মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ : বিশ্বব্যাংক রাতারাতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না, অপেক্ষা করতে হবে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : [১] অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশ যে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করছে, সেগুলো নতুন কোনো সমস্যা নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাতারাতি সম্ভব হবে না। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আল্টিমেটলি এই ক্রাইসিসটা তো ম্যানেজ করতে হবে। বিদ্যুৎসহ জ্বালানির মূল্যও সমন্বয় করতে হবে।
[২] রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কার্যালয়ে ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) অ্যানা বেজার্ড-এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। [৩] প্রসঙ্গত: অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন। তবে একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাসও দেন তিনি।
[৪] অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ তার সমস্যাগুলো যেভাবে মোকাবেলা করছে, সেটার প্রশংসা করেছেন তারা। এ নিয়ে সন্দেহের কিছু নাই। অন্যান্যের মধ্যে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের এমডি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করলে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তাকে নিরুৎসাহিত করেন।
[৫] অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চায় না, তাদের (বিএনপি) সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করতে চান, তাদের সঙ্গে তারা কথা বলতে চান। এদের বিষয়ে আমি ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে কিছু কথা বলেছি যে,
[৬] বেগম জিয়া যে কমেন্ট করেছিলেনÑ সেটা যে কত বড় বাতুলতা। উনি বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে পদ্মা সেতু তৈরি করেছে, এটা তো জোড়াতালি দিয়ে করেছে, যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন যে, আপনারা উঠবেন না, কারণ এটা ভেঙ্গে পড়তে পারে। কাজেই এটা একজন নেত্রী, যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তার এত বড় দল, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তিনি দাবি করেন। তার মুখ থেকে এ ধরনের কথা আমরা আশা করি নাই। বিশেষ করে এটা তিনি বুঝেনই না যে, এই ব্রিজ কীভাবে তৈরি হয়েছে।
[৭] প্রসঙ্গক্রমে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৭ সালে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঠাকুরগাঁও গিয়েছিলাম। এর দু’দিন আগে বিএনপি মহাসচিব একটা কমেন্ট করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো উন্নয়ন হয়েছে নাকি! আমি তো কিছু দেখি না। যাদের উন্নয়ন সম্পর্কে এমন ধারণা, তারা কী করবে? তারাতো কিছু করতে পারেনি। আমি তখন বলেছিলাম, আপনাদের কিন্তু চোখ খারাপ হয়ে গেছে। আপনারা তাড়াতাড়ি চোখের ডাক্তারকে দেখান। আর খুব দামি চশমা কিনে দেন যাতে সব পরিষ্কার দেখতে পান। উন্নয়ন হচ্ছেÑ আপনার যদি চশমাটা ঠিক থাকে, তাহলে তো দেখতে পাবেন। আর চশমা যদি ঠিক না থাকে, তাহলে তো কিছু করার নাই। ভালো ডাক্তার দিয়ে আপনার চোখটা পরীক্ষা করান এবং চশমা নিন। তাহলে সবই চোখে পরিষ্কার দেখতে পাবেন।
[৮] তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মেট্রোরেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ওই অঞ্চলে (উত্তরা, মিরপুর) যারা থাকেন- এসব এলাকার মানুষের যে কী উচ্ছ্বাস, আনন্দ, উল্লাস। নারীরা মেট্রোরেলে উঠে স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তি এবং আনন্দ। যতগুলো মেগা প্রজেক্ট হয়েছে সবই শেখ হাসিনার সরকারের আমলে। অথচ এই মেগা প্রকল্প সম্পর্কে অনেক কথা বলেছে বিএনপি। কিন্তু মানুষ কত উপকৃত হয়েছে এবং কত খুশি হয়েছেÑ এটা আমি তাদের বলেছি। মেগা প্রকল্প করবো কি করবো না। করলে কী হবে, শুধু ক্রিটিসিজম করলে তো কোনো লাভ হবে না। এগুলো শেখ হাসিনা বানিয়েছেন ঠিক কথা। কিন্তু বানিয়েছেন তো একটা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, একটা চিন্তা নিয়ে। বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, জনগণ এটা গ্রহণ করেছে।
[৯] বৈঠকে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারসহ সংস্থাটির ঢাকা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।