নারীকে বিনিয়োগের উপায়ে পর্যবসিত করা নারী দিবসের শ্লোগান হতে পারে না
ফরিদা আখতার
আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৮ মার্চ। ফিলিস্তিনে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নারী ও শিশুদের টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড মেনে নিয়ে নারী দিবস পালন করা কিভাবে সম্ভব? বাংলাদেশের মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে নারীর সমঅিধকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। এটা জাতিসংঘের ঘোষিত প্রতিপাদ্য “ওহাবংঃ রহ ড়িসবহ: অপপবষবৎধঃব চৎড়মৎবংং” এর অনুবাদ। ছন্দ মিলিয়ে অনুবাদ, অথচ এর মর্মে রয়েছে নারী বিরোধী করপোরেট আদর্শ। বিশ্বজুড়ে নিউ লিবারেল ইকনমিক পলিসি বাস্তবায়নের প্রধান মাধ্যম বা উপায় হিশাবে নারীকে ব্যবহার করবার শ্লোগান এটা।
নারীর সমধিকার ও সম সুযোগ প্রতিষ্ঠা রাজনৈতিক অধিকার বিনিয়োগের সঙ্গে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোকে বাধ্য করা যেখানে আমাদের কর্তব্য সেইখানে তা না করে নারীকে বিনিয়োগের উপায়ে পর্যবসিত করা নারী দিবসের শ্লোগান হতে পারে না।
তাছাড়া কোন খাতে বিনিয়োগ? নারীদের কোন দিকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে?
এই কর্পোরেট প্রতিপাদ্য বিভিন্ন দেশ যার যার মতো ব্যাখ্যা করবে, কিন্তু মুল কৌশল হবে নারীর ও শিশুর পক্ষে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইন ও অধিকারগুলো এড়িয়ে ধামাচাপা দেওয়া।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী সংগঠনগুলো যারা যে কর্মসূচিই দেন না কেন দেবেন ফিলিস্তিনের নারীদের সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানানো । ইজরাইলের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য তুলে ধারার কর্তব্য ছাড়া নারীদের পক্ষে অন্য কোন শ্লোগান তোলা অসম্ভব। যারা ফিলিস্তিনের গণহত্যার প্রশ্নে “নীরব” তারা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার বিপরীত শিবিরে বাস করেন।
অক্টোবর ৭, ২০২৩ এর পর থেকে গাজায় টনকে টন বোমা ফেলে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনী হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে ৭০% নারী ও শিশু। তাদের পানি বন্ধ, খাদ্য বন্ধ, বিদ্যুৎ বন্ধ। ইজরাইল কোন ত্রাণ গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আদালতে ইজরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। তবুও তারা থামেনি। এখনো হাসপাতাল গুলো লাশ ভর্তি হয়ে রয়েছে। মায়েরা মৃত শিশু কোলে নিয়ে কাঁদছে। গর্ভবতী নারীরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে। এমন ছবি নিত্যদিন আমরা দেখছি।
তাহলে আসুন ৮ মার্চ ফিলিস্তিনের নারীদের প্রতি আমরা সংহতি জানাই। এটাই এখন বিশ্বের নারীদের প্রধান কর্তব্য। (লেখক : মানবাধীকার নেত্রী)