গরিব নারীদের হাতে ঝাড়ু তুলে দিয়ে আমরা নিজেরাই ছোট হয়ে গেছি
ফরিদা আখতার
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা ড মুহাম্মদ ইউনূসের সংবাদ সম্মেলনে যোগদানের জন্যে গ্রামীণ টেলিকম ভবন, মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কে গিয়েছিলাম। কিন্তু বের হবার আগেই খবর আসলো আগের রাত ১১টার দিকে চজঅউঙ গাড়ীতে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাদের সাথে অনেক যুবক সেখানে গেছেন। আবার সকালে জানলাম যে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সামনে অনেক বহিরাগত যুবক অবস্থান নিয়েছে। তারা কেউই গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা গ্রামীণ টেলিকম এবং সেখানকার কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত কেউ নয়। তবুও সাড়ে দশটার দিকে আমরা গেলাম। যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম চার রাস্তার মোড়ের আগেই পুলিশের গাড়ী দেখা যাচ্ছে। মোড়ে আসতেই গাড়ী থামিয়ে পুলিশ ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। আমার শ্রীলংকার কথা মনে হোল। ১৯৯৮ সালে কলম্বো শহরে গিয়েছিলাম। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলে পুলিশের ব্যারিকেড পার হতে হোত। তখন আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশে আমরা কত স্বাধীন! এমন কোন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় না। কিন্তু এখন কী হচ্ছে এসব?
আরো কিছু দুর এগিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। হলুদ রংয়ের প্লাস্টিকের চেয়ার রাস্তার পাশে রাখা আছে। আর একটু এগুতে দেখলাম ঝাড়ু হাতে বেশ কিছু মহিলা। তাদের হাতের ঝাড়ুগুলো একেবারে নতুন। কোন ময়লা নেই। অর্থাৎ কেউ তাদের কিনে দিয়েছে। তারা ক্ষোভে পড়ে নিজের ঘরের ঝাড়ু নিয়ে বের হয়ে আসেন নাই। বুঝতে পারছিলাম না সংবাদ সম্মেলন হতে পারবে কিনা। আমরা এর মধ্যে আর একটি কাজ সেরে নিয়ে আবার যখন সেখানে যাই তখন দেখি চেয়ারগুলো গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশও নেই। কিছু মহিলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঝাড়ু হাতে আছেন। গাড়ীর ভেতর থেকেই দেখলাম এই মহিলারা কি যেন বলছেন, বিরক্ত, চলে যেতে চাইছেন, তর্ক করছেন। বুঝলাম স্বেচ্ছায় এরা কেউ আসেন নি।
হায়রে গরিব নারী। ড ইউনুস আর যাই হোক এতোদিন দেশের গরিব মানুষ বিশেষ করে নারীদের জন্যেই কাজ করেছেন। তাঁর নোবেল পুরুস্কার এই গরিব নারীদের ক্ষুদ্র ঋণের সুযোগ সৃষ্টির জন্যেই। ক্ষুদ্র ঋণের সমালোচনা করতে পারি, কিন্তু ড ইউনুস কোন গরিব নারীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এই অপবাদ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গরিব নারীদের হাতে ঝাড়ু তুলে দিয়ে আমরা ড. ইউনুসের মান সম্মান নষ্ট করেছি নাকি নিজেরাই ছোট হয়ে গেছি। এমনকি এই নারীদেরও তাদের অজ্ঞাতে অপমান করেছি। যারা ঝাড়ু মিছিল করেছে তারা ড. ইউনূসকে কি চেনেন? আমার মনে হয় না। তাদের দেখে মনে হয়েছে তাদের ডেকে আনা হয়েছে।
বিচারিক প্রক্রিয়ায় ড. ইউনূসের প্রতি যা করা হচ্ছে তা তো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেই, আমরা সেটা দেখছি। তার সাথে এইভাবে সামাজিকভাবে হেয় করা এবং বলপ্রয়োগে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান দখল কি আইন বিরুদ্ধ নয়? আমার একার প্রশ্ন নয়, হাজার মানুষের। কিন্তু কে জবাব দেবে?
শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনটি হয়েছে, ড ইউনূস এবং তাঁর সহকর্মীরা এসেছেন, তাদের কথা বলেছেন। লেখক: উন্নয়ন বিষয়ক নেত্রী ও উবিনীগের নির্বাহী