আতঙ্কের কিছু নেই : বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক একীভূত করতে মালিকরা বাধ্য : বিএবি চেয়ারম্যান
মো. আখতারুজ্জামান : [১] জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক একীভূত করতে ব্যাংক মালিকরা বাধ্য বলে জানিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
[২] সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
[৩] বিএবি চেয়ারম্যান বলেন, মার্জার নিয়ে সুন্দর কথা হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া মালয়েশিয়া বা ইউরোপ প্রত্যেকটা প্রত্যেক দেশেই এই মার্জারটা হয়। কোনো কোনো ব্যাংক যে কোনো কারণে খারাপ হয়ে যেতে পারে। এটা সারা পৃথিবীতে হয়। আমেরিকাতেও হয়েছে। আমাদের এখানেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক খারাপ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকই ভালো আছে।
[৪] তিনি বলেন, ভালো ব্যাংকগুলোর সাথে খারাপ ব্যাংকগুলোকে একত্রিকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি জাতীয় স্বার্থে যে কোনো কাজ করতে আমরা বাধ্য এবং আমরা করবো। জনগণের ব্যাংক। একত্রীকরণ হলে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। আমরা তো শেয়ারহোল্ডারস। আমরা এখানে আজীবন চেয়ারম্যান বা দায়িত্বে থাকবো না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে। জনস্বার্থে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিবে সেই সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত। আমাদের কোনো আপত্তি নাই।
[৫] সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রক্রিয়া তো আমার বলতে পারবো না। এটা গভর্নর বলতে পারবেন। তারা হোমওয়ার্ক করবে। আমরা আপনাদের কাছে শুনতেছি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এই ধরনের পলিসি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এজন্য আমরা গভর্নরের সাথে দেখা করেছি। দেখা করে আমরা উত্তর পেয়ে গেছি। গভর্নর আমাদের বললেন, আমরা মার্জার শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা হয়তো এটা এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পারবো। যেগুলো ব্যাংক দুর্বল হয়ে গেছে, খারাপ নয়, ওই ব্যাংকগুলো সবল ব্যাংকের সাথে মিলানের চেষ্টা করছি। যাতে কারো কোনো ক্ষতি না হয়।
[৬] আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাংক নিয়ে আমাদের কথা হয়নি। কোন ব্যাংক খারাপ কি ভালো এসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বেশিরভাগ ব্যাংকই ভালো আছে। গভর্নর এবং অডিট কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে এতে করে দেখা যায় মোটামুটি ৯০ ভাগ ব্যাংকই আমাদের ভালো আছে। হয়তো ১০ ভাগ খারাপ আছে। এটা থাকতেই পারে। সারা ওয়াল্ডেই তা আছে। এটা ভালো ব্যাংকের সাথে একত্রিত হতে পারে। এতে কোনো ক্ষতি হবে না। কি ফর্মুলায় হবে তা এখনও কোনোকিছু ঠিক হয়নাই।
[৭] এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মোটেই কোনো উদ্বেগের মধ্যে নাই। ব্যাংক একত্রীকরণ হলে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। সরকার জনগণের স্বার্থে যে কাজই করবে আমরা সমর্থন করবো।
[৮] বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে ব্যাংক একীভূত হয়, এদেশেও সেভাবেই হবে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোসহ সুশাসন নিশ্চিতে ১১টি কর্ম পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় সূচকে দ্রুত সংশোধনের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হলে তাদের মার্জার বা অ্যাকুইজিশনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
[৯] মেজবাউল জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলো শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে।
[১০] ২০১৩ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই ঋণ অনিয়ম-জালিয়াতিতে ডুবে যায় ফার্মার্স ব্যাংক। ভোগান্তিতে পড়েন আমানতকারীরা। ২০১৮ সালে চারটি সরকারি ব্যাংক ও আইসিবি ব্যাংকটির বড় অংশ অধিগ্রহণের পর পদ্মা নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করলেও সুফল মেলেনি। এরপর ব্যাংকখাতে ঋণ অনিয়মের একের পর এক ঘটনা সামনে আসে। খেলাপী ও বেনামী ঋণে ১ ডজনের বেশি ব্যাংক চরম তারল্য সংকট পড়ে। এর জেরে দেশের ব্যাংকখাতে খেলাপী ঋণ ছাড়ায় দেড় লাখ কোটি টাকা। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা বলছে, এদেশের ব্যাংকখাতে বড় ধরনের সংস্কার জরুরি।
[১১] সম্প্রতি নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনে একীভূত এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরইমধ্যে ব্যাংকগুলোকে প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশনের (পিএসএ) জন্য ইউনিট খুলতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
[১২] দেশের ১৫ থেকে ২০ টি ব্যাংক আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় আছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। তাই মার্জার, অ্যাকুইজিশন বা লিকুইডিশন প্রক্রিয়ায়, আমানতের অর্থ ফেরাতে বড় অংকের অর্থের সংস্থান করতে হবে সরকারকে।