নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সম্ভব : ড. মসিউর রহমান
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেক রকম বাণিজ্যিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা কিছুটা পেছানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ। সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব। [২] বৃহস্পতিবার রাজধানীর জতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন: বাংলাদেশের ভাগ্যে কী থাকছে?’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
[৩] বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টারগ্রাশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করেছে এফসিডিও। [৪] অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মসিউর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ত্রিমাত্রিক দিক থেকে নজর দিতে হবে এটা সত্য। তবে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেখান থেকে পেছনে হটার সুযোগ নেই। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে জায়গা করে নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য সময় নিলে পিছিয়ে পড়তে হবে। বিশ্ব বাণিজ্যে সামনে এগিয়ে যেতে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। চেষ্টা এমন থাকতে হবে যাতে সঠিকভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারি।
[৫] অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব শরিফা খান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে তিন বছর বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। ২০২৯ সাল থেকে আর এ সুবিধা থাকবে না। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে তখন প্রধান তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য রফতানি পণ্যে জিএসপি প্লাসের মতো বাণিজ্য সুবিধা নেয়া যায়। তাছাড়া ট্রিপস সুবিধা থাকবে না, এর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। আসন্ন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আলোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা আদায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নশীল দেশের সুবিধার দিকে নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে।
[৬] সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে তিনটি স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে হবে। এগুলো হলো ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির কাতারের সুবিধা পাওয়া, এর পর আরো তিন বছর এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা পাওয়া এবং ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রস্তুতি নেয়া। এখন মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য কী কী সুবিধা আসছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০২৬ সালের পর ট্রিপস সুবিধা থাকবে না। ফলে ২০ শতাংশ ওষুধের প্যাটেন্ট দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এতে দাম বেড়ে যাবে।’
[৭] প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান বলেন, ‘ফিশারিজ সাবসিডির ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ইলিশ বেশির ভাগ নদীতে উৎপাদন হচ্ছে, এটা দেখানো উচিত। এতে সমুদ্রে মৎস্য খাতের ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকবে না। মৎস্য খাতে দশমিক ৮ শতাংশ ভর্তুকি আছে। ইলিশ যুক্ত হলে ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।’
[৯] প্রসঙ্গত, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ২৬-২৯ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফায় স্থগিত থাকা দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ২০২২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সূত্র : বণিকবার্তা