ঝামেলামুক্ত পরিষেবা ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব বৃদ্ধি
জাহিদ হোসেন
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ সরকারের জন্য কর বহির্ভূত রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের এই আর্থিক এবং অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকগুলো অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিপরীতে লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমর্থন করার জন্য তাদের জন্য বাজেট থেকে মূলধন সহায়তা ও ভর্তুকি বরাদ্দ করা দরকার। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব অধরা থেকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকই একমাত্র সত্ত্বা হিসেবে সরকারকে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য লভ্যাংশ প্রদান করে। তবে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ তুলনামূলকভাবে উল্লেখযোগ্য নয়।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক মূলধন সংকটে ভুগছে। এই ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংকের মতো সংগ্রামী সংস্থাগুলোকে মূলধন সরবরাহ করছে। যদি এই জাতীয় নীতিগুলো অব্যাহত থাকে তাহলে অদক্ষতা ও অনিয়মের সমস্যাগুলো সমাধান না করা হয় তবে বাণিজ্যিক উদ্যোগগুলো থেকে উৎপন্ন রাজস্ব সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে না। সরকার বিভিন্ন পরিষেবার উপর আরোপিত ফি এর মাধ্যমে কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায় করে। এই ফি-গুলো একটি নির্দিষ্ট সূত্র বা প্রক্রিয়া মেনে না নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। কখনও কখনও যখন সেগুলোকে অতিরিক্ত হিসাবে বিবেচনা করা হয় তখন জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ব্যবসার মালিকরা বেশ কিছুদিন ধরে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে ও সরকার প্রায়ই এই ধরনের জনসাধারণের দাবির প্রতিক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। অতএব, একটি পূর্বনির্ধারিত সূত্র অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এই ফি-গুলো সামঞ্জস্য করা প্রয়োজন।
সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্তের কারণে কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায় হ্রাস পাচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি সহ অন্যান্য অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেও একই রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই যদি এসব সেবা সুষ্ঠুভাবে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতো, তাহলে সেবার ফি বাড়ানো হলেও মানুষ তা গ্রহণ করতে রাজি হবে। বাংলাদেশে কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও অনিয়ম দূর করে ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা অপরিহার্য। একইভাবে, কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই জনসেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
লেখক: সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস।
অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড