বাংলাদেশ শক্তিশালী না মায়ানমার, আসলে কোনটা সত্য
ওয়াসি মাহীন
কোন দেশের শক্তিমত্তার বিচার সামরিক র্যাংকিং বা এসেটস দিয়ে বিবেচনা করা অযৌক্তিক ও অসম্পূর্ণ। বার্মা শক্তিশালী নাকি বাংলাদেশ এই বিতর্কে অনেকে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার এর নিউমেরিক মিথ্যায় অগাধ বিশ্বাস করলেও আমার কাছে কখনো এরকম মনে হয়নি। প্রথম থেকেই আমার অবস্থান ছিল পরিস্কার। শুধুমাত্র অস্ত্রের সংখ্যার উপর একটি দেশের শক্তিমত্তার বিচার করার বিপক্ষে। যেকোন যুদ্ধে জয়লাভ কোন দৈব্য বিষয় নয়। এর পেছনে অনেক ইস্যু থাকে। থাকতে হয় সঠিক স্ট্রাটেজি, যুদ্ধের মোরাল জাস্টিফিকেশন্স, লজিস্টিক সাপোর্ট ক্ষমতা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, যুদ্ধ চালিয়ে যাবার মত সক্ষমতা (অর্থনৈতিক ও সামরিক) আরো অনেক প্যারামিটার।
বর্তমান বার্মার অবস্থা বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে, রাখাইনের সাথে ইয়াঙ্গুনে যাবার রুট আপাতত বন্ধ। আটকে পড়া সীমান্তরক্ষীদের একমাত্র উপায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া অথবা বিভৎস মৃত্যু। তানিন্থারি, মন, কায়িন রাজ্যগুলি সম্পূর্ন দেশের অন্য অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পথে। কায়া ও বাগো রাজ্যের মধ্যবর্তী অংশ দখলে নিলেই বিশাল অঞ্চল অন্যান্য রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এই অঞ্চলের সামরিক ঘাটিতে থেকে যাওয়া সৈন্যদের থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় নেই। সান রাজ্যকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে সান স্টেট আর্মি দক্ষিণ ও ঝঝচচ। কাচিন রাজ্যের ও একি অবস্থা।
বিদ্রোহীগোষ্ঠী বহু পুরাতন একটা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করেছে। শক্তিশালী শত্রুর মোকাবেলায় দুর্বলেরা এক হও। শত্রুকে বিচ্ছিন্ন করে ফেল। ব্যাকয়াপ ফোর্স যেব উদ্ধারেও না আসতে পারে সেই ব্যবস্থা কর। এর প্রেক্ষিতেই ব্রাদারহুড এলায়েন্স। অত:পর প্রতিটা রাজ্যে একযোগে হামলা বেগবান করা। জান্তা দিশেহারা হয়ে পড়েছে এতগুলি ফ্রন্ট একসাথে মোকাবেলা করতে। এরপর রাজ্য গুলিকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যেন কোন ব্যাকাপ সাপোর্ট না আসতে পারে। তাদের কৌশল যথেষ্ট কাজে দিয়েছে।
এক্ষেত্রে জান্তার পক্ষে কার্যত ঘুরে দাড়াবার মত আর ক্ষমতা আছে বলে আমার মনে হয়না। তবে পরিস্থিতি ভীন্ন হতে পারত। যদি, প্রতিটা রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন হত যে দুর্গম বলে কিছু নেই। যদি বার্মার ইকোনমি শক্তিশালী হত। সবথেকে বড় কথা সামরিক শাসন না থাকলে সিভিল প্রশাসনের এরকম পরিস্থিতি নিয়োন্ত্রন আরো সহজ। অনেক ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগে সমাধান আসেনা। বরং এটা হিতে বিপরীত হয়। কমিউনিস্ট রোমানিয়া একটা উদাহরণ হতে পারে এক্ষেত্রে।
র?্যাংকিং এ উপরে থাকা একটা দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী কত দ্রুত পতনের দিকে যাচ্ছে বার্মা তার উদাহরণ। দামি সামরিক অস্ত্রগুলি এখন বিদ্রোহীদের দখলে। আয়েশেই তারা ফায়ার পাওয়ারে তাত্মাদাওকে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। আকাশ পথে ক্ষুদ্র দ্রোন কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটাও এই যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়ার মত। বার্মিজ এয়ারফোর্স থাইল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্গন করে সীমান্তে বোমাবর্ষণ করে যতটা ফল পেয়েছে, বিদ্রোহিরা ড্রোনে করে টার্গেটে বোমা ফেলে আরো বড় ফল পেয়েছে। লেখক: সাবেক ব্যাংকার