টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদন বিআরটিএ-কে ঘুষ দেয় ৫৩ শতাংশ বাস সড়কে দলীয় পরিচয়ে চলে চাঁদাবাজি
সোহেল রহমান : [১] যানবাহন নিবন্ধন ও সনদ হালনাগাদ করতে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ যাত্রীবাহী বাস বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-কে ঘুস দেয়। বাসপ্রতি মাসিক ১৭ হাজার ৬১৯ টাকা ঘুস নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় করে বিআরটিএ। এভাবে বছরে ৯০০ কোটি টাকা ঘুস আদায় করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজি, বিআরটিএ’র অনিয়ম ও শ্রমিক সংগঠনগুলো পরিবহন খাত থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা আদায় করছে।
[২] মঙ্গলবার ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষক মুহা. নূরুজ্জামান ফারহাদ, ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
[৩] প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে জানানো হয়, ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩২টি জেলার বাস কর্মী, শ্রমিক, মালিক ও যাত্রীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে ৩২ জেলার ৫১টি বাস টার্মিনাল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং ৬৯৬ জন যাত্রী, ৭০১ জন বাস কর্মী ও ১৬৮ জন বাস মালিকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।
[৪] গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের পুরো পরিবহন খাত কতিপয় কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দেশের বৃহৎ বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশ পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতিবিদেরা সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। শুদ্ধাচারের ঘাটতি থাকায় শ্রমিকরা অবহেলিত ও যাত্রীরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত।
[৫] টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মালিক-শ্রমিক আঁতাতের কাছে সরকার তুলনামূলকভাবে ক্ষমতাহীন। সরকারি আইনে সবচেয়ে বড় বাধা এই মালিক-শ্রমিক আঁতাত। তারাই সরকারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান, এ কারণে যাত্রীরা প্রত্যাশিত সেবা পায় না।
[৬] গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রীদের ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন। আন্তঃজেলা দূরপাল্লার বাসগুলোকে বার্ষিক ১ হাজার ১৯ টাকা, সিটি সার্ভিসগুলোকে পাঁচ হাজার ৬৫৬ টাকা ও আন্তঃজেলা আঞ্চলিক বাসগুলোকে ১ হাজার ১৩৩ টাকা ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে ঘুস হিসেবে দিতে হয়। পাশাপাশি টার্মিনালে বাস রাখতে বাসপ্রতি দৈনিক ১০৫ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
[৭] এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সুষ্ঠু প্রয়োগসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।
[৮] ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চাঁদাবাজির এ হিসাব খুবই রক্ষণশীল। বাস্তবে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি চাঁদাবাজি হয়। এই চাঁদার ভাগ নানা পর্যায়ে যায়। যেহেতু খাতটি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে, ফলে চাঁদার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে।
[৯] তিনি বলেন, অনুমান করা যায় বিআরটিএ-তে যে ঘুস নেয়া হয়, তা সংস্থাটির কর্মকর্তাদের একাংশ পেয়ে থাকে। যেহেতু বিআরটিএকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেহেতু এর অংশীদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
[১০] বিআরটিএ’র ঘুস লেনদেন মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, এখানে একটু গণতন্ত্র বিরাজ করছে, ভাগাভাগি হচ্ছে। পার্টিকুলার কোথায় যাচ্ছে সেটা বলা যাবে না। দলীয় পরিচয়ে সড়কে চাঁদাবাজি হচ্ছে। ট্রাফিক হাইওয়ে পুলিশ, সিটি করপোরেশনে অনিয়ম হচ্ছে। বিআরটিএ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।