বাজেটে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণে এনবিআর-কে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শ
সোহেল রহমান : [১] সরকার কর্তৃক শুল্ক ছাড়ের পর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১০ টাকা কমছে। নতুন মূল্য আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। [২] মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্স ও জাতীয় কমিটি’র সভায় সয়াবিন তেলের দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
[৩] সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের জানান, এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) ভোজ্যতেলের শুল্ক লিটারে ৫ টাকা কমালেও মিল-মালিক ও তেল পরিশোধনাকারীরা রমজানের আগে প্রতি লিটারে দাম ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন দর আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
[৪] প্রসঙ্গত: বর্তমানে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়। দাম কমার পর ১ মার্চ থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৬৩ টাকায় এবং খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৪৯ টাকায়। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হবে।
[৫] প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে শুধু ভোজ্যতেলের বিষয়ে কথা বলেছি এবং দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। যেহেতু তেলের সঙ্গে অনেক কিছু সম্পৃক্ত, ভোক্তা পর্যায়ে একটি স্বস্তি বাজারে আসবে এবং এতে আমাদের ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবেন। এছাড়া বাকি যে পণ্যগুলো আছে, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেগুলোর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে বলে আমরা আশা করি।
[৬] পাম অয়েল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাম তেলের দাম আপাতত কমানো হচ্ছে না। পাম অয়েল বোতল আকারে আসে না। এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে পাম আয়েলের দাম সয়াবিনের থেকে বেশি। সুতরাং এটা যদি আমরা এখন পুনর্নির্ধারণ করতে যাই সেটা ভোক্তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে যাবে।
[৭] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এছাড়া বৈঠকে আগামী বাজেটে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোর শুল্ক যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকেÑ সে বিষয়ে এনবিআর-কে অগ্রীম পরামর্শ দেয়া হয়েছে
[৮] তিনি বলেন, সভায় উপস্থিত টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধিদের বলেছি, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন, যারা বড় আকারের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী আছেন, তাদের সামাজিক একটা দায়িত্ব আছে। সবকিছু বিবেচনায় কিছুটা অযৌক্তিকভাবে আমরা উনাদের অনুরোধ করেছি এবং উনারা ভোজ্যতেলের দাম ১০ টাকা প্রতি লিটারে কমানোর জন্য একমত হয়েছেন। উনারা নিজেরাই প্রস্তাবটা করেছেন।
[৯] প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুল্ক ছাড়ে এনবিআর-এর পরিপত্রটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি জারি হয়েছে। যে কোনো পণ্যবাহী জাহাজের বিদেশ থেকে আসতে প্রায় ১ মাস লেগে যায় এবং সেটা খালাস করে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে মিনিমাম ২ মাস লাগে। দুই মাস আমাদের রমজানের নেই। ওনারা আমাদের বিশেষ অনুরোধে বাজারমূল্য ১ মার্চ থেকে কার্যকর করবেন।
[১০] তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলো আমদানিতে আরেকটু সহযোগিতা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে করে, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তারা নেবে।
[১১] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ভোজ্যতেলে শুল্ক ছাড় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর প্রতিমাসে মিলমালিকদের সঙ্গে বসে রেগুলার বেসিসে দাম পুনর্নির্ধারণ করে দেয়া হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা যদি ব্যবসা না করতে পারে তাহলে পণ্যের সরবরাহে সঙ্কট দেখা দেবে।
[১২] রমজানে পণ্য মজুত প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে, আগামী রমজানে যে পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাজারে থাকা দরকার তা মোটামুটি পর্যাপ্ত আছে। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, উৎপাদনকারী যারা আছেন তাদের সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, ওনাদের কাছে যে আমদানি করা পণ্য আছে এবং যে পরিমাণ মজুত আছে এটা রমজানের জন্য যথেষ্ট। তারপরও ভোক্তা অধিদপ্তর-এর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজারে যাব এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করব। যাতে তারা পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে পারে।
[১৩] প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, টিসিবি’র মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ আমরা শুরু করেছি। আসন্ন রমজানে আরো দুইবার এটা করব। সেখানে চাল থাকবে ৫ কেজি, তেল থাকবে, ডাল থাকবে, চিনি, খেজুর ও ছোলা থাকবে।