বাংলাদেশের দেউলিয়া হওয়ার কোন কারণ নাই
ওয়াসি মাহীন
ব্যাক্তি দেউলিয়া হওয়া আর দেশের দেউলিয়া হওয়া এক রকম নয়। একটা দেশ প্রকৃত অর্থে দেউলিয়া হয়না। সাধারনত কোন দেশ ঋণের কিস্তি বা বন্ড পেমেন্ট করতে ব্যার্থ হলে দেশটিকে দেউলিয়া বলা হয়। দেউলিয়া হলে সাধারণত আউটস্টান্ডিং লোন পুন:তফসিল করা যেতে পারে। আবার আইএমএফ এর কাছ থেকে জামিন নেয়া মানে বেইল আউট প্যাকেজ নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আইএমএফ এর কঠিন শর্ত মানতে হয়। এখানে একটি ধারনা পরিস্কার করি। আইএমএফ এর ঋণ মানেই বেইল আউট নয়। ফিসক্যাল ডেফিসিট, মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ, বাফার রিজার্ভ সহ অনেক কারনে আইএমএফ ঋণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ আইএমএফ এর কাছ থেকে ২০২০ সালে কোভিড মোকাবেলায় ৭৩২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়। এর আগে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল ২০১২ সালে।
যাহোক এবার আসি আমরা দেউলিয়া কিভাবে হব সে প্রসঙ্গে। প্রথমত একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণ ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে দেশটিকে ততটা বেগ পেতে হয়না যতটা বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে পেতে হয়। ঋণ শোধ করতে না পারা প্রেস্টিজ ইস্যু। সরাসরি সভেরেইন রেটিং এ প্রভাব ফেলে। একবার কোন দেশ ঋণ পরিশোধে ব্যার্থ হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশটির জন্য প্রায় সব উৎস থেকে ঋণ পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অথবা ঋণ পেলেও কঠিন শর্তে, উচ্চ সুদে সল্প মেয়াদে ঋণ মেলে। এজন্য কোন দেশ চায় না এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে।
শ্রীলংকা যেভাবে শ্রীলংকা হয়েছে তার জন্য অন্যতম কারণ ছিল তাদের সামর্থের বাইরে জীবন যাপন। ঋণ করে ঋণ শোধ করা। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে বন্ড গুলির ম্যাচিউরিটি ও উচ্চ সুদে মার্কেট বরোয়িং। ঋণ করে ঋণ শোধ করার সমস্যা হল, যদি কখনো নতুন ঋন পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তখন আগের ঋণগুলি পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকেনা।
ব্যক্তি পর্যায়ে উদাহরণ দেয়া যাক। অনেক পরিচিত মানুষকে দেখবেন ৩-৪ টা ক্রেডিট কার্ড। একটার থেকে টাকা তুলে আরেকটার বিল শোধ করে। যখন সব কিছু কঠিন হয়ে যায় তখন নতুন কার্ড বা লোনের জন্য চেষ্টা করে। এটাকে বলা যায় দারিদ্রের দুষ্টচক্র। সামর্থ্যের বাইরে জীবন যাপন উচিত নয়। আয় বুঝে ব্যয় করা উচিত।
বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে যেহেতু ডলারে পেমেন্ট করতে হয় তাই ঋণ গ্রহণে সতর্কতা ও যৌক্তিকতা দুটিই থাকতে হবে।
দেউলিয়া নিয়ে আলোচনার আগে জানতে হবে একটা দেশের ডলার উপার্জনের উপায় কি কি?
১. প্রধান উপায় হল, রপ্তানি। রপ্তানি আবার মোটা দাগে তিন ধরনের। পণ্য রপ্তানি। সেবা রপ্তানি। পুনরপ্তানি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে দেউলিয়া হতে গেলে প্রথমত এই রপ্তানি উপার্জন ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে এখন থেকেই। কেন বলছি? বিষয়টা এমন না যে এই বছরে রপ্তানি ভাল হয়নি তাই আমরা আনন্দে মিষ্টিমুখ করব, আর বলব যে যাক বাবা অবশেষে বাংলাদেশ দেউলিয়া হল। রপ্তানির দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকতে হবে। প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হবে বা আশানুরূপ হবেনা। বাজার হারাতে হবে। নতুন বাজার সৃষ্টিতে ব্যার্থ হতে হবে। রপ্তানি বাজারে প্রধান কোন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা পেলেও এমনটা হতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯.৭৩ শতাংশ বেশি এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪.৩৮ শতাংশ বেশি। কিন্তু যদি দেউলিয়া হতে হয়। তবে রপ্তানিতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়ে আগামী ২০২৪ পর্যন্ত এভাবে চলতে হবে।
এটা গেল পণ্য রপ্তানি। সেবা রপ্তানি হয়েছে ৮ বিলিয়নের বেশি। পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ৬০ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৭ বিলিয়ন। যদি এমন কোন পরিস্থিতি হয় যে রপ্তানি কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে এবং আগামী দুই বছর এভাবেই চলেছে সেক্ষেত্রে দেউলিয়ার মত পরিস্থিতি হতে পারে।
পুনরপ্তানির হিসাবটা অন্যরকম। সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির বিকাশ হয়েছে পুনরপ্তানির মাধ্যমে। আরব আমিরাতের ক্ষেত্রেও। ব্যাপারটা হল এমন যে বাংলাদেশ ক্যামেরুন থেকে কাঠ আমদানি করবে। কিন্তু সেটা করবে সিঙ্গাপুরের মাধ্যেম। অনেকটা এমন যে ক্যামেরুনের কাঠ আমরা কিনব সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে ক্যামেরুন থেকে কিনে আমাদেরকে সরবরাহ করবে। বাংলাদেশ পুনরপ্তানি বাণিজ্যে এখনো সেভাবে এগোতে পারেনি। এর জন্য শর্ত হচ্ছে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বিজনেস হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কোম্পানি ওমেরা ভারতের সেভেন সিস্টার্সে এলপিজি (লিকুইডিফাইড পেট্রলিয়াম গ্যাস) রপ্তানি করছে। এটি হল পুনরপ্তানি। বাংলাদেশ এলপিজি উৎপাদন করেনা। ওমেরা বিদেশ থেকে কিনে এনে আবার অন্য দেশে বিক্রি করছে। অনেকটা ট্রেডিং। উদাহরনটি দেয়ার কারন হল, ওয়ালে দেখলাম অনেকেই বলছেন দেশে গ্যাস নেই অথচ দেশের গ্যাস বিদেশে রপ্তানি করছে। এটা সম্পূর্ণ জানার ভুল। অথবা জানতে না চাইবার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু না।
২. বাংলাদেশে ডলার প্রবাহ বৃদ্ধির দ্বিতীয় প্রধান মাধ্যম হল রেমিটেন্স। বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যান এবং উপার্জনের অর্থ বৈধ উপায়ে দেশে পাঠান সেটাই হল রেমিট্যান্স। এখানে উল্লেখ্য শুধুমাত্র বৈধ উপায়ে পাঠানো হলে তবেই সেটি রেমিট্যান্স। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হলে সেটা রেমিট্যান্স নয় কারন হুন্ডির মাধ্যমে কোন ডলার দেশে আসেনা। কোভিডের ভেতর বাংলাদেশে রেমিটেন্স এসেছিল প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ২১.১ বিলিয়ন ডলার।
উল্লেখ্য যে বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স আসা কমে গেছে। যারা বৈধ উপায়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তারাই রেমিটেন্স যোদ্ধা। তাদের অবদানে কোভিড-১৯ এর আর্থিক চাপ বাংলাদেশ নিতে পেরেছিল। প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ নতুন করে বিদেশে যাচ্ছেন। কিন্তু রেমিটেন্স কমছে। এর কারন একটাই হুন্ডি। হুন্ডি নিয়ে বিস্তারিত অন্য লেখায় বলেছি তাই এখানে আর বলার প্রয়োজন নেই। যদি এমন হয় যে রেমিটেন্স প্রবাহ একেবারেই কমে গিয়েছে সেক্ষেত্রে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসা কমে যাবে। ফলে ট্রেড ডেফিসিট এড্রেস করা কঠিন হবে। এরুপ পরিস্থিতি ভয়াবহ ভাবে চললে দেউলিয়া হবার প্রশ্ন উঠবে।
৩. দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋন। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসলে ডলার প্রবাহ বাড়ে। এই বিনিয়োগ আবার দুই ধরনের। একটা সম্পূর্ণ ফ্রেশ/নতুন বিনিয়োগ অন্যটি হল পুনবিনিয়োগ। অর্থাৎ এদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি রয়েছে তাদের বিনিয়োগ বা মুনাফা বিদেশে না নিয়ে দেশেই নতুন করে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ যদি ঋণ নেয় তবে সেক্ষেত্রেও ডলার আসা বাড়বে। যদি এমন হয় যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসা বন্ধ হয়ে গেছে। অথবা বাংলাদেশ চাইলেও ঋন পাচ্ছেনা সেক্ষেত্রে রপ্তানি, রেমিটেন্স এর বাজে পারফর্মের সাথে বিনিয়োগ বন্ধ ও ঋণ প্রাপ্তি বন্ধ যুক্ত হয়ে ২০২৪ এ এরুপ পরিস্থিতি হতে পারে। এটাতো গেল দেশে কিভাবে ডলার আসে সেটার হিসাব। এবার দেশ থেকে ডলার কিভাবে বেরিয়ে যায় সেটার হিসাব করা যাক।
১. আমদানি। আমদানি বৃদ্ধির সাথে রপ্তানির একটি সম্পর্ক আছে। যেহেতু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস হল প্রধান রপ্তানি পণ্য, তাই রপ্তানির বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে কাচামাল আমদানি করা লাগে। অর্থাৎ আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে আমদানি বৃদ্ধি পায় প্রধানত কাচামালে আমরা সয়ংসম্পূর্ন নই বলে। তবে বর্তমানে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে বেশ বিকাশ হয়েছে। ভ্যালু এডিশন ও বেড়েছে। আগে দেখা যেত সুতা ও ফেব্রিক আমদানি করা লাগত। বর্তমানে সুতা ও ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের লোকাল মার্কেট থেকে নেয়ার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত বছর আমদানির পেছনে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে পণ্য রপ্তানি ছিল মাত্র $৫২ বিলিয়ন ডলার। আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের তেল বা গ্যাসের প্রাচুর্য নেই। ফলে তেল পুরটায় আমদানি করা লাগে। গ্যাসের ভেতর অভ্যন্তরীণ গ্যাসফিল্ড বাদে এলএনজি আমদানি করা লাগে। তেলের ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা হল, আমরা ক্রুড ওয়েল আমদানি করতে পারি চাহিদার খুব অল্প অংশ। এর কারন আমাদের দেশে রিফাইনারি মাত্র একটি (ইস্টার্ন রিফাইনারি)। ফ্রান্সের টেকনিপের সহায়তায় এর সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প বহুবছর ধরে শুনছি। অগ্রগতি জানা নেই। যেহেতু ক্রুড তেল বেশি পরিমানে আমদানি করতে পারিনা ফলে আমাদের বেশি দামের রিফাইনড তেল আমদানি করতে হয়। এতে ডলার খরচ বৃদ্ধি পায়। আবার রিফাইন করার বাই প্রোডাক্ট হল বিটুমিন। রিফাইনারি সক্ষমতা কম বলে আমাদের বিটুমিন ও আমদানি করতে হয়।
২. ট্যুরিজম, বিদেশ ভ্রমণ। ডলার আসার ক্ষেত্রে ট্যুরিজমের কথা উল্লেখ না করার কারন হল এই খাতে আমাদের বিশেষ কিছু আয় হয়না। তবে ব্যায়ের ক্ষেত্রে বিশাল অংকের ডলার চলে যায় বাংলাদেশিদের বিদেশ ট্যুরে। এক্ষেত্রে অবাক হবার মত ব্যাপার হল, ভারতে সবথেকে বেশি ঘুরতে যায় বাংলাদেশিরা। আরব আমিরাতেও।
৩. বিদেশে বিনিয়োগ। আমাদের প্রচলিত সিস্টেমে বিদেশে বিনিয়োগের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতি নিতে হয়। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ (বৈধ উপায়ে) অনেক কম। অবৈধ উপায়ের বিষয়টি হুন্ডি সসংক্রান্ত পোস্টে ব্যাখ্যা করেছি।
৪. ঋণের কিস্তি পরিশোধ। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ডলার চলে যাবার অন্যতম প্রধান কারন হল ঋণের কিস্তি পরিশোধ। দেউলিয়ার প্রশ্ন এখানেই। যদি পরিশোধ না করতে পারে তবে একটি দেশ দেউলিয়া হয়ে যায়। প্রতি বছর ঋনের কিস্তির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলা হচ্ছে বড় কিছু ঋনের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে ২০২৪ থেকে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথা মতে আমাদেকে জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা লাগতে পারে।
