ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রতিদিন গ্রাহকদের ৫৭ অভিযোগ
মো. আখতারুজ্জামান : [১] ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের অভিযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে (সিআইপিসি) অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৭০০টি। সেই হিসেবে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গড়ে প্রতিদিন ৫৭টি অভিযোগ এসেছে। আর এসব অভিযোগের মধ্যে ৯০ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
[২] তবে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের তালিকায় শীর্ষ রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং এবি ব্যাংক। সিআইপিসি’র জানুয়ারি মাসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
[৩] সংশ্লিষ্টরা বলছেন গ্রাহকদের সচেতনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় হচ্ছে দেশের ব্যাংক খাত। তাই অভিযোগের সংখ্যাও বাড়ছে। তারা মনে করেন, ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত বাজারে নতুন নতুন পণ্য বা সেবা নিয়ে আসছে। কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালায় না। ফলে ক্ষুদ্র সমস্যায়ও মানুষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করে। অথচ চাইলে ব্যাংকগুলোই এ সব অভিযোগ সমাধান করতে পারে। [৪] জানা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করে। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেওয়া হয়। এই বিভাগেই ব্যাংকিং সেবা সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ করা যায়। ই-মেইলের মাধ্যমে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে, মোবাইল অ্যাপ, টেলিফোন এবং ডাকযোগে- এই পাঁচ উপায়ে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
[৫] সেবা-সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য ১৬২৩৬ এই নম্বরে ফোন করে যে কেউ সমস্যা জানাতে পারেন। জানা যায়, জানুয়ারি মাসে গ্রাহকরা স্বীকৃত বিলের বিপরীতে অর্থ না পাওয়া, ঋণ ও অগ্রিম এবং সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন। এছাড়া রেমিট্যান্স, কার্ড সেবা, ব্যাংক গ্যারান্টি, কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়া, অতিরিক্ত ফি ও চার্জ, মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রটিপূর্ণ নোট বিনিময় এবং চেক সংক্রান্ত অভিযোগ করেন।
[৬] প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে জানুয়ারিতে গ্রাহকরা মোট অভিযোগ করেছেন এক হাজার ৬৮৭টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫২৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
[৭] প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহক টেলিফোনে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩৫৩টি অভিযোগ করেন, যার সবকটিই বাংলাদেশ ব্যাংক নিষ্পত্তি বা সমাধান করেছে। এছাড়া ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ এবং ডাকযোগে ১ হাজার ৩৩৪টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৭১টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে, বাকি ১৬৩টি অভিযোগ এখনও নিষ্পত্তি করা হয়নি।
[৮] গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল ১০ হাজার ৫৪২টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৮ হাজার ৬৮২টি। নিষ্পত্তির হার ছিল ৮২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
[৯] বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা মোট ৭৩ হাজার ২৪৮টি অভিযোগ করে। এর মধ্যে টেলিফোনের মাধ্যমে ২৬ হাজার ২১১টি, যার সবকয়টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া ৪৭ হাজার ৩৭টি অভিযোগ করা হয় ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ এবং ডাকযোগে, যার মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৯৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ২৪৪টি অভিযোগ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত মোট ৭৩ হাজার ৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
[১০] সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এক্সিম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক- এই তিন ব্যাংকের বিরুদ্ধে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করা হয়েছে।
[১১] জানা যায়, আদালতে বিচারাধীন মামলা, আইনগত ও অন্যান্য জটিলতার কারণে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি। তবে প্রতিটি অভিযোগই নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এদিকে গতবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭৬টি পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালানো হয়েছে আটটি পরিদর্শন।