ব্যবসা-বাণিজ্য প্রচার-প্রসারে কূটনৈতিক মিশন কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে?
মীর মোস্তাফিজুর রহমান : কূটনৈতিক কার্যক্রমের সূচনার পর থেকে কূটনীতিকদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে মিশরের মতো দেশে দূতদের পাঠানো হতো শস্য আমদানি নিরাপদ করার জন্য। ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালের মতো ঔপনিবেশিক শক্তি ১৬ শতক থেকে বাণিজ্যের সুযোগ অন্বেষণের জন্য উপমহাদেশে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো কূটনৈতিক অঙ্গনে আরও জোরালোভাবে ও বর্তমান বিশ্বে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেহেতু বাংলাদেশ তার এলডিসি মর্যাদা হারাতে চলেছে, তাই এটি অনেক গন্তব্যে অগ্রাধিকারমূলক, শুল্কমুক্ত বাজারের প্রবেশাধিকার হারাবে ও এই প্রেক্ষাপটে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কূটনীতিকদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ৬০টি কাউন্টিতে ৮১টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে যার অনেকেরই বাণিজ্যিক শাখা রয়েছে। বলা বাহুল্য, সরকারকে এই মিশনগুলো চালাতে বিপুল পরিমাণ করদাতাদের অর্থ ব্যয় করতে হয় তবে অনেকে প্রায়শই এতো অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অনেক উদ্যোক্তা প্রকাশ্যে দেশের বাণিজ্য ও ব্যবসার প্রচারে বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত আমাদের লোকদের গাম্ভীর্যের অভাবের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক শাখা তাদের পরিষেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ঋণ২০২২-২৩, লন্ডন, টোকিও, ব্রাসেলস, জেনেভা, অটোয়া, মাদ্রিদ ও ক্যানবেরা ভালো পারফর্ম করেছে। একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, পরিষেবার মাধ্যমে রপ্তানি ১.৪৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ করেছে ঋণ’২৩ সালে বাণিজ্যিক শাখা ছাড়া মিশনগুলো দ্বারা। পরিষেবাগুলোতে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি আয় হংকং, হেগ, রিয়াদ ও স্টকহোম থেকে ছিলো। হংকংয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক শাখা ২০২২-২৩ অর্থবছরে সকল দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। বিদেশি মিশনগুলো বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার অন্বেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার হলো ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সমস্ত চালানের শতকরা অংশই গার্মেন্টস আইটেম নিয়ে গঠিত। সুতরাং, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলো অন্বেষণ করার জন্য গুরুতর প্রচেষ্টা করা উচিত, যেখানে রপ্তানির মাত্রা খুবই কম।
রপ্তানি ঝুড়ির বৈচিত্র্যের বিষয়েও একই কথা বলা যেতে পারে, যা ব্যাপকভাবে আরএমজির উপর নির্ভরশীল। বিদেশে আমাদের মিশনগুলোকে কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া, পাট, সংশ্লিষ্ট পণ্য, ওষুধ ও আইসিটি পণ্যের বাজার অন্বেষণ করা উচিত, যার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্নাতক হতে চলেছে, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিস্থাপক করতে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনা অপরিহার্য। রপ্তানিযোগ্য পণ্য থাকা সত্ত্বেও, সঠিক ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিংয়ের অভাবের কারণে দেশটি বাজার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকেই এই ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়ের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন। সরকারকে নিশ্চিত করা উচিত যে আমাদের বিদেশি মিশনে সমস্ত কূটনৈতিক কর্মকর্তারা দেশের ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতে ফোকাস করছেন। বিশ্ব, অর্থনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নির্ধারক উপাদান হয়ে উঠেছে ও প্রায়শই দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সম্পর্ক অর্থনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে গঠন করা হয়। একই সময়ে, কূটনীতিকদের পোস্ট করা দেশগুলোর বাজার সম্পর্কে আপডেট করা প্রয়োজন। যেমন বিকল্প বাজার অন্বেষণের কৌশল প্রণয়নে তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একই সঙ্গে, কূটনীতিকদের অভিবাসন ইস্যুতে সংবেদনশীল হতে হবে ও হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ সেবা প্রদানে দক্ষ হতে হবে।
সরৎসড়ংঃধভরু@ুধযড়ড়.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস