আনু মুহাম্মদ
আজকের দিনটির বহুমাত্রা। এইদিন ১লা ফাল্গুন বসন্ত উৎসব, বিশ্বজুড়ে পালনের ভালোবাসা দিবস, বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এবং আজ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।
এইদিনে বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মত সামরিক শাসন জারির পর প্রথম সবচাইতে জোরালো প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছিল এবং শহীদ হয়েছিলেন বেশ কয়জন। বেশ কিছুদিন ছোট ছোট প্রতিবাদ ও প্রস্তুতির পর ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সম্মিলিত প্রতিবাদে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সংগঠন বহির্ভূত শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ব্যানারে রাস্তায় নামে। সেই বিশাল সমাবেশ ও মিছিলে আতংকিত সামরিক সরকার সশস্ত্র আক্রমণ চালালে শহীদ হন বেশ কয়েকজন, বহুজন রক্তাক্ত হন। এখানেই সামরিক সরকার থামেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে পাইকারিভাবে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ একে একে প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামরিক বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। কিন্তু এই আক্রমণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থামাতে পারেনি। এরপরই বরং তা আরও বিস্তৃত হয়। সেই থেকে এই দিনকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয় ১৯৯০ সালে, কিন্তু স্বৈরতন্ত্রী ব্যবস্থা অটুটই থাকে যার ওপর দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারী আধিপত্য এখন আরও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান সময়ে এই দিবসের গুরুত্ব তাই আরও বেশি বলে এই লড়াইএর ধারাবাহিকতা মনে রাখতে হবে।
তবে আমি ভালোবাসা আর স্বৈরাচার বিরোধিতার মধ্যে কোনো বিরোধ দেখি না। বরং দুইএর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুঁজে পাই, একটি আরেকটিকে শক্তি যোগায়। নিজের ভেতর ভালোবাসা না থাকলে, অন্যের অন্যদের প্রতি ভালোবাসার বোধ না থাকলে স্বৈরাচারের বিরোধিতা কোন শক্তিতে হবে? প্রাণের প্রতি ভালোবাসা থাকলেই প্রাণবিনাশী অপশক্তির প্রতি ঘৃণা প্রবল হয়, তার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হয়। লেখক: অর্থনীতিবিদ। (ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া)