অর্থবছরের সাত মাসে ৭২০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি চার গুণ বেড়েছে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি, বেড়েছে সুদসহ ঋণ পরিশোধ
সোহেল রহমান : [১] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ৭২০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। প্রতিশ্রুতির এই পরিমাণ চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার (৬০০ কোটি ডলার) চেয়ে বেশি এবং আগের অর্থবছরের তুলনায় এর পরিমাণ প্রায় চার গুণ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে কেবল ১৭৬ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। [২] অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা যায়, ৭২০ কোটি ডলারের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬২ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এরপর ২০২ কোটি ডলার দেবে জাপান এবং বিশ্বব্যাংক দেবে ১৪২ কোটি ডলার। অবশিষ্ট ১১৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে অন্যান্য ঋণদাতাদের কাছ থেকে।
[৩] অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং সেই অর্থ দ্রুত ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল অর্থনীতিতে আসবে।
[৪] তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বৈদেশিক তহবিল ব্যবহারও উদ্বেগের বিষয়। কারণ চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ১২৪ কোটি ডলার ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাত মাসে মাত্র ৪০৪ কোটি ডলার ব্যবহার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এমতাবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে ৬৮৪ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। তবে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে পাঁচ মাসের মধ্যে এই অর্থ ব্যয় করা কঠিন হতে পারে। [৫] অর্থ মন্ত্রণালয়র সূত্র মতে, চলতি বছরের গত জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যবহৃত বিদেশি তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে। গত বছরের জুন পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৭৬ কোটি ডলার।
[৬] ইআরডি সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ও ঋণের অর্থছাড় যেমন বেড়েছে, তেমনি একইসঙ্গে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধে বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। শুধু জানুয়ারি মাসেই বৈদেশিক ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি খরচ হয়েছে পরিশোধে।
[৭] জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। আর গত জানুয়ারি মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আর পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।
[৮] সম্প্রতি প্রকাশিত ইআরডি’র প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে উন্নয়ন সহায়তা প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৩০৬.১ শতাংশ, ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে ৩.২৬ শতাংশ। একইসঙ্গে সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৪৪.৫২ শতাংশ। [৯] ইআরডি’র তথ্য অনুসারে, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে শুধু সুদের অর্থ পরিশোধ বেড়েছে ১০৭.৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদ পরিশোধের জন্য ৭৬ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার ছাড় করা হয়েছে। এ সময়ে সরকার বিভিন্ন ঋণের আসলের ১০৯ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে।