চলমান ইজরাইল ও ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন আদৌ কি কোন চাপ তৈরি করবে?
সায়েমা খাতুন
দুদিন আগে বাচ্চাদের একটা কাজে ছোটোদের জন্যে লেখা আমেরিকার সংবিধান রচনার ইতিহাস একটু দেখতে হল। হঠাৎ নজরে আসলো, সেই সময় ব্রিটিশ শাসননীতির বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউরোপীয় সেটেলাররা, যাদের বলা হয় “কলনিস্ট”, যখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতৈক্য তৈরি করছিলো, তখন সেই যুগের শাদা আমেরিকানরা ব্রিটিশ পণ্য বয়কট করেছিল।
১৭৬৭ সালের নভেম্বরের ২০ তারিখে যখন গ্লাস, কাগজ, সীসা, রং এবং চা প্রভৃতি পণ্যের উপর করারোপ করা হল, তার আগে থেকেই উচ্চমূল্য এড়াতে সামাজিকভাবে “পণ্য ভোগ বর্জন” আন্দোলন চলছিল। ঠিক এমনই সময় ঞড়হিংযবহফ অপঃং জারী হওয়ার ফলে সেটা একটি রাজনৈতিক রূপ নিয়ে পণ্য বয়কট আন্দোলনে পরিণত হল। একদিকে আমেরিকার জনগণের পকেটের পয়সা বাঁচল, অন্যদিকে ব্রিটেনকে কর প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি করা গেলো। এর প্রায় ৭ বছরের মধ্যে বয়কট আন্দোলন এমনভাবে সংগঠিত হল যে, ১৭৭৪ সালের ডিসেম্বর ১ তারিখে সকল ব্রিটিশ পণ্য বয়কটের জন্যে কন্টিনেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটা সংগঠনই সৃষ্টি হয়ে গেলো। এর পরে ধাপে ধাপে আমেরিকার স্বাধীনতার সংবিধান রচনা এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস প্রতিটা বাচ্চাই জানে।
আমার নজর আটকাল “বয়কট” শব্দটাতে। মনে পড়লো, কি আশ্চর্য, ব্রিটিশদের ভারত ছাড়া করানোর জন্যে আমাদের দাদা-পরদাদাদেরও ব্রিটিশ পণ্য বয়কট আন্দোলন করতে হয়েছিলো এবং স্বদেশী পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিলোঃ
“মায়ের দেয়া মোটা কাপড়
মাথায় তুলে নেরে ভাই!
দীন- দুঃখিনী মা যে তোদের,
এর বেশী আর সাধ্য নাই।”
ছোটবেলায় শেখা এই গানটাও মনে পড়লো। এই গানটা গেয়ে গেয়ে আমারই পূর্ব-পুরুষেরা ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্যে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়ে ছিলেন। এই গানটা শুনলে কেন চোখে পানি আসে জানিনা। এই কঠিন প্রতিজ্ঞা যারা করেছিলেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে আসে। আমেরিকানদের বয়কটের দেড়শতেরও বেশী বছর পরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও বিপ্লবী সংগ্রামী জনতা একই কৌশল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। সেটা খুবই কার্যকর অহিংস একটা পদ্ধতি ছিল।
পুঁজিবাদী উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যাবস্থার জুলুমের বিরুদ্ধে ইউঝ (ইড়ুপড়ঃ, উরাবংঃ, ঝধহপঃরড়হ) সড়াবসবহঃ দেশে দেশে স্বাধীনতাকামীদের একটা শত বছরের পরীক্ষিত কৌশল। ঘরে ঘরে সম্পূর্ণভাবে যদি রিলিজিয়াসলি এই বয়কট করা যায়, তার শক্তি জুলুমের কেন্দ্রগুলোকে নিশ্চিত ভাবেই ফাটল ধরাবে। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা!
লেখক : জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক( ফেসবুক থেকে