এবার আলচনার মুল অংশে আসা যাক। উপরের আলোচনার উদ্দেশ্য একটি সাধারন ধারনা বা পুরো বিষয়টিকে সহজে বোঝা।
ব্যালান্সিং এর উপর নির্ভর করে সব কিছু। দেশে থেকে ডলার যাওয়া ও দেশে ডলার আসার ভেতরে যদি বড় ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা দেয় তখন বাফার হিসাবে কাজ করা রিজার্ভের উপর প্রেশার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবসময় আমদানি বেশি। রপ্তানি কম। ফলে ব্যালান্স অব ট্রেড সব সময় ঋণাত্মক থাকে। আর এখানে ব্যালেন্সিং এ সবথেকে কাজে আসে রেমিটেন্স। সাম্প্রতিক রুশ ইউক্রেন পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্ট ঋণাত্মক হয়েছে প্রায় $১৫ বিলিয়ন। এই চাপ সামলাতে গিয়ে টাকার মূল্য পড়ে গেছে। রিজার্ভ কমা শুরু হয়েছে। বড় ধরনের কোন নেতিবাচক কিছু না হলে ২০২৪ এ দেউলিয়া হবার চান্স নেই। সম্ভবত ২০৩০ এও না।
এর একটা ছোট্ট কারণ বলি। কিছু প্রিকশনারি একশন বাংলাদেশ সময়ের আগে নিতে পেরেছে। একটি হল রেমিটেন্স এ বোনাস দেয়া যা প্রায় ৩-৪ বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। বর্তমানে যেটা করেছে সেটি হল, আমদানির ক্ষেত্রে অপ্রয়জনীয় ও বিলাশবহুল আমদানি কঠিন করে দেয়া। ট্যাক্স স্ট্রাকচারে পরিবর্তন না আনলেও, ১০০ শতাংশ নিজস্ব উৎসের মার্জিন সংরক্ষনের বাধ্যবাধকতা আমদানির চাপ ইতোমধ্যে কমিয়ে দিয়েছে। তবে বিষয়টি যে ভাল এমন ও না। এর ফলে বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
তবে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া চুক্তি করছে যে এখন থেকে খাদ্য রপ্তানিতে কোন বাধা থাকবে না। সয়ং আমেরিকা এখন বলছে খাদ্যকে নিষেধাজ্ঞার আওতা মুক্ত করার জন্য। বাংলাদেশে সম্প্রতি ইইউ বলে গিয়েছে যে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করলেও তাদের আপত্তি নেই।
বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। প্রতিটি দেশ ইনফ্লেশনের ছোবলে পড়েছে। যখন বিশ্বে ডিপ্রেশন বা রেসিশন শুরু হয়, তখন চাহিদা কমতে থাকে। পুনরায় মার্কেট কারেকশন হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও এটা আর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখবে না বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রিজার্ভের অর্থ টাকার মান ধরে রাখতে আর বাজারে ডলার ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করলে রিজার্ভ দ্রুত ফল করত। কিন্তু এটাকে নিয়ন্ত্রিত ভাবে করা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আপাতত দেউলিয়া শব্দটা আমরা ভুলে যেতেই পারি। সুসংবাদ হল রাশিয়া থেকে ২ লক্ষ টন খাদ্য কিনবে বলে আলোচনা চলছে এরকম নিউজ দেখলাম। সাপ্লাই চেইন নরমাল হলে আল্লাহ চাইলে এই যাত্রায় আমরা বেঁচে যাব।
তবে ধরে নেই বাংলাদেশ ২০২৪ এ দেউলিয়া হবার সত্যিকারের ঝুকিতে পড়েছে। পেমেন্ট ব্যালান্স ঘাটতি $৩০-$৪০ বিলিয়ন হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে কেউ আর ঋন দিতে চাইছে না। রপ্তানি ঋণাত্মক। রেমিটেন্স আসা বন্ধ। এরুপ ক্ষেত্রে যদি রিমেটেন্স এ ৫-৬ শতাংশ বোনাস দেয়া হয় তাহলেও ডলার প্রেশার কাটানো যাবে। কারন রেমিটেন্স যা আসে এর থেকে হুন্ডি হয় দুই থেকে তিন গুন বা আরো বেশি। অধিক টাকা অফার করলে আশাকরি রেমিটেন্স যোদ্ধা বৃদ্ধি পাবে।
সবশেষে একটি বিষয় না বললেই নয়। সারাদিন কে কয়টা বিয়ে করল, কার সাথে কার ছাড়াছাড়ি হল এসব নিউজে সময় ব্যয় করার পর, হুট করে ঋন, জিডিপি, রিজার্ভের মত স্পর্শকাতর ইস্যুগুলাতে কিছু কমন কথা কপি পেস্ট করে ছড়ানো বন্ধ করা উচিত। নিজের দেশের সক্ষমতা বা দুর্বলতা জানা উচিত সবার। স্পর্শকাতর ইস্যুতে নিজের দেশকে দেউলিয়া করার কথা বলা উচিত নয়। জাতি হিসাবে নিজেদের মোরাল দুর্বল করার মানে নেই। না বুঝে খবর বানানোর মানে নেই। পত্রিকাগুলির উচিত একেকজনের বক্তব্য উপস্থাপনের সময় দায়িত্বশীল ভাবে তুলে ধরা। ক্লিকবেইট টাইপ শিরোনাম করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা নয়। (লেখক : সাবেক ব্যাংকার)