তাও বন্দরের জন্য স্ট্রাটেজিক্যালি গুরুত্বপূর্ণ। মান্দালয় অন্য দেশের জন্য ট্রানজিট রুট হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভুতুড়ে রাজধানী? অর্থ সম্পদ ঢেলে জেনারেলদের জন্য প্রাসাদ না বানিয়ে যদি বার্মা তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করত তাহলে দুর্গম রাজ্যগুলি স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে পারত। বিজনেস ফ্লারিশ করলে মানুষের আয় বাড়ত। বেকার না থাকলে মানুষের বিদ্রোহী হবার সম্ভাবনাও কমে আসত।
অতিতকাল থেকেই বার্মার রাজধানী ছিল রেঙ্গুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও স্ট্রাটেজিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল রেঙ্গুন। আছে বন্দর। রেঙ্গুনের নাম পরিবর্তন করে ইয়াঙ্গুন করল, বার্মার নাম হল মিয়ানমার কিন্তু রাজধানী আর ইয়াঙ্গুন থাকল না। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই ইয়াঙ্গুন জনবহুল শহল ও উন্নত শহর। বন্দর কেন্দ্রিক ইয়াঙ্গুনের বিকাশ এখনো বার্মার যেকোন রাজ্যের থেকে এটাকে যোজন এগিয়ে রেখেছে। চলমান সঙ্কটেও ইয়াঙ্গুন এখনো যথেষ্ট নিরাপদ। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে নতুন রাজধানী নেইপেদর খুব কাছে পৌছে গেছে বিদ্রোহীরা। একটা দেশের রাজধানী নির্বাচনে শুধু আয়েশের কথা ভাবলে হয়না। অনেক গুলি প্যারামিটার নিয়ে ভাবতে হয়। হয়ত জান্তা জেনারেলদের সেই পুরাতন ইয়াঙ্গুনেই আশ্রয় নিতে হবে। রাজধানী কতদিন তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। লেখক: সাবেক ব্যাংকার। ফেসবুক থেকে।