আর্থিক প্রযুক্তির যুগ, প্রচলিত ব্যাংকিং ও ন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন স্ট্র্যাটেজি
সৈয়দ ফাত্তাহুল আলিম : একসময় সমাজের সুবিধাভোগী কিছু লোকই বাড়িতে একটি টেলিফোন সেট কিনতে পারতো। একটি ফিক্সড লাইন টেলিফোন সংযোগ থাকা তখন সামাজিক মর্যাদার চিহ্ন ছিলো। কিন্তু মোবাইল টেলিফোনের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনের যে এক্সক্লুসিভিটি ইমেজটি একবার উপভোগ করতো তা চলে গেছে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনজীবনে এই ডিজিটাল ডিভাইসের গুরুত্ব বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এখন এটি বোবা পুরনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নয়, যা দিয়ে মানুষ অতীতে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে পারতো। এক দশক আগে দেশে চালু হওয়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিবেচনা করুন।
একটি অনলাইন এমএফএস-এর সঙ্গে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে, একজন ব্যক্তি এখন টাকা পাঠাতে, বিল পরিশোধ করতে ও তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য ফাংশনগুলো সম্পাদন করতে পারে। যা আগেকার সময়ে সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ ছিলো। একটি অনুমান অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশে বিভিন্ন এমএফএস প্রদানকারীর সঙ্গে ২১৭.৭ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ছিলো, যেখানে আগের বছরের (২০২২) একই মাসে এই সংখ্যা ছিলো ১৮৭.৫ মিলিয়ন। অন্য কথায়, বৃদ্ধি ছিলো ১৬ শতাংশ। পরিসংখ্যানগুলো কারও কারও কাছে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হতে পারে কারণ উভয় ক্ষেত্রেই উল্লিখিত মোবাইল মানি অ্যাকাউন্টধারীদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এটি এই কারণে যে একজন ব্যক্তির সাধারণত এই এমএফএস প্রদানকারীদের সঙ্গে একাধিক একাউন্ট থাকতে পারে।
দ্য গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের একটি বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্ম জানায় যে, ২০২২ সালে মোট মোবাইল মানি একাউন্টের সংখ্যা ছিলো ১.৬ বিলিয়ন যা আগের বছরের তুলনায় (২০২১), ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই বছরে বাংলাদেশে মোবাইল মানি একাউন্টধারীর সংখ্যা ১২.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট একাউন্টধারীর সংখ্যা ১৯১ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান প্রবৃদ্ধির এই হারের পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ শীঘ্রই মোবাইল ব্যাংকিং ক্লায়েন্টশিপের বৈশ্বিক গড়কে ধরবে। প্রত্যাশিত হিসাবে, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে (২০২৩) মোবাইল মানি একাউন্টের মাধ্যমে ৩৬.৪৬ বিলিয়ন টাকা লেনদেন হয়েছে। ডিসেম্বরের (২০২৩) শেষ নাগাদ লেনদেনের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১২৪৫.৪৮ বিলিয়ন ডলারে।
বিল পরিশোধ, অনলাইনে পণ্য ক্রয়, অন্যান্য একাধিক কার্য সম্পাদনের জন্য অর্থ সঞ্চয় ও স্থানান্তর করার জন্য এমএফএস-এর ব্যবহারের এই বৃদ্ধি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে দেশটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কতো দ্রুত আর্থিক প্রযুক্তির (ফিনটেক) যুগে প্রবেশ করছে। এখন যে কেউ একটি মোবাইল টেলিফোন সেটের মালিক হতে পারে। তাদের হ্যান্ডসেটের কিছু বোতামে ক্লিক করে একটি এমএফএস প্রদানকারীর সঙ্গে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ও তারপরে আর্থিক লেনদেন করার জন্য এটি পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং শুরু করতে পারে। এটি স্পষ্টতই শ্রেণী বা লিঙ্গ পক্ষপাত ছাড়াই একটি সিস্টেম। সেই অর্থে মোবাইল ব্যাংকিং চরিত্রগতভাবে প্রকৃত।
এটি প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহারকারী-বান্ধব। সরকারের ন্যাশনাল
ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন স্ট্র্যাটেজি ২০২১-২৬ চালু করা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচার ও দেশের আর্থিক খাতে ব্যাংকবিহীন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে মোবাইল ব্যাংকিং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের বর্ধিত অংশগ্রহণকে সহজতর করছে। জনসাধারণের সহজ নাগালের মধ্যে ফিনটেকের মাধ্যমে এটি প্রত্যাশিত যে, বিশ্ব অর্থনীতির (জুন ২০২৩) রিপোর্ট অনুসারে, দেশের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি ৩২৪ বিলিয়ন ডলার। যা সমগ্র অর্থনীতির ৩০.২ শতাংশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি অর্থনীতিতে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ংভধষরস.ফং@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস