দীর্ঘদিন পর শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের দাপট ডিএসইতে ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচক
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার গত সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সূচকের ঊত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দীর্ঘদিন পর দেশের শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো। [২] গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
[৩] গত কয়েক কার্যদিবসের মতো গতকাল শেয়ারবাজার ছিল বেশ ইতিবাচক। ডিএসইতে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। এদিকে, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর প্রথম ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। সেই হিসাবে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর ডিএসইর সূচক বেড়েছে ১১১ পয়েন্ট। যদিও ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর এখনো অনেক শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের অনেক নিচে লেনদেন হচ্ছে। তারা বলছেন, ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানিগুলো শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে না ফিরলেও বাজারের সূচকের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও বাড়ছে।
[৪] এবিষয়ে বাজার বিশ্লেকরা বলেন, শেয়ারবাজারে গতি ফেরায় ব্রোকারহাউজগুলোতে বিনিয়োগকারী সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতোদিন যারা সাইডলাইনে ছিলেন, সেসব বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ফিরতে দেখা গেছে। বাজার বিশ্লেকরা একে বাজারের জন্য ইতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করছেন।
[৫] গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে অব্যাহত থাকে।
তবে লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। অবশ্য এর মধ্যেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখায় ব্যাংক। তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৪টি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আর একটির দাম আগের স্থানেই রয়েছে। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক এমন দাপট দেখানোর ফলে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে।
[৬] দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৬টির। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৯টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড (একদিনে যতটা বাড়া সম্ভত ততটাই বেড়েছে) হয়েছে ১৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের পর এখন সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে ছিল।
[৭] অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৫১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) আইএফআইসি ব্যাংক,ইন্ট্র্যাকোরিফুয়েলিং, আইটিসি, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, বিএসসি,মালেক স্পিনিং ও সেন্ট্রা লফার্মা।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:এসবিএসি ব্যাংক, এসআইবিএল, এইচ আর টেক্সটাইল, আরামিট সিমেন্ট, প্রাইম ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্ট মেন্ট, ইন্ট্র্যাকোরিফুয়েলিং, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিংস, সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও জিএসপি ফাইন্যান্স।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:-শ্যামপুরসুগারমিল,ইনটেক লিঃ,বীচহ্যাচারী, রেনেটালিঃ, সেন্ট্রাল ফার্মা, অলিম্পিক এক্সেসোরিজ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিডমিল, রেনউইক যজ্ঞেশ^র ও আরএসআরএম স্টীল।
[৮] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩০৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।