পরোক্ষ কর দেশের দারিদ্র্যের হারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে
সোহেল রহমান : [১] পরোক্ষ কর দেশের দারিদ্র্যের হারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, এ কারণে দারিদ্রতা প্রত্যাশিত মাত্রায় কমছে না। পরোক্ষ করের বোঝা এক শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়লে দারিদ্র্য বাড়ে ০.৪২ শতাংশ। গত ২০০০ সালে দারিদ্র্যসীমার নীচের পরিবারগুলোর ওপর পরোক্ষ করের বোঝা ছিল ২ শতাংশ; ২০১৬ সালে এটি বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা পরিবারগুলোর এ বোঝা কম।
[২] বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র?্যাপিড) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই গবেষণার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়।
[৩] সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব আদায়ের দুই-তৃতীয়াংশই এখনও আসে মূল সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আমদানি করের মতো পরোক্ষ কর থেকে। আর এর চাপ ধনী-গরীব সবার ওপরেই পড়ে।
[৪] এদিকে সরকারি হিসাবে, দেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমেই কমছে।
[৫] এ প্রসঙ্গে র্যাপিড-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, যদি পরোক্ষ কর কম থাকত প্রত্যক্ষ করের তুলনায়, তাহলে দারিদ্র্য আরও বেশি হারে কমত। অর্থাৎ বাড়তি পরোক্ষ করের কারণে দারিদ্র্য প্রত্যাশিত হারে কমেনি।
[৬] হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস)-এর তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জরিপ অনুসারে, গত দুই দশকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য অর্ধেকেরও বেশি কমে এখন ২০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে।
[৭] সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সরকারের উচিৎ ১০-১৫ বছরব্যাপী ধাপে ধাপে কর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া। সেইসঙ্গে করভিত্তি সম্প্রসারণ এবং কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং ট্যাক্স কমপ্ল্যায়েন্স বাড়ানোর জন্য প্রথাগত পদ্ধতি থেকে সরে এসে আরও ব্যবহারকারীবান্ধব ও অটোমেটেড প্রযুক্তি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ট্যাক্স নোটিফিকেশন ও রিমাইন্ডারের জন্য উন্নত সিস্টেমে বিনিয়োগ করা উচিত বলে সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ কর আদায়ের প্রক্রিয়া অটোমেটেড হলে দক্ষতা বাড়ে এবং ত্রুটি কমে আসে।
[৮] প্রসঙ্গত: প্রত্যক্ষ কর হচ্ছেÑ যার আয় যত বেশি, তিনি তত বেশি কর দেবেন। বর্তমানে কোনো ব্যক্তির বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে তিনি আয়করমুক্ত থাকেন। এর অর্থ হলো, যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছেন, তাদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করা হয় না।
[৯] অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যে যে কর পরিশোধ করা হয় বা স্থানীয়ভাবে বাজারে পণ্য বিক্রির সময় যে ভ্যাট ধার্য করা আছে, তা সব ক্রেতার ওপর বর্তায়। দরিদ্র ব্যক্তিদেরও ওই পণ্য কিনতে হলে ভ্যাট দিতে হয়। আবার আমদানিতে পরিশোধ করা কর পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়।