বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন শীতকালেও উচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি করছে!
নেভেন এস ফুক্কার : এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিষেবা মেট অফিস ঘোষণা করেছিলো যে ২০২৩ সালে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের থেকে ১.৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিলো। এটি ২০১৬ সালের আগের রেকর্ডের চেয়ে ০.১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তাই এটিকে রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর তৈরি করেছে। এই ঘোষণার কিছুণ পরেই আবহাওয়া অফিসও পূর্বাভাস দিয়েছে বহুদিনের ঠাণ্ডা আর্কটিক বাতাসের বিস্ফোরণ, যা শূন্যের নিচে তাপমাত্রা, তুষার ও যুক্তরাজ্যের অনেক অংশে বরফ জমেছে। যখন ঠাণ্ডা স্ন্যাপ আসে তখন স্কটিশ হাইল্যান্ডে তাপমাত্রা মাইনাস ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমনকি ইংল্যান্ডেও মাইনাস ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এটা শুধু ইউকে নয়; এই শীতে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনজুড়ে রেকর্ড-কম তাপমাত্রা ল্য করা গেছে। কেন আবহাওয়া ও জলবায়ু এ ধরনের বিপরীত লণ উৎপাদন করছে? কারণ হলো তারা বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্যগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন টাইমস্কেলে উল্লেখ করেছে।
আমি মনে করি না প”থিবীতে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি সত্যিকার অর্থে বৈশ্বিক বার্ষিক গড় তাপমাত্রার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এক শতাব্দীতে অতিরিক্ত উষ্ণতা কেমন অনুভব করে তা সত্যিই কেউ জানে না। বিশেষ করে প্রদত্ত তাপমাত্রা যুক্তরাজ্যে দিন ও রাতের মধ্যে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। আমরা সাধারণত ঋতুগত গড়গুলো অনুভব করতে বা স্মরণ করতে ও বছরের পর বছরগুলোর সঙ্গে কীভাবে সেগুলো পরিবর্তিত হয় তা মনে করতে কষ্ট হয়। আমরা পরিবেশগত পরিবর্তনে জলবায়ু পরিবর্তনগুলো দেখতে পারি। যেমন হিমবাহের পতন বা প্রারম্ভিক ফুলের গাছপালা। আমরা যন্ত্রের সাহায্যে পরিবর্তনগুলো ট্র্যাক করতে পারি। কিš’ জলবায়ু পরিবর্তনকে অনুভব করা খুবই কঠিন। বিপরীতে, আমরা দৈনিক ও সাপ্তাহিক টাইমস্কেলে আবহাওয়া অনুভব করি। আরও ভালোভাবে মনে রাখি- বিশেষ করে ঠাণ্ডা স্ন্যাপ, তাপপ্রবাহ বা শক্তিশালী ঝড়ের মতো চরম আবহাওয়া।
আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জলবায়ু বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনায় খুব দ্রুত ও পরিবর্তনশীল। যা দীর্ঘ সময়ের স্কেলে সংজ্ঞায়িত ও পরিবর্তিত হয়। আবহাওয়া একদিন গরম ও পরের দিন ঠাণ্ডা হতে পারে। কিš’ বার্ষিক গড় জলবায়ু হঠাৎ করে উষ্ণ থেকে ঠান্ডায় যেতে পারে না। জলবায়ু মূলত যথেষ্ট সময় জুড়ে আবহাওয়ার একটি সঞ্চয়। উদাহরণস্বরূপ, আবহাওয়ার তথ্য দুপুর বা বিকেল ৪টার ¯’ানীয় তাপমাত্রা, দৈনিক সর্বনিম্ন, গড় বা সর্বো”চ তাপমাত্রা বা সাপ্তাহিক গড়কে নির্দেশ করতে পারে। যেখানে জলবায়ু অনেক দীর্ঘ মেয়াদী। জলবায়ু তথ্য উল্লেখ করতে পারে, একমাসের গড় তাপমাত্রা বা মৌসুমী (তিন-মাস) সময়কাল, বছর বা দশকের গড়। জলবায়ু বিশ্লেষণে, আমরা সাধারণত ‘অবাসেলিন’Ñ একটি দীর্ঘমেয়াদী গড় সম্ভবত ৩০ বা ৫০ বছরের ডেটার সাপেে অসঙ্গতির সন্ধান করি। সাম্প্রতিক ২০০২-২০২২ সময়ের মধ্যেও উপ-শূন্য আবহাওয়ার অভিজ্ঞতার সম্ভাবনা এখনও উল্লেখযোগ্য। তবে, চরম ঠান্ডা তাপমাত্রা কম সাধারণ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন শীতকালেও উ”চ তাপমাত্রা ব”দ্ধির শঙ্কা তৈরি করছে। এটি শীতকালীন ঠাণ্ডা স্ন্যাপ নিষিদ্ধ করে না, তবে এটি তাদের সম্ভাবনা হ”াস করে।
সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন। লেখক : নেভেন এস ফুক্কার একজন সিনিয়র গবেষক, স্কুল অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, লেকচারার, স্কুল অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস
বাণিজ্যের জন্য অর্থনৈতিক দূরত্ব সমানভাবে হ্রাস করা কি ভালো?
টিম ওয়ারস্টল : আপনি কি জানেন, কয়েকটি ট্রেন লাইন তৈরি করে আপনি ভূগোল পরিবর্তন করতে পারেন? শুধু শিপিং আয়োজন করে একটু ভালো হয়? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটি আসলে সত্য। ইন্ডিয়া, মিডল-ইস্ট, ইউরোপ ইকোনোমিক করিডোর সেই জিনিসগুলোর মধ্যে একটি যেগুলোতে শুধু অনিদ্রাহীন আমলারাই আগ্রহী হতে পারে। এখনও সমস্ত নারকোলেপ্সি আমাদের প্ররোচিত করে। এটি সবচেয়ে মৌলিক অর্থনৈতিক মডেলগুলোর একটির মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি দেয়। সব বাণিজ্যেরই গ্রাভিটি মডেল বলে কিছু আছে। এটি বলে যে বাণিজ্য ঘনিষ্ঠতা ও অর্থনীতির আকার দ্বারা পরিবর্তিত হয়। সুতরাং দুটি বড় অর্থনীতি-শহর অর্থনীতি সহ বা ছোট, শুধু জাতীয় নয়-একে অপরের সঙ্গে দুটি ছোট অর্থনীতির বেশি ব্যবসা করবে। এমনকি তাদের অর্থনীতির শতাংশ হিসাবেও। এছাড়াও এই দুটি অর্থনীতি একে অপরের যতো কাছাকাছি থাকবে ততো বেশি বাণিজ্য ঘটবে।
এটি একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব যা বারবার পরীক্ষা করা হয়েছে। যা অভিজ্ঞতাগতভাবে সম্পূর্ণ সত্য। এটি একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব, ভৌগোলিক তত্ত্ব নয়। সুতরাং উল্লিখিত দূরত্বটি অর্থনৈতিক দূরত্ব, ভৌগোলিক নয়। ভৌগলিকভাবে কাছাকাছি দুটি স্থান একে অপরের সঙ্গে অনেক বেশি বাণিজ্য করে তা সত্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, পথে কিছু পাহাড় থাকতে পারে বা কোনো রাস্তা নেই অথবা আগেকার দিনে রাস্তা ও গরুর গাড়িতে করে নেওয়ার চেয়ে নদী বা সমুদ্রপথে ভারী কিছু পরিবহন করা অনেক সহজ ছিলো। এর আমার প্রিয় উদাহরণ হলো নিউক্যাসল এবং কার্লাইল একে অপরের থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে অবস্থান। কিন্তু নিউক্যাসল ১৩০০ এর দশক থেকে ৩০০ মাইল দূরে লন্ডনের সঙ্গে ব্যবসা করছিলো। কারণ তখন সমুদ্রপথে বাণিজ্য ছিলো অনেক সস্তা ও দ্রুত।
আমরা অন্যান্য ভৌগোলিক থেকে উদাহরণ হলো, বাংলায় যে বাণিজ্য হয়েছে তা নদীপথ দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিলো, গরুর গাড়ি নয়। ভৌগলিক পার্থক্য ও একটি অর্থনৈতিক পার্থক্যের মধ্যে এই পার্থক্যটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা আদর্শগুলোর মধ্যে একটি ছিলো যে দেশগুলো ভৌগলিকভাবে একে অপরের কাছাকাছি তাদের একে অপরের সঙ্গে ব্যবসা করা উচিত। অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, আমাদের এই দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক দূরত্ব কমানো উচিত। কারণ এখানে কম শুল্ক ও অন্যান্য আইনি বাণিজ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটা নিয়েই আইএমইসি। এটি চাইনিজ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিকল্প হিসাবে প্রস্তাব করা হচ্ছে। আমি ভূ-রাজনীতিকে তাদের কাছে ছেড়ে দিতে পেরে সম্পূর্ণ খুশি যারা মনে করেন যে এটি একটি আকর্ষণীয় বিষয়। আরও বাণিজ্য মানুষকে আরও ধনী করে তোলে, আরও বাণিজ্য নিজেই একটি ভালো জিনিস। সুতরাং, এগুলো বাণিজ্যকে আরও বেশি সক্ষম করে।
ভারত সরকার নারকোলেপ্সি প্রচার করছে। যদি আমরা এই মহাকর্ষ মডেলের দূরত্ব সঠিকভাবে বুঝতে পারি তবে আমরা দেখতে পাবো যে এটি সত্যিই উপকারী হবে। যদি পরিবহন খরচ কমানো হয়, তাহলে বাণিজ্য খরচে অন্যান্য অর্থনৈতিক সংযোজন কমানোও উচিত, এই কাগজপত্র, সেই শুল্ক, জাতীয় সীমানা জুড়ে ব্যবসা করার নিছক অসুবিধা, এসব কমাতেও কাজ করা উচিত। রাজনীতিতে যুক্তিতে সবাই এ স্থানে আসে না যা অর্থনীতির ক্ষেত্রে আসে। যদি বাণিজ্যের জন্য অর্থনৈতিক দূরত্ব হ্রাস করা, পরিবহন সংযোগগুলো একটি ভালো জিনিস হয় তবে কেন বাণিজ্যের রাজনৈতিক বাধাগুলো হ্রাস করা, বাণিজ্যের জন্য অর্থনৈতিক দূরত্ব সমানভাবে হ্রাস করাও একটি ভালো জিনিস? উত্তর হবে অস্পষ্টতার কিছু বাঁধা, ভিত্তি যুক্তিকে অস্বীকার করা, বিড়বিড় করা ও ধোঁয়া উড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু, আপনি যদি এমন জিনিসগুলো উপভোগ করেন, তবে পরবর্তী রাজনীতিবিদকে আপনার সঙ্গে দেখা করার প্রশ্নটি কেন করবেন না? কে জানে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের যুক্তিতে এতোটাই বিব্রত হতে পারে যে তারা পরবর্তিতে ভালো ধারণা গ্রহণ করতে পারে। সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন। লেখক : লন্ডনের অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো।
অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস