খুব দ্রুত মূদ্রাস্ফীতি কমে আসবে : গভর্নর
মো. আখতারুজ্জামান : [১] বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য বিকল্প সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি। কিন্তু মূদ্রাস্ফীতি কমেনি এর পরে আমরা মূদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আশা করি খুব দ্রুত মূদ্রাস্ফীতি কমে আসবে। কারণ আমাদের এখন প্রধান কাজ মূদ্রাস্ফীতি কমানো।
[২] রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
[৩] আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা কোন ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে না করিনি। এখন প্রতি দিন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার দুইশত ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। আমরা কঠোর হাতে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করার ”েষ্টা করছি। আমরা আশা করি জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আর ডলারের স্বল্পতা থাকবে না।
[৪] গভর্নর বলেন, এসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে যেখান থেকে ৭ শতাংশ হারে এবং নারী উদ্যোক্তরা ৫ শতাংশ হারে ঋণ নিতে পারে। আমরা জানি আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে খাদ্য পণ্য, সার, জ¦ালানি আমদানি এর পরে অন্য কিছু। অগ্রিম ডলার বুকিং এর বিষয়ে ভুলভাবে সংবাদ এসেছিল। আমরা পরবর্র্তিতে এর ব্যাখ্য প্রদান করেছি। এটা ৫ শতাংশ সুদে ৩ মাস মেয়াদে বুকিং দিতে হবে সেক্ষেত্রে ১.৭৫ শতাংশ সুদ হবে।
[৫] সাক্ষাতকালে বিসিআই সভাপতি বলেন যে, শিল্প মালিকরা অনেক সময় অনেক পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভুল তথ্য পেয়ে থাকে, যার ফলে অনেকে ঘাবড়ে যান। আমরা আজ আপনার কাছে কিছু বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য এসেছি। [৬] আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, দেশে বর্তমানে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে। ঋণের উচ্চ সুদ হার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। ঋণের উচ্চ সুদের সঙ্গে ব্যাংক সমূহ বন্ডে বিনিয়োগের দিকে ঝুকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।
[৭] সভাপতি বলেন, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খুলতে পারছে না শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং ডলার স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া রেট থেকে অনেক বেশি টাকায় ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে।
[৮] তিনি বলেন, রপ্তানি মুখী শিল্পের উৎসাহিত করার জন্য যে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয় সরকার থেকে সেটা ঠিক সময় মত পরিশোধ করা হচ্ছে না। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের সময় মত তাদের অপারেশন কর মেটানো কষ্ঠসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সময় মতো নগদ সহায়তা ছাড় না করা গেলে সমযমত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি নগদ সহায়তা দ্রুত ও সময়মত ছাড় করা উচিত।
[৯] বিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তারা টাকার অবমূল্যায়নকেও আমলে নিচ্ছে না। আমার মনে হয় এটা আগের মত রাখা উচিত। আমরা ঋণ ক্লাসিফাইডের ক্ষেত্রে (এসএমএ) ৩ মাসে না এনে ৬ মাস রাখার প্রস্তাব করছি।
[১০] তিনি বলেন, প্রছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্সসেপটেন্স পেতে এবং এলসি ম্যাচিউইর হতে ৪-৫ সপ্তাহ লেগে যায় যার ফলে তাদের লায়াবিলিটি বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি প্রচ্ছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রেও একটি নিদের্শনা থাকা জরুরী যে, স্বাভাবিক রপ্তানির মতই প্রচ্ছন্ন রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সিঙ্গেল কোম্পানি একটি সিঙ্গেল আইডেনটিটি, আন্তর্জাতিক প্রাকটিস হচ্ছে, কেউ যদি গ্রুপ অব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করে তবে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রুপ হিসেবে নিবন্ধন না করা হলেও ৩-৪ জন পরিচালক হলেই তাদেরকে গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কোন একজন পরিচালক কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেলেও সে অন্য কোথাও যদি কোনভাবে সিক হয়ে যায় তবে তার লায়াবিলিটি নিতে হয়। এটার একটি ক্লারিফিকেশন দরকার।
বিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এসএমই খাত সব থেকে ক্ষতির মূখে পড়েছে। আমাদের এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থ নিতে হবে। আমরা কিছু দিন আগে পত্র-পত্রিকায় দেখলাম অগ্রিম ডলার বুকিং দিলে প্রায় ১২৩-১২৪ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। এটা সম্পর্কে আমরা জানতে চাই।
সভায় বিসিআই’র উর্দ্ধতন সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, পবিচালকবর্গ, রঞ্জন চৌধুরী, ড. দেলোয়ার হোসেন রাজা, আবুল কালম ভূইয়া, জিয়া হায়দার মিঠু, মিজানুর রহমান, রুসলান নাসির, সোহানা রউফ চৌধুরী, মে. সেলিম জাহান, মো. মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের, ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের ও নুরুন নাহার এবং বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।