জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বনবিভাগের নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূণ
হাসিব মো. ইরফানুল্লাহ : বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দায়িত্ব পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি সংস্থার উপর পড়ে: বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে আমি মনে করি সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া দরকার শুধু বন বিভাগকে। প্রথমত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ ও এর আগের সংস্করণ অনুযায়ী বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ আইনত দায়বদ্ধ। কৌশলগত পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে, এই বিভাগটি আইইউসিএন-এর সহায়তায় ২০১৬ সালে জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল তৈরি করেছিলো। যা প্রায় ৩০ বছর ধরে মুলতুবি ছিলো। এমওইএফসিসি গত বছর এনসিএস (২০২১-২০৩৬) পাবলিক করেছে।
বন্যপ্রাণী সুরক্ষার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (২০১১-২০১৬) পরামর্শদাতা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ মহাপরিকল্পনা (২০১৫-২০৩৫) এবং াঁষঃঁৎবং (২০১৬-২০২৫), মযধৎরং এর জন্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছে। একই সময়ে অন্যান্য উদ্যোগের ফলে বাঘ (২০১৮-২০২৭) এবং ডলফিন (২০২০-২০৩০) সংরক্ষণের পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছিলো। নীতিমালার পাশাপাশি বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সার্কেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। বিভাগটি বর্তমানে জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা (এমপিএ) ও ইকো-পার্ক সহ ৫৩টি সংরক্ষিত এলাকা পরিচালনা করছে। ২০১২ সাল থেকে বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থাগুলোতে আমরা জনশক্তি, সক্ষমতা ও তহবিলের পর্যাপ্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি।
কীভাবে বনায়ন প্রকল্প বন ধ্বংস করে : ইকোসিস্টেম স্তরে ২০০৩ সাল থেকে, বিভাগটি ইউএসএআইডি-অর্থায়িত সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্পগুলোর একটি অংশ। যথা নিশোর্গো সহায়তা প্রকল্প (২০০৩-২০০৮), সমন্বিত সুরক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা (২০০৮-২০১৩), জলবায়ু রেসিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেম অ্যান্ড লিভলিহুডস (২০১৩-২০১৮) এবং চলমান ইকোসিস্টেম/প্রতিবেশ কার্যকলাপ (২০২১-২০২৬)। এই সবগুলো সংরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনায় জনগণের অংশগ্রহণ এনেছে। যা বন্যপ্রাণী আইনের অধীনে এমওইএফসিসি দ্বারা প্রণীত সুরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭ দ্বারা আরও শক্তিশালী হয়েছে। যদি আমরা এখন আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশনের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো বন বিভাগ হলো বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কনভেনশনের জাতীয় কেন্দ্রবিন্দু যোগাযোগ, সক্ষমতা-নির্মাণ, শিক্ষা, রামসার কনভেনশনের প্রোগ্রাম।
অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা (সিইপিএ) এবং কনভেনশন অন কনজারভেশন অফ মাইগ্রেটরি স্পিসিস অফ ওয়াইল্ড অ্যানিমালস। বাংলাদেশের পক্ষে বিভাগটি নিয়মিতভাবে এই সম্মেলনগুলোর সচিবালয়ে জাতীয় প্রতিবেদন জমা দেয়। ডিওই হলো জৈব বৈচিত্র্য সংক্রান্ত কনভেনশনের কেন্দ্রবিন্দু। যা জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি। ডিওই সর্বশেষ জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল যারা কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২১) প্রণয়ন করেছে, কিন্তু দৃশ্যত এর কার্যকরী বাস্তবায়নে অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এই বিভাগটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য পরামর্শদাতা ও বিশেষজ্ঞদের জড়িত করে সিবিডি সচিবালয়ে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেয়।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করার জন্য ডিওই-এর একটি আইনি ভিত্তি হলো বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ও ২০১০ সালে এর সর্বশেষ সংশোধনী। এই আইনটি পরিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকা (ইসিএএস) ঘোষণা ও পরিচালনার বিষয়ে কথা বলে। এর ফলে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়া ম্যানেজমেন্ট রুলস ২০১৬ প্রণয়ন হয়েছে। তবুও এগুলো জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ অঞ্চলে সংরক্ষণ ক্রিয়াকলাপের জন্য ওভারল্যাপিং এখতিয়ার অনুমোদন করে। যেমন কক্সবাজার-টেকনাফ উপদ্বীপ (একটি ইসিএ বেশ কয়েকটি সংরক্ষিত এলাকা বহন করে), সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ( একটি ইসিএ এবং একটি এমপিএ) ও টাঙ্গুয়ার হাওর (একটি ইসিএ এবং একটি রামসার সাইট)।
২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড়ের অবসান: একটি খালি প্রতিশ্রুতি? এমওইএফসিসি এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে প্রবাহিত করার জন্য তিনটি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, এমওইএফসিসি (মার্চ ২০২৩) সম্পর্কিত ব্যবসার সর্বশেষ বরাদ্দের আলোকে বন বিভাগকে সিবিডি-এর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে একটি নতুন অফিস আদেশ জারি করা দরকার। এই বিভাগের প্রথম কাজটি হলো ২০২৪ সালের মধ্যে কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি নতুন এনবিএসএপি তৈরি করা উচিত। বিশেষত বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন-২০১৭ সংশোধন করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ডিওই-এর চলমান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পগুলোকে সক্রিয়ভাবে বন বিভাগকে প্রোগ্রামেটিক ট্রানজিশনের উপায় হিসেবে জড়িত করা উচিত। যেকোনো পাইপলাইন প্রকল্প বন বিভাগ দ্বারা ডিওই-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বন বিভাগকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ‘সংরক্ষণ অর্থায়ন’ নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে তার নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এটিকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ তহবিল প্রতিষ্ঠায় একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা উচিত। যা বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন-২০১৭-এ সাত বছর আগে তৈরি করার বিধান ছিলো। এ ক্ষেত্রে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড কার্যকর হওয়া উচিত। আমি ভাবছি যে এমওইএফসিসি বন বিভাগের সঙ্গে এই নতুন তহবিল তৈরি করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেবে কি না। বিশেষত সরকার যখন পরবর্তী জাতীয় বাজেটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্র : ডেইলি স্টার। লেখক : জলবায়ু পরিবর্তন এবং গবেষণা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা একজন স্বাধীন পরামর্শক, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস