অবৈধ বিদেশি নাগরিক ঠেকাতে সমন্বিত কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার তৈরির সিদ্ধান্ত
সোহেল রহমান : [১] বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। অবৈধভাবে অবস্থানের পাশাপাশি এসব বিদেশিরা অনুমতি ছাড়াই কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। ফলে একদিকে দেশের কর্মসংস্থানের ওপর চাপ বাড়ছে এবং অন্যদিকে সরকারও কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় বিদ্যমান ভিসা নীতি সংশোধন ও কঠোর করার পাশাপাশি দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের জন্য একটি সমন্বিত কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
[২] জানা যায়, দেশে বর্তমানে ২০০৬ সালের ভিসা নীতি কার্যকর রয়েছে। ২০১৯ সালে নতুন ভিসা নীতিমালা করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি।
[৩] সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশি নাগরিকদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে অবস্থান করছেন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও। কারণ, ধরা পড়লে জরিমানার অঙ্ক খুবই কম, মাত্র ৩০ হাজার টাকা। অনেকে ভিসার শ্রেণি পরিবর্তন করেও বেশি দিন অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছেন। আইনি দুর্বলতা ও বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের সমন্বিত কোনো তথ্যভান্ডার না থাকায় বিনা বাধায় তারা এ দেশে অবস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের অনেকে বাংলাদেশে থেকে আয়-রোজগার করলেও ঠিকমতো কর দেন না। অথচ বাংলাদেশে অবস্থান করে কোনো কাজ করতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হয় এবং আয়কর দিতে হয়। কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও বিনিয়োগ ভিসা এবং পর্যটক ভিসায় এসে অনেকে কাজ করলেও ভিসা নীতিমালায় অনুমতি নেয়ার শর্ত নেই। ফলে ভিসাধারীরাও তা নেন না। অনেকে বাংলাদেশে অবস্থান করে ভিসার মেয়াদ বাড়াচ্ছেন।
[৪] বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় অনেকে অনুমান করে বলেন যে, ৪ থেকে ৫ লাখ বিদেশি আছেন দেশে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তথ্যমতে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। চার ধরনের ভিসায় তারা এ দেশে এসেছেন। এর মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ শ্রেণির ভিসায় ১০ হাজার ৪৮৫, কর্মসংস্থান ভিসায় ১৪ হাজার ৩৯৯, শিক্ষা ভিসায় ৬ হাজার ৮২৭ এবং পর্যটন ও অন্যান্য শ্রেণির ভিসায় ৭৫ হাজার ৪৫৬ জন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে এসেছেন। এদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক সবচেয়ে বেশি ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চীনের নাগরিক ১১ হাজার ৪০৪ জন।
[৫] সূত্রমতে, অনুমতি ছাড়া কাজ করা বিদেশিদের ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, এনএসআই, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং পুলিশের এসবি’র প্রবেশযোগ্যতা থাকেÑ এমন একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি বিডা আয়োজিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
[৬] সূত্র জানায়, এছাড়া আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ওই বৈঠকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বাংলাদেশি মিশনগুলোর ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া অনলাইন ও স্বয়ংক্রিয় করা হবে। বিদেশিরা যে শ্রেণির ভিসায় আসবেন, সেই শ্রেণি ছাড়া অন্য কোনো শ্রেণির ভিসা থাকলে, মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা থাকলে এবং কাজ করার অনুমতি না থাকলে যেসব বাড়ি বা হোটেলে তারা অবস্থান করবেন, সেসব হোটেল ও বাড়ির মালিকদেরও জরিমানা করা হবে। অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের জরিমানা দৈনিক ভিত্তিতে করা হবে অর্থাৎ যত দিন বেশি থাকবেন, তত দিনের জরিমানা আরোপ করা হবে। যে প্রতিষ্ঠান অবৈধ নাগরিকদের কাজে নেবে, তাদেরও জরিমানা গুনতে হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
[৭] এছাড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগ ইতোমধ্যে যাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে, তাদের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।