শবে বরাতকে সামনে রেখে বেড়েছে গরু ও মুরগীর মাংসের দাম অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় হতাশ ক্রেতারা
মাসুদ মিয়া: [১] পবিত্র শবে বরাতকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। একদিন বাদে আগামীকাল রোববার পবিত্র শবে বরাত। এদিকে দুই দিনের ব্যবধানে গরুর মাংসে কেজিতে ৫০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে। শীতের ভরা মৌসুমে চড়া থাকা সবজির দাম বসন্তে এসে সামান্য কমেছে। তবে বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখনও দাম বেশি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
[২] গতকাল সকাল থেকে রাজধানীতে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অন্য দিনের তুলনায় বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সিম, মুলা, শালগম, ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রকারভেদে ১০-২০ টাকা কম। এরমধ্যে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আলুর কেজি ৩০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, পেঁপের ৪০ টাকা, টমেটো গাজার ও শসার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ও করলা ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস ও ডিমের দাম এখনও চড়া।
[৩] এদিকে, বাজারে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। ভোটের আগে প্রতি কেজির গরুর মাংস ৬০০ টাকা পর্যন্ত নামলেও ভোটের পরে তা ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আরও দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। গরুর মাংসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, রোজা ও কোরবানিকে সামনে রেখে খামারিরা গরু বিক্রি কমিয়েছে। সে জন্য বাজারে সরবরাহ কম, দাম বাড়ছে। এদিকে, গরুর মাংসের দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মতিঝিল বাজারে সেলিম নামের একজন ক্রেতা বলেন, কোন কিছুর দাম কমছে না। একবার বাড়লে সেটা আর কমে না। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর সেটা দেখার কেউ নেই।
[৫] এদিকে, বাজারে চড়া দামে আটকে আছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি বাদামি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বড় বাজারে। আর পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানির ঘোষণার পর থেকে বাজারে কমতে শুরু করেছে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। কয়েক দিন আগে যে পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে এখন কমে ১১০ টাকায় নেমেছে। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
[৬] একই সঙ্গে চড়া দামে আদা ও রসুন দুই-ই বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। গরুর মাংস ব্যবষায়ীরা বলেন, শবে বরাতের জন্য মাংসের চাহিদা বেড়েছে। বিক্রিও বেশ ভালো। পাইকাররা গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে বলে মাংসের দামও বেড়েছে। দাম বাড়লেও ক্রেতার অভাব হচ্ছে না। শবে বরাতের দিন দেখবেন মানুষ সিরিয়াল ধরে গরুর মাংস নেবে। তখন দাম আরও বাড়তে পারে। দাম বৃদ্ধির প্রায় একই অজুহাত দেখান মুরগির দোকানি জাজির। তিনি বলেন, ঈদ হোক বা রমজান, শবে বরাত হোক- যখনই চাহিদা বেশি থাকে তখনই পাইকারি দাম বেড়ে যায়। আমাদের তো নিজস্ব খামার নেই। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে এনে খুচরায় বিক্রি করি। বেশি দামে কিনে কম দামে তো বিক্রি করতে পারি না।
[৭] মিরপুর বাজারের ক্রেতা ফিরোজ বলেন, যে যেভাবে পারছে দাম বাড়িয়ে রাখছে। আমরা সাধারণ মানুষ কী করব? ব্যবসায়ীদের কথা এই দামে নিতে পারলে নিন, না হলে যান। এখন খেয়ে তো বাঁচতে হবে। এ জন্য বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। যেখানে চাহিদা দুই কেজি সেখানে এক কেজি কিনছি। মাংস খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করত তা হলে দাম নাগালের মধ্যেই থাকত। ভোক্তা অধিকার মাঝে মাঝে বাজারে অভিযান চালালেও সেটা কোনো কাজে দেয় না। কারণ তারা অভিযান শেষ করে গেলে আবার সেই আগের দামেই জিনিস বিক্রি করা হয়। [৮] সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার, কার্যকর হবে মার্চের এক তারিখ থেকে। সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম স্থীতিশীল রয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল লিটারে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭২ টাকায় এবং পামওয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। অপরিবর্তিত রয়েছে মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা,
[৯] এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, মতিঝিল বাজারে মাছ বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি করছেন ৬০০-১০০০ টাকায়। যা আগে ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্যান্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা ছিল।