বিদেশি সিঙ্গারা, দেশি পাউরুটি এবং একটি দোকান
এ বি এম কামরুল হাসান
[১] পনেরো বছর আগে যখন প্রবাসী হই, তখন এক সিঙ্গাপুর বা ব্রুনাই ডলারে পাওয়া যেতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ব্রুনাইতে তখন একটি সিঙ্গারা পাওয়া যেত ৫০ সেন্টে। মানে একটি সিঙ্গারার দাম দাঁড়ায় প্রায় ২৫ টাকা। দেশে তখন একটি সিঙ্গারার দাম দু’টাকা। দু’একটি দামি রেস্তোরায় দাম বোধ করি পাঁচ টাকা ছিলো। দেশের তুলনায় এতো দাম দেখে প্রায় ছ’মাস কোনো সিঙ্গারা খাইনি। অথচ দেশে থাকতে সিঙ্গারা ছিলো অপারেশনের বিরতিতে আমাদের প্রধান খাদ্য। বলাবাহুল্য এবার দেশে যেয়ে প্যারাসিটামলের চেয়ে ১০ গুণ বড় আকৃতির একটি সিঙ্গারা খেয়ে এলাম ৫ টাকা দামে। অবশ্য ব্রুনাইতে এখন একটি সিঙ্গারার দাম ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।
[২] দেড় সপ্তাহের একটি সংক্ষিপ্ত স্বদেশ সফর শেষে কর্মস্থলে ফিরছি। এখন আমি মধ্য গগনে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিনে পয়সার আকাশ ইন্টারনেট পেয়ে রাত জেগে লিখছি। রাতের ঘটনাটি শাহজালাল বিমান বন্দরের। আমরা কিছু মিষ্টি কিনছি প্রাণের আউট লেট থেকে। আমার স্ত্রী খেয়াল করছে একজন ২৫/৩০ বছরের যুবক ওই দোকানে পাউরুটির দাম বারবার দেখছে, আবার ফিরে যাচ্ছে। এভাবে কয়েকবার আসা যাওয়া শেষে সে আমাদের পাশে আশ্রয় নিয়েছে বিল দেওয়ার জন্য। মনে এখনো দ্বিধা। এয়ার পোর্টে একটি পাউরুটির দাম ৪০ টাকা। আমি যেমন ঢাকা ব্রুনাইয়ের সিঙ্গারার দামের পার্থক্য বিবেচনায় ছ’মাস সিঙ্গারা খাইনি। সেও হয়তো নিজ গ্রাম আর শাহজালাল এয়ারপোর্টের পাউরুটির দামের পার্থক্য বিবেচনায় দ্বিধান্বিত। আমার স্ত্রী তাঁর পাউরুটির দাম দিতে চাওয়ায় সে কোনো আপত্তি করেনি, মুহূর্তে দ্বিধাও কেটে গেলো। পানি কিনতে চাইলাম। দোকানটিতে পানি শেষ। একটি প্রাণ ড্রিঙ্কসের অফার করতে সে খুশিই হলো। ছোট একটি ড্রিঙ্কসের দাম ৩০ টাকা। সামান্য আলাপচারিতায় ছেলেটি জানাল, সে প্রথমবারের মতো রিয়াদ যাচ্ছে।
[৩] নাম না জানা এসব রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার জন্যই দেশে আজ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা এসব রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত রোজগার বিদেশে পাচার করে তারা তাদের কষ্ট কখনোই টের পায় না। কারণ পাচারকারীরা বিমান বন্দরে তাদের কখনোই দেখে না। রেমিটেন্স যোদ্ধা যখন ইকোনোমি ক্লাসের চেক ইন কাউন্টারের লম্বা লাইনে, পাচারকারী তখন বিজনেস ক্লাসের কাউন্টারে, এলেন আর গেলেন। রেমিটেন্স যোদ্ধা যখন প্রাণের দোকানে পাউরুটি কিনবে কিনা ভাবছে, পাচারকারী তখন এয়ার পোর্টের বিজনেস লাউঞ্জের খাবার গিলছে। রেমিটেন্স যোদ্ধা যখন ফেরার সময় ভিড়ের মধ্যে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো, পাচারকারী তখন ভিআইপি গেট দিয়ে বিদ্যুৎ বেগে বেরিয়ে যাচ্ছে। রেমিটেন্স যোদ্ধা ও মুদ্রা পাচাকারী, উভয় গোষ্ঠীকে বিমান বন্দরে একই মর্যাদা দেওয়া উচিত। উভয় গ্রুপকে ভিআইপি মর্যাদা বা আমজনতা মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। তাতে বিদেশে আসা যাওয়ার পথে উভয় গোষ্ঠী উভয়কে চিনতে বা বুঝতে পারে। বিশেষ করে মুদ্রা পাচারকারীরা আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধাদের দুঃখ-কষ্ট কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়।
[৪] এক কোটিরও বেশি লোক আজ রেমিটেন্স যোদ্ধা। যেটি মোট জনসংখ্যার প্রায় পনেরো ভাগের এক ভাগ। দেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি উড়োজাহাজের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসনে বসে থাকে রেমিটেন্স যোদ্ধারা। তারা সব সময় বিমানবন্দরে খাবার জিনিসের দাম দেখে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কি পারে না বিমান বন্দরে তাদের জন্য স্বল্প মূল্যে একটি খাবারের দোকান খুলতে? যাদের বিএমইটি কার্ড রয়েছে, শুধু তারাই এ সুবিধে পাবে। হয়তো স্বল্পমূল্যে বা নিদেনপক্ষে রেমিটেন্স যোদ্ধার গ্রামের দামের মূল্যে। প্রয়োজন হলে দোকানটি চালাতে মন্ত্রণালয় ভর্তুকি দেবে। কোটির অধিক স্বল্প আয়ের রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য তাদের অভিভাবক মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আশা করি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখবে। রচনার স্থান কাল : সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, এস কিউ ৪৪৭, বাংলাদেশ সময় রাত তিনটে। লেখক : প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী এবং বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করছে?
সঞ্জয় দেব : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেন। ‘কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে আমাদের কৃষকদের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অকেজো ও অব্যবহৃত না থাকে,’ তিনি ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২-এ তার ঐতিহাসিক ভাষণে এ কথা বলেছিলেন। নিরাপদ খাদ্য উপলব্ধ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ, তা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের নেতৃত্ব দেন। তারপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে, সরকার এই বিষয়টিকে জোর দিয়েছিলো যে অনিরাপদ খাদ্য খাদ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই খাদ্যের মান ও নিরাপত্তার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ওপর জোর দিয়েছেন। ২০১৮ সালে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ডে কনফারেন্স চলাকালীন, ঘোষণা করেছিলেন যে বিএফএসএ-এর উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তার মানবসম্পদ বাড়াতে হবে ও তাদের গবেষণাগারগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। যা ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২০-২০২৫) প্রতিফলিত হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি। খাদ্য আমদানি প্রায় ৯.৬ বিলিয়ন ডলার (ঋণ২৩) ছিলো। বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য পণ্যের রপ্তানি ছিলো প্রায় ১.১৬ বিলিয়ন ডলার (ঋণ২২)। রপ্তানি কম হলে ও আমদানি বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি মানুষের উপর একটি বর্ধিত রোগের বোঝায় পরিণত হয়। এটা স্বীকার করার সময় হয়েছে যে খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা ভয়াবহ। তাই এতে মনোযোগ প্রয়োজন। যদি কেউ বিএসটিআই মানগুলোর তালিকা পর্যালোচনা করে (স্বেচ্ছায় গ্রহণের জন্য ৪৫১ গুণমান মান) তাহলে দেখবে কিছু আইটেম ছাড়া, বেশিরভাগ খাদ্য পণ্যের মান ২০-৬০ বছর আগে সেট করা হয়েছিলো আর কখনও সংশোধিত হয়নি। শুধুমাত্র ৭৬টি খাদ্য সামগ্রী বিএসটিআই দ্বারা বাধ্যতামূলক পরীক্ষার অধীনে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ২২টি খাদ্য সংযোজন ও ২৭ টি কীটনাশক ছাড়া নিরাপত্তার মাপকাঠির মান খুব কমই পাওয়া যায়। ভারী ধাতু, মাইকোটক্সিন, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যগুলোর জন্য সর্বাধিক মাইক্রোবায়োলজিক্যাল প্যারামিটার, অন্যান্য বিভিন্ন কীটনাশক ও পশুচিকিৎসা ওষুধের অবশিষ্টাংশের মতো দূষিত পদার্থগুলো সম্পর্কে কী বলা যায়?
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী এবং বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করছে? নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতার একটি উদাহরণ সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ দ্বারা পরিচালিত একটি স্টাডিজ প্রকাশ করেছে যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রায় ৬৭ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) রয়েছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবিত সীমার থেকে দুই থেকে চার গুণ বেশি। ২ শতাংশ-র কথা ২০২১ সালে বিএফএসএ-কে অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োগের অভাবের সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হলো বিএফএসএ-এর লাইসেন্সিং প্রবিধানের অনুপস্থিতি। তাই এই শিল্পটি নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপের ভয় ছাড়াই কাজ করে। এছাড়াও, সম্ভবত, টিএফএ পাম তেল ও সয়াবিন তেলের জন্য ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে সেট করা বিএসটিআই মানদণ্ডে একটি পরীক্ষামূলক প্যারামিটার নয়। টিএফএ হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে স্বীকৃত ও নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এইভাবে, এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ন্ত্রক তদারকি থেকে বেরিয়ে এসেছে ও ভোক্তাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। এসব কিছু নীতিগত প্রশ্ন উত্থাপন করে যার জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
খাদ্য নিরাপত্তা আইনের বিধানগুলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএফএসএ ক্ষমতায়ন করে। ধারা ১৩(১) বলে যে বিএফএসএ-কে ‘খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চয়, বিতরণ, বিক্রয় সম্পর্কিত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণ করতে হবে যাতে [নিরাপদ খাদ্যে] প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়…’ধারা ১৩(৩)। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে নিরাপত্তা, মানের মানকে সামঞ্জস্য করার জন্য এটি প্রয়োজন। কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস কমিশন কর্তৃক গৃহীত মানগুলো হলো প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক মান ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাঠামোর মধ্যে একটি রেফারেন্স পয়েন্ট। সুতরাং, খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের জাতীয় মানগুলোকে প্রবিধান হিসাবে অবহিত করার আগে ডব্লিউটিও-কে অবহিত করা অপরিহার্য। অতএব, তাদের প্রবিধান প্রয়োগ করতে ও জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে আইন আদালতে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য, এগুলোকে অবশ্যই গেজেট অবহিত করতে হবে। বিএফএসএ-এর ধারা ১৩(৪) এর অধীনে প্রবিধান তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি ইতিমধ্যেই তা করা শুরু করেছে।
অন্যদিকে, বিএসটিআই শুধুমাত্র মান নির্ধারণ করে, প্রবিধান নয়। তাদের কোনো মানই গেজেট নোটিফাই করা হয় না। কারণটা সহজ- বিএসটিআই প্রাথমিকভাবে স্বেচ্ছাসেবী মান নির্ধারণ করে। এটি কোডেক্সের সদস্য নয় কারণ শুধুমাত্র একটি দেশ কোডেক্সের সদস্য হতে পারে। বিএসটিআই ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (আইএসও) এর সদস্য। একটি সম্মানিত আন্তর্জাতিক এনজিও যা খাদ্য পণ্য সহ সবকিছুর জন্য মান গ্রহণ করে। আইএসও মানগুলো ডব্লিউটিও চুক্তির স্যানিটারি এবং ফাইটো-স্যানিটারি মেজারস এর অধীনে একটি রেফারেন্স মান নয়, যা নিরাপদ খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা করে। এই বাস্তবতাকে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা মোকাবেলায় প্রধান বাধা হিসেবে স্বীকার করা প্রয়োজন।
এই ফাঁকগুলো মোকাবেলা করার জন্য, বিএফএসএ খাদ্য নিরাপত্তা আইন দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতার অধীনে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত নড়ফু হিসাবে, জাতীয় খাদ্যের গুণমান, সুরক্ষা মানগুলো পর্যালোচনা করা ও কোডেক্স মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিজের উপর নিয়েছিলো। এগুলো বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া সিদ্ধান্ত। এফএও-এর প্রযুক্তিগত সহায়তায়, বিএফএসএ প্রধান উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবিধানের পাশাপাশি বিএসটিআই এবং বিএফএসএ দ্বারা উন্নত মানগুলো উল্লেখ করে, ভারতের ৩৬ জন সহ ২০০ টিরও বেশি বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ২৭ টি ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছে, ১২৫ টিরও বেশি বৈঠক করেছে ও একটি চূড়ান্ত করেছে। মোট ১১,২০০ মান এখন অফিসিয়াল গেজেটে বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ২০২৩ সালের মার্চ মাসে গর্বিতভাবে এটি ঘোষণা করেছিলেন। এই খসড়া মানগুলো খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলো, ডব্লিউটিও-কে অবহিত করা হয়েছিলো ও এখন বাংলাদেশে আইনের একটি অংশ হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
বিএফএসএ এর শক্তি হলো এতে ১০০ টিরও বেশি খাদ্য বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ রয়েছে। এই তরুণ অফিসাররা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে কোডেক্সের সঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্য বিধিমালার সমন্বয় সাধনের পুরো কাজটি সমন্বয় করেছেন। তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করার পর, এখন কয়েকটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিএফএসএকে অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য কোডেক্স কাজের নেতৃত্ব দিতে হবে। যদি এটিকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যের গুণমান ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। দ্বিতীয়ত, সরকারের উচিত আরও বেশি কর্মকর্তা, অত্যাধুনিক গবেষণাগার দিয়ে বিএফএসএকে আরও শক্তিশালী করা ও তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। বিএসটিআই ও বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরিগুলোকে পরীক্ষার সুবিধা প্রদান চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলোর ভূমিকা স্বীকার করতে হবে।
খাদ্য বিশ্লেষক পরীক্ষাও জাতীয় পর্যায়ে বিএফএসএ দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। যোগ্য খাদ্য বিশ্লেষকদেরকে নিয়ন্ত্রক কাজে আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য গেজেট অবহিত করা উচিত। একই সঙ্গে, বিএফএসএ অবশ্যই আইনের ধারা ১৩(১) এর অধীনে তার ম্যান্ডেট পূরণ করতে লাইসেন্সিং প্রবিধানগুলোকে অবহিত করতে হবে। পরিশেষে, পরবর্তী কাজের জন্য বিএফএসএ কারিগরি কমিটির গঠন জরুরিভাবে চূড়ান্ত করা উচিত। বিদ্রুপের বিষয় হলো যে বিএফএসএ-এর মানদন্ড সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণ করার জন্য যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছে কিন্তু কোডেক্সে কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতা নেই। অভ্যন্তরীণ বাজারে যদি নিম্নমানের খাদ্য বিক্রি অব্যাহত থাকে, খাদ্য রপ্তানি প্রসারিত না হয় বা বিদেশে প্রত্যাখ্যাত না হয়, তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা একটি চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে। আমার বিনীত পরামর্শ হলো জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলো বৃহত্তর চিত্র দেখে, সাইলোতে কাজ না করে সমন্বিত কাজের জন্য কৌশলগত পরামর্শের জন্য একত্রিত হয়।
সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন। লেখক: কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস