১৯৯১ সাল থেকে বাংলাভাষা আগের মতো গুরুত্ব পায় না
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ছিলো ১৯৬০ সাল থেকে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বিশ বছর বাংলা ভাষায় গবেষণা, নানা রকম জ্ঞানের চর্চা, পুস্তুক রচনার দিক দিয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছিলো। ১৯৯১ সালের আগে পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য বিশেষ মনোযোগী ছিলেন। বাংলা ভাষার একটা অগ্রযাত্রাও হয়েছিলো তখন। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাভাষা আগের মতো গুরত্ব পায় না সরকারের কাছ থেকে। একসময় বাংলা ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় অনেকটা এগিয়ে ছিলো, মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষার গুরুত্বও ছিলো। এখনো একুশে বইমেলা হয়। সরকারের ওপর একটা চাপ আছে। একুশে বইমেলাসহ বিভিন্ন কারণে এখনো বাংলা ভাষা চর্চা হয়। বাংলা ভাষায় কেবল অফিস চালালেই হবে? আমরা কি গত ৫০ বছরে একটা ভালো উপন্যাস পেয়েছি? ভালো কিছু ছোটগল্প পেয়েছি? আমাদের সেই কবি কোথায়? জাতির সৃষ্টিশীলতা দরকার বাংলা ভাষার মাধ্যমে। এই সৃষ্টিশীলতার দারুণ ঘাটতি রয়েছে।
ভাষা শহীদদের নামে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, রাস্তা-ঘাটসহ অনেক কিছুই করা হচ্ছে, বিপুল টাকা খরচ করছে সরকার। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো গাফলতি নেই। কিন্তু যে জায়গায় আমাদের শঙ্কিত হওয়ার কারণ সেটা হলোÑ বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা কোথায়? বাংলা ভাষায় কেবল অফিস চালালেই হবে? বায়ান্ন সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময়কার জাতীয় অবস্থা, আর এখনকার বৈশ্বিক পরিস্থিতি আকাশ-পাতাল বদলে গেছে। এখন আমাদের রাষ্ট্র, জাতি, সংস্কৃতি এবং ভাষার উন্নতির জন্য নতুন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে লেখকদের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা আছে বলে মনে হয় না। কারণ বাইরের প্রভাব, বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রভাবে আমাদের চিন্তা-ভাবনায় দারুণ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কিছু সরকারি বুদ্ধিজীবী তৈরি করেন। সরকারি বুদ্ধিজীবী দিয়ে দুনিয়ার কোথাও কোনোকালে সৃষ্টিশীল কাজ হয় না।
রাজনীতিবিদ, প্রশাসক, বিচারপ্রতি ও শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই তাদের ছেলে-মেয়েকে আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া বা বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতি তাদের আন্তরিক অনুরাগ নেই। জন্মগতভাবে তারা বাংলাদেশের নাগরিক বটে, কিন্তু তাদের পছন্দ অন্য দেশ। আজকের পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা, বিচার-বিবেচনা করা দরকার। লক্ষ্য স্থির করে আমাদের পুনর্গঠন করতে হবে। জাতীয় ভাষা বিকশিত ও উন্নতি করতে হবে। জাতীয় সংস্কৃতি উন্নতি করতে হবে। বিশ্বায়নের নামে এসব পরিত্যাগ করলে ভুল হবে।
উন্নত জাতিগুলোর প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তাদের উপনিবেশবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও ফ্যাসিবাদী নীতি আমাদের পরিহার করে চলতে হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ চলছে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী নীতি নিয়ে। এখানে মৌলিক পরিবর্তন দরকার। পরিবর্তন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, জাতীয়তাবাদী এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের নতুন ধারণা লাগবে। আদালতের নির্দেশ দিয়ে পৃথিবীর কোথাও ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি হয়? বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বাংলা ভাষার লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদদের। তারপরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের। কেবল শিক্ষানীতিতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শিক্ষানীতি আমরা মেনে চলবো, কিন্তু তার বাইরেও অন্তত যথার্থ শিক্ষা ছাত্রদের দেওয়ার জন্য নানাভাবে শিক্ষকদের চেষ্টা করতে হবে।
আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রকে যদি শক্তিশালী হতে হয়, উন্নতি করতে হয় এবং সমাজে মানুষের ভেতরে সুস্থ উন্নত জীবন যাত্রার প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে বাংলা ভাষার উন্নতি দরকার। এই উন্নতির জন্য অনেককিছু করার আছে। বাংলা উন্নয়ন বোর্ড যদি প্রতিষ্ঠা করা হয়, এটা অনেক কল্যাণকর হবে মানুষের জন্য। গণমাধ্যমকর্মীদের উচিত বাংলা ভাষা উন্নয়নের জন্য এই বিষয়গুলো তুলে ধরা। বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির উন্নতির জন্য বাংলা উন্নয়ন বোর্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান করা হোক। বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা দরকার। অকারণে টাকা ঢেলে কিছু হয় না, পরিকল্পনা করে খরচ করতে হবে। বাংলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিগত ১০ বছরে বাংলা একাডেমি কী কাজ করেছে? হিসাব করতে গেলে দেখা যাবে, বাংলা একাডেমি দিয়ে কাজের কাজ খুব কমই হচ্ছে।
এই যে ইংলিশ ভার্সন করেছে, এটার দ্বারা বাংলাদেশে জনমনে ধারণা হয়েছে, দেশে বাংলা ভাষার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এটি মানুষকে একটি বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে। অবিলম্বে এই ইংলিশ ভার্সন উঠিয়ে দেওয়া উচিত। ইংরেজি ভালো করে শেখার দরকার আছে। নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে শেখার ব্যবস্থা করা উচিত। ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান আমলে যে ইংরেজি পড়েছি, সেটা অবলম্বন করে আমাদের রাষ্ট্রীয়, জাতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা করতে পেরেছি। সবকিছু ইংরেজি ভার্সনে নিয়ে যেতে হবে এমন কোনো চিন্তা ছিলো না। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধারণা মানুষের মাঝে দেওয়া হয়েছে যে, বাংলার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ফলে ধীরে ধীরে মানুষ বাংলা ভাষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মানুষের এই ভুল বোধ ও ধারণা ভাঙার জন্য অবশ্যই ইংলিশ ভার্সন বিলুপ্তি করে দেওয়া দরকার। সারাদেশের মানুষকে ইংরেজি শিখতে হবে এমন নয়। ইংরেজি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে শিখতে হবে, না শিখলে আমরা ভুল করবো। গ্রাম-শহর সর্বত্র ইংরেজি শিখতে হবে এবং শিশু শ্রেণি থেকে ইংরেজি পড়াতে হবেÑ এমন মনোভাব থাকা ভালো নয়। ইংরেজির পক্ষে এখন বহু লোক হয়ে গেছে। বাংলা বাদ দেওয়ার কথা স্পষ্ট করে মুখ খুলে বলছে না, কিন্তু তাদের মধ্যে শাসকশ্রেণির সরকারি লোক এবং বিরোধী দলীয় এমন অনেক লোক আছেন।
একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা করা দরকার। বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করবে, আবার ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করবে। জার্মান ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ, একইভাবে বাংলা ভাষা থেকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করবে। বাংলা থেকে ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করবে, আবার ফরাসি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করবে। ফরাসি ভাষা অনুবাদের মাধ্যমে আমরা উন্নত জ্ঞান নেবো এবং আমাদের দেশে যেটুকু ভালো হয়, সেটুকু বাইরের জগতের কাছে তুলে ধরবো। এতে বিভিন্ন পুরাতন ভালো বইগুলোকে অনুবাদ করা হবে, যেগুলোকে ক্লাসিক বলে। চলমান সময়ে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক অনেক কার্যক্রমে অনুবাদ সংস্থ সহায়তা করবে। ইংরেজি শিক্ষা আরও পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ ও শিশু-কিশোরদের পড়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আমরা আন্দোলন করে ভাষা রক্ষা করেছি। কিন্তু রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটা তখন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো কেন? কারণ পাকিস্তান ছিলো একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্র, ১৯৪৭ সালে যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়। দুই অংশের মাঝে যে একটি ব্যবধান ছিলো, এভাবে একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্র হয় না। এই বিষয়টা তখন বাংলা ভাষার যারা প্রতিনিধি ছিলেন তাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করতেন এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোতে রাষ্ট্রভাষা কী হবে এটা নিয়ে কলকাতায় ব্রিটিশ আমলের শেষ পর্যায় থেকে আলোচনা আরম্ভ হয়। বাংলা ভাষা নিয়ে এর আগেও অনেক বিতর্ক হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে যারা নেতৃত্বে ছিলেন, তারা ছিলেন উর্দুভাষী। যেমন খাজা নাজিমুদ্দিন, সলিমুল্লাহ। তারা মুসলমান সমাজের নেতৃত্বে ছিলেন, তারাই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাইতেন। তবে জন্মসূত্রে বাঙালিরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা চাইতেন। এ নিয়ে তুমুল বিরোধ ছিলো। বাঙালিদের যুক্তি ছিলো, পাকিস্তান একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্র, উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে বাঙালিরা উন্নতি করতে পারবে না। এই ধারণা ধীরে ধীরে প্রবল হয়ে উঠেছিলো। একটা পর্যায়ে সারাদেশে সব মানুষের মাঝে এই মনোভাব দেখা যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনের সময় প্রবল হয়ে উঠে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় নেতৃত্বে আসার অনেক আগে থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়েছে। বাংলা যদি রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে না থাকে, তাহলে বাঙালিরা পিছিয়ে পড়বে। পাকিস্তানের প্রশাসন ব্যবস্থায় কাজের সুযোগ কমে যাবে। জাতীয়তাবাদী চেতনা বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছিলো। এই যে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতি বছর উদযাপন করা হয়, এর ভেতর দিয়ে বাঙালির ব্যবধান অনেক বেড়েছে। আমাদের এই ধারার নেতৃত্বে ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানদের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উন্নতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা নিয়ে জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে গিয়েছে। পরবর্তী জেনারেশন সেগুলো ঠিক সেভাবে উপলব্ধি করেনি।
আমাদের স্বাধীনতার চেতনা জন্ম নেয় কখন? আমরা যদি বিগত ১ হাজার বছরের ইতিহাস দেখি তাহলে দেখবো, বাঙালি জাতির নানান দিক থেকে অনেক গুণ আছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা ও ধর্মচর্চায়ও অনেক সুনাম ও পরিচয় আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দিক দিয়ে আমাদের একটা জাতীয় দুর্বলতা আছে। একসময় এই জাতি বিদেশিদের দ্বারা শাসিত হয়েছিলো। তুর্কি, পাঠান ও মোগল শাসকরা শাসন করেছেন। এর আগে পাল রাজারা ভারতের অন্য জায়গা থেকে এসে এখানে রাজত্ব করেছেন। পাল রাজারা অন্য জায়গা থেকে এসে প্রধানত উত্তরবঙ্গ, পশ্চিম অঞ্চলে রাজত্ব করেছেন। এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে বাঙালি শাসক ছিলেন ‘দুর্লভ’। ছিলেন না বললেই চলে। ফলে বাঙালি জাতির রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভিত্তিতে দুর্বলতার পরিচয় ফুটে উঠে।
ইংরেজ আমলে বাঙালি জাতীয় চেতনা ছিলো। কিন্তু তখন ইংরেজরা যে বিভাজন রোল পলিসি নিয়ে এগিয়েছিলো, তাতে এখানে বড় করে তুলেছে মুসলমান ও হিন্দু বিভক্তি সৃষ্টি করেছিলো ইংরেজরা তাদের শাসনের স্বার্থে। যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কংগ্রেসে, পরে গঠন করেছিলেন মুসলিম লীগ। তাদের মধ্যে নিজেদের স্বার্থ চেতনা জাতীয় চেতনা থেকে বড় হয়ে উঠে। এর ফলে ভারত বিভক্ত হয়, পাঞ্জাব বিভক্ত হয়, বাংলাও বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়, আর ভারত আলাদা হয়ে যায়। বাঙালি চেতনা ছিলো শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। কিন্তু তা যথেষ্ট বিকশিত হয়নি। রাজনীতিবিদরা এই চেতনা গ্রহণ করেননি তখন। কিন্তু পাকিস্তান হয়ে যাওয়ার পরেই পূর্ব বাংলার বাঙালিদের চেতনা বাড়তে থাকে এবং প্রবল হতে থাকে। এটা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় অস্পষ্ট ছিলো। কিন্তু তখন থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে সামনে নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা থেকে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে এসেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো আর একাই সবকিছু করেননি। তাঁর দল আওয়ামী লীগে যারা ছিলেন, পরে আলাদা হয়েছেন, মওলানা ভাসানীরা তো শত্তিশালী ছিলেন। আইয়ুব খান সরকার সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থিদের উপর। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার মনে করতো, পূর্ব-পাকিস্তানকে পশ্চিম-পাকিস্তান থেকে আলাদা করে আলাদা রাষ্ট্র করতে চান তারা। ‘আমাদের নিজেদের রাষ্ট্র চাই’Ñ এমন আকাক্সক্ষা ছাত্র-তরুণদের মধ্যেই প্রথম দেখা যায়। পরে কবি, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একই মনোভাব জন্মায়।
ষাটের দশকে ছয় দফা আন্দোলনকালে, বিশেষ করে যখন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হলো, তখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট বুঝতে পারলোÑপাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকলে আমাদের চলবে না। আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র চাই, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নÑ এ দুই সংগঠনের মধ্যে এই ধারণাটা বিকশিত হয়। প্রথমে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্র ইউনিয়ন অনেক বড় সংগঠন ছিলো, কিন্তু ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ছাত্রলীগ খুব তাড়াতাড়ি প্রসারিত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম জাতীয়তাবোধ জন্মায় যে, পাকিস্তান কোনো একটা জাতি হবে না। আমরা বাঙালি, তারা পাঞ্জাবি। হিন্দু। সবই আলাদা জাতি। এভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকশা ঘটেছে। সরকার যতোই নির্যাতন করেছে, ততোই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বেড়েছে। এটা অনেক বড় বিষয় ছিলো।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