অবৈধ রেস্টুরেন্টবিরোধী অভিযান প্রমাণ করে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আগে তাদের কাজটি করেনি
কল্লোল মোস্তফা
রেস্তোরাঁর আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর অভিযান চালিয়ে অবৈধ রেস্তোরা বন্ধ করার মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করল এই মৃত্যুতে তাদের দায় কতটা।
বলছিলাম রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, পুলিশ, ও ফায়ার সার্ভিসের কথা।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে অফিসের অনুমতি নিয়ে রেস্তোরা করায় রাজউক গাউসিয়া টুইন পিক নামের একটি বহুতল ভবনের ১৪টি রেস্তোরাঁ বন্ধ এবং একটি রেস্তোরা ভেঙে দেয়। সেই সাথে কয়েকটি রেস্তোরার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশান অগ্নি ঝুঁকির কারণে ধানমন্ডিতে ১১টি রেস্তোরা সম্বলিত বহুতল ভবন কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজা সিলগালা করে দেয়। ভবনটির দুটি সিড়ির মধ্যে একটি বন্ধ ছিল, সিড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল এবং ছাদও বন্ধ ছিল।
দক্ষিণ সিটির অভিযানে ফায়ার সার্ভিসও ছিল। তারা ভবনটির কোন ফায়ার সেফটি প্ল্যান না থাকায় ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সতর্কতামূলক ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ পুরান ঢাকার ওয়ারীর র?্যাংকিন স্ট্রিটে অভিযান চালিয়ে র?্যাংকিন ১৪ রেস্টুরেন্ট থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব রেস্তোরার বেশির ভাগ চলছে আবাসিক ভবনে, কোনো রেস্তোরাঁর সিঁড়িতে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার, কোনোটিতে রান্নার সামগ্রী, কোনো কোনো রেস্তোরাঁয় নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, আবার কোনো কোনোটিতে নেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি। এই অভিযান প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলে রাখা দরকার।
প্রথমত, সাম্প্রতিক এই অভিযানের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হলো, নিয়ম ভঙ্গ করে কোন স্থাপনা তৈরী করা হলে সেই স্থাপনা বন্ধ করে দেয়া, ভেঙে দেয়া, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া এবং সতর্কতামূলক ব্যানার টানিয়ে দেয়ার ক্ষমতা সরকারি সেবা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলোর আছে। কিন্তু তারা সেটা নিয়মিত প্রয়োগ করছে না। কোন একটা ঘটনায় আলোড়ন তৈরী হলে, মানুষের জীবনহানি হলে কয়েকদিনের জন্য তাদের নাড়াচড়া দেখা যায়, তারপর আবার সব আগের মতোই চলতে থাকে।
দ্বিতীয়ত, বহুতল ভবনে রেস্তোরা ব্যবসা বছরের পর বছর ধরে চলছিল। রাজউক এগুলোর অনুমোদন দিয়েছে, সিটি কর্পোরেশান এগুলোর ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার ছাড়পত্র দিয়েছে কিন্তু এগুলো লাইসেন্স ও অনুমোদনের শর্ত মেনে চলছে কিনা তার তাদারকি করেনি সংস্থাগুলো। সে কারণেই আগুনে পুড়ে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কাজেই ঘটনা ঘটার পর কিছু অভিযান চালানোই যথেষ্ট নয়, বছরের পর বছর ধরে এই ভবন ও রেস্তোরাগুলো অবৈধভাবে কি করে চলছিল, কারা ঘুষ নিয়ে এই সুযোগ করে দিয়েছিলো তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে দুদিন পর সব আগের মত হয়ে যাবে।
তৃতীয়ত, অগ্নিঝুঁকির মধ্যে থাকা ভবনগুলোকে অভিযানের সময় তাৎক্ষণিক ভাবে বন্ধ করে দেয়া ঠিক আছে। কিন্তু শ্রমিক কর্মচারিদের গ্রেফতার করবার কি যুক্তি থাকতে পারে? ৪ মার্চ ২০২৪ দুপুর পর্যন্ত পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ২৮৫ রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে যে ৩৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারী। অথচ প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলবে, অনুমোদন আছে কিনা, নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ের দ্বায়িত্ব ভবন ও রেস্তোরা মালিকদের। তাছাড়া গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইন মানা হচ্ছে কিনা সেদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। সংকটের সময় জনপ্রিয় পদক্ষেপ নিতে গিয়ে যেন কোন আইন ভঙ্গ না হয়। নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরি। (লেখক : নির্বাহী পরিচালক সর্বজন কথা)