জ্বালানি আমদানির জন্য ২১০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইটিএফসি
সোহেল রহমান : [১] চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২১০ কোটি ডলার ঋণ দেবে জেদ্দাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি)। দুই পৃথক চুক্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও পেট্রোবাংলা এ ঋণ নেবে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানি আমদানিতে বিপিসি ব্যবহার করবে ১৬০ কোটি ডলার। অবশিষ্ট ৫০ কোটি ডলার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ব্যয় করবে পেট্রোবাংলা।
[২] জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ ঋণ পরিশোধের সময়কাল ধরা হয়েছে এক বছর। ছয় মাসের ব্যবধানে দুই কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটসহ (এসওএফআর) ২ শতাংশ হারে এ ঋণের সুদহার গণনা করা হবে। এই ২ শতাংশের মধ্যে ১.৮০ শতাংশ সুদহার এবং শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ প্রশাসনিক চার্জ।
[৩] অন্যদিকে ঋণ পাওয়ার আগেই প্রশাসনিক চার্জ পরিশোধ করতে হবে। ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, প্রত্যাশিত ওঠানামাসহ এসওএফআর ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মাসগুলোতে এসওএফআর বাড়বে।
[৪] জানা যায়, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জ্বালানি বিভাগ অনাপত্তির জন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নন-কনসেশনাল লোন কমিটির কাছে চুক্তিটি পাঠাবে। ওই কমিটির অনুমোদনের ঋণছাড়ের জন্য আইটিএফসি’র কাছে আবেদন করবে জ্বালানি বিভাগ।
[৫] জানা যায়, এদিকে আইটিএফসি থেকে গৃহীতব্য এ ঋণ চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭০ কোটি ডলার বেশি। জ্বালানি আমদানিতে আইটিএফসি থেকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে। ঋণ সহায়তা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আইটিএফসি পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্য আমদানির জন্য বিপিস-কে এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য পেট্রোবাংলা-কে অর্থায়ন করবে।
[৬] জানা যায়, আইটিএফসি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের পর এ ঋণ বিতরণ করবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে ৮০ কোটি ডলার।
[৭] জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান এবং উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে।
[৮] সূত্র মতে, জ্বালানির দাম ওঠানামা করে বিধায় ভবিষ্যতে আমদানির পরিমাণ বাড়তে পারে। সে অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানিতে গত বছরের চেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে ডলারের ঘাটতি বিবেচনায় এলএনজি আমদানির জন্যও ঋণ নেয়া হয়।
[৯] জ্বালানি তেল ও এলএনজিসহ দেশের জ্বালানি আমদানির ব্যয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার ছিল। আগামী জুনে শেষ হওয়া চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ বিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
[১০] সংশ্লিষ্টদের মতে, এভাবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জ্বালানি আমদানি ব্যয় দ্বিগুণ হতে পারে। চলতি বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের জন্য স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছে সরকার। উচ্চ সুদে এই ঋণ ব্যবহার করে জ্বালানি তেল আমদানি করার পর এর দামও স্বয়ংক্রিয় মূল্য পদ্ধতির আওতায় বাড়বে। অর্থাৎ উচ্চ মূল্য এবং পুঞ্জীভূত সুদ ভোক্তাদের ওপর চাপবে।