বাংলাদেশের কর নীতির উন্নতি
অনিক দে : বাংলাদেশ ৮ শতাংশের কম কর-জিডিপি অনুপাত বজায় রাখে। দণি এশিয়ায় দ্বিতীয়-নিম্নতম ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর থেকে প্রায় ৫ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। রাজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অফ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশের সামাজিক ইভেন্টে কর দেওয়ার একটি প্রস্তাব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কর নীতির কার্যকারিতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেখানে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া হোটেল, রেস্তোরাঁ বা কমিউনিটি সেন্টারে ব্রাইডাল শাওয়ার, জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকী সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। এই প্রস্তাবের অধীনে, আইসিএমএবি ১০০ জন উপ¯ি’তির সীমার বাইরে প্রতিটি অতিরিক্ত অতিথির জন্য ৫০ টাকা করে ট্যাক্স ধার্য করার সুপারিশ করে। এই প্রস্তাবের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণকারী জনসংখ্যার একটি ব”হত্তর অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে করের ভিত্তি প্রসারিত করা। যার ফলে সামগ্রিক কর সংগ্রহের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা হবে।
সামাজিক ইভেন্টগুলোকে ট্যাক্স করার জন্য আইসিএমএবি-এর এই প্রস্তাবটি হাস্যকর ও বিদ্রƒপাত্মক উভয়ই। এটা করের মৌলিক নীতি উপো করে। ‘দি ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিনেন্স ১৯৮৪ ও ইনকাম ট্যাক্স রুলস, ১৯৮৪’ অনুসারে আয়কর পরিশোধ করার মতার উপর ভিত্তি করে আরোপ করা হয়। ‘একজন করদাতা যতো বেশি আয় করবেন, ততো বেশি তার কর দিতে হবে’- আয়কর ধার্য করার এটাই মূল নীতি। এইভাবে, কর নির্ধারণ করা উচিত সরকার প্রদত্ত সুবিধার সঙ্গে, ব্যক্তিদের দ্বারা করা নির্বিচারে ব্যয়ে নয়। সামাজিক ইভেন্টে কর আরোপ করা শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্যভাবে রাজস্ব ব”দ্ধি করতে ব্যর্থ হবে না, বরং অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ব্যাহত করতে পারে ও ব্যয় নিরুৎসাহিত করতে পারে। বর্তমানে, বাংলাদেশে মোট ১,৩৮৩ টি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েছে। এই ধরনের কোম্পানিগুলোর লাভজনকতা উপো করা যায় না। তাদের রাজস্ব স্ট্রিমকে করযোগ্য আয়ের একটি কার্যকর উৎস হিসাবে উপ¯’াপন করে।
এনবিআরের জন্য আরও সুবিধাজনক পš’া হবে এই সং¯’াগুলোর ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন, ট্যাক্সের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য প্রণোদনা প্রদান করা রাজস্ব ব”দ্ধিতে অবদান রাখবে ও শিল্পের ¯ি’তি¯’াপকতাকে শক্তিশালী করবে। কর দাখিল করার পদ্ধতিগুলো মেনে চলার জন্য কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা ব্যক্তিগত করদাতাদের ল্য করার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। বিশেষ করে করদাতা সনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারকদের ৬৩ শতাংশ এরও বেশি করদাতা সনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারক চলতি অর্থবছরে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এনবিআরকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তার কর আদায়ের প্রচেষ্টাগুলো অসাবধানতাবশত অর্থনৈতিক প্রব”দ্ধি বাধাগ্রস্ত করে না বা উন্নয়নের চেতনাকে ম্লান করে না। এনবিআরের অ¯’ায়ী তথ্য অনুসারে, কর সংগ্রাহক চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে মোট রাজস্বে ১৬৫,৬৩০ কোটি টাকা লগ্নি করেছে। যা একই সময়ের জন্য ১৪৩,৬৪০ কোটি টাকার আইএমএফের নির্দেশিক ল্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। যদিও এই অর্জনটি রাজস্ব উৎপাদনে এনবিআরের প্রশংসনীয় প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে, সেখানে একটি ফাঁক রয়ে গেছে কারণ কর আদায়কারী তার নিজস্ব ল্যমাত্রা থেকে ২৩,২০০ কোটি টাকারও বেশি কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ল্যমাত্রা অর্জন সরকারকে ব্যাংক ঋণ কমাতে সম করবে। যা সরকারি ব্যয়ের চাহিদা আরও কার্যকরভাবে মেটাবে।
এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে দেশের রাজস্ব স্ট্রীম বাড়ানোর জন্য এনবিআরের উৎসর্গের সাী হওয়া আনন্দদায়ক। এনবিআরকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তার কর আরোপের প্রচেষ্টাগুলো অসাবধানতাবশত অর্থনৈতিক প্রব”দ্ধিতে বাধা দেয় না বা জনগণের মধ্যে উন্নয়নের চেতনাকে ম্লান করে না। রেডিমেট তৈরি পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন শিল্পের প্রচারের জন্য সমস্ত রপ্তানিকারকদের জন্য অভিন্ন করের হার কার্যকর করার সিদ্ধান্তের মতো এনবিআরকে অবশ্যই নীতি প্রণয়নে উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ফি”ল্যান্সিং ও বিবাহ পরিকল্পনার মতো খাতগুলো এনবিআরের জন্য আরও কর পাওয়ার ভালো সুযোগ দেয়। তবে কর আরোপের আগে এনবিআরকে ভাবতে হবে ট্যাক্স প্রদানকারী ফি”ল্যান্সার ও ইভেন্ট ম্যানেজারদের তারা কী সুবিধা দিতে পারে সে সম্পর্কে।
এনবিআর যদি করদাতা ও অ-করদাতাদের মধ্যে পার্থক্য দেখায় এমন অতিরিক্ত পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে, তবে শিল্প আরও বেশি কর আসতে দেখবে। এটি এই শিল্পগুলোর ব”দ্ধিকে সমর্থন করার পাশাপাশি কর রাজস্ব বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ যেহেতু বাহ্যিক তহবিলের উপর নির্ভরতা কমাতে, দেশীয় রাজস্ব উৎপাদন বাড়াতে চায়, সেহেতু ইক্যুইটি, অর্থনৈতিক প্রব”দ্ধি ও কমপ্লায়েন্সকে উন্নীত করার জন্য কর নীতিগুলো সাবধানে তৈরি করা আবশ্যক। সামাজিক ইভেন্টগুলোতে ট্যাক্স করার সাম্প্রতিক প্রস্তাবটি কর নীতি প্রণয়নে ব”হত্তর যৌক্তিকতা ও উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ব্যবসা ও ব্যক্তিদের মধ্যে কর সম্মতির জন্য প্রণোদনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশ তার সম্পূর্ণ রাজস্ব সম্ভাবনাকে আনলক করতে পারে।
লেখক : গবেষক। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন