বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত
সোহেল রহমান : [১] বাংলাদেশে সীমিত পরিমাণ পেঁয়াজ রপ্তানির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র হাতে এসে পৌঁছুলে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আনার পদক্ষেপ নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
[২[ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাক্সফোর্স’র সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের এ কথা জানান । [৩] প্রসঙ্গত: আসন্ন রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণবিতরণ বিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে টেলিফোনে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
[৪] এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে রোজার আগেই ২০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ৫০ হাজার টন চিনি আমদানি করা সম্ভব হবে বলে গত রোববার জানিয়েছিলেন তিনি। [৫] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আমদানির জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার সে বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন আমরা অফিশিয়ালি কাগজ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আনতে পদক্ষেপ নেবো।
[৬] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় বছরে দুবার পেঁয়াজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিচ্ছে, এর ফলে আমরা আশা করছি যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালের মত এটিতেও আমাদের আমদানি-নির্ভর হতে হবে না।
[৭] এদিকে সম্প্রতি ভারতীয় ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ উঠিয়ে নেয়নি। তবে দেশটি দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। ওই খবরে আরও বলা হয়, ঠিক কী পরিমাণে পেঁয়াজ ভারত সরকার রপ্তানি করবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কবে থেকে এই রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে বিষয়েও কোন তথ্য ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়নি।
[৮] প্রসঙ্গত: ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালক-এর কার্যালয় গত বছর ৭ ডিসেম্বর তারিখে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে এর আগে গত আগস্টে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকার ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
[৯] এদিকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির বন্ধের খবরে হুট করেই বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এখন খুচরা পর্যায়ে এক কেজি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[১০] জানা যায়, ভারতীয় বড় রপ্তানিকারকেরা গত রোববার সে দেশের সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয়া যেতে পারে। ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক এলাকায় এরই মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ রুপি থেকে ১৩ রুপিতে নেমে এসেছে। রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে দেশটিতে পেঁয়াজের এই অন্যতম উৎপাদনস্থলের কৃষকেরা তা প্রত্যাহারের জন্য বিক্ষোভ করে আসছিলেন। নাসিক জেলা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতি বেশ কয়েক দফায় প্রতিবাদ কর্মসূচীও পালন করে।
[১১] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও কম খরচে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনার সুযোগ রয়েছে। মিয়ানমার সবসময় নিউজ হয় আমাদের বর্ডার এবং রোহিঙ্গা নিয়ে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমরা যেন সীমান্ত থেকে নদীপথে আনতে পারিÑ সে ধরনের একটি সমঝোতা স্মারক-এর খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, উনি এটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। আমাদের নৌ-পরিবহনমন্ত্রীকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের যে দ্বি-পাক্ষিক নৌ পরিবহন চুক্তি আছে, এর মাধ্যমে আমরা যেন মিয়ানমার থেকে সহজে পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি।