দেশে মেগা প্রকল্প গ্রহণের আগে সতর্কতা প্রয়োজন
সৈয়দ ফাত্তাহুল আলিম : যেকোনো নতুন সরকার বিশেষ করে নির্বাচন-পরবর্তী সরকার নতুন মেয়াদ শুরু করে, আসন্ন অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট এমনভাবে প্রস্তুত করে যা অফিস গ্রহণকারী দলের নির্বাচনী অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনকল্যাণমুখী মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন শুরু করেছে বলে জানা গেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, তার আগের মেয়াদে, সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল ইত্যাদির মতো বেশ কয়েকটি বড় মেগা অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ করেছিলো। নিঃসন্দেহে ঢাকা এমন একটি শহর, যা তার যন্ত্রণাদায়ক যানজটের জন্য কুখ্যাত ছিলো। জনদুর্ভোগ কমাতে এ ধরনের বিশাল পরিবহণ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহল করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সংযোগকারী পদ্মা সেতু দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের সুবিধা হিসেবে এর অপার সম্ভাবনার একটি মাত্র দিক আমাদের উপলব্ধ হয়েছে।
উন্নত সড়ক যোগাযোগের অর্থ এলাকা ও সেখানে বসবাসকারী মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন। সরকারকে আগামী বাজেটে সেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পদ্মা সেতুর সুবিধার পরিপূরক করার জন্য এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু করা অপরিহার্য। যেমন দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর, মংলা বন্দরের সম্ভাবনা সম্প্রসারণ ও শীঘ্রই সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কের উভয় পাশে খুচরা দোকানের বিস্তার বা অ-উৎপাদনশীল উদ্দেশ্যে কৃষি জমি দখল দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১.২৩ শতাংশ বা প্রতি ২.০ যোগ করার বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে না। ২১টি দক্ষিণ জেলার আঞ্চলিক অর্থনীতিকে শতকরা হিসাবে মূলত ধারণা করা হয়েছিলো। মেট্রো রেল প্রকল্প বা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও, শহরের দৈনন্দিন যাত্রীদের জন্য প্রত্যাশিতভাবে পণ্য সরবরাহ করা শুরু করেছে তা দেখতে সত্যিই আনন্দদায়ক।
তবে বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে অবকাঠামো-সংক্রান্ত নতুন উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিতে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রাখা সার্থক হবে যার জন্য মূল ঠিকাদার ২০১১ সাল থেকে আট বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও তহবিল স্বল্পতার কারণে প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরের পরেও প্রকল্পটি শুরু করতে পারেনি। এখন মূল ঠিকাদার (ইতালীয়-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড) প্রয়োজনীয় প্রকল্প ঋণ সংগ্রহের বিনিময়ে কোম্পানির শেয়ারের একটি বড় অংশ দুটি চীনা কোম্পানির কাছে সমর্পণ করার পর প্রকল্পের কাজ শুরু হলে, তহবিল বিতরণে অস্বীকৃতির কারণে এটি আবার স্থবির হয়ে পড়েছে। সময়ের অগ্রহণযোগ্য অপচয় ও দীর্ঘ বিলম্বের কারণে হারিয়ে যাওয়া সুযোগগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। নতুন অর্থ বছরে যে কোনো নতুন মেগা অবকাঠামো প্রকল্প শুরু করার পথে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সুখবর হলো, এবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব, মুদ্রা, মুদ্রা বিনিময় ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার তদারকি করা প্রাসঙ্গিক কমিটি আগামী অর্থবছরের জন্য সাধারণ বাজেট সম্প্রসারণ কমানোর পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। আশা করছি, সরকার কল্যাণমুখী প্রকল্প গ্রহণ করবে ও আরও ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতার সঙ্গে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করবে।
ংভধষরস.ফং@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস