নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দর : ভোক্তার কি কোনো রক্ষাকবচ নেই?
সৈয়দ মনসুর হাশিম : এই রমজানও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য বিশেষ সদয় হবে না। প্রতি বছর সাধারণ প্রবণতা হলো পবিত্র মাসে প্রতিটি অনুমানযোগ্য ভোগ্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। মুদ্রাস্ফীতি ইতিমধ্যেই একটি বিস্ময়কর স্তরে পৌঁছেছে। একটি নবনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করায় ও মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠলে, বিশেষ করে রমজান মাস পর্যন্ত সকল আয় গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখা দেয়।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এমন কিছুই ঘটেনি। জনপ্রতিনিধিরা যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, খাদ্যের দামের ক্ষেত্রে উন্নয়নের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতিটি প্রধান খাদ্যপণ্য ও মসলার দাম বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রমজানের আগের সপ্তাহে চিনির দাম প্রায় ১৭.৮৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজিতে (৪০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত) পেঁয়াজ গ্রাহকদের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ইফতারের টেবিলে খেজুরের পরিমাণ প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে; মসুর ডাল এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। সরকার সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে দিলেও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে সেই দাম মানতে নারাজ।
চাহিদা ও সরবরাহের আইন দেশের কোনো বাজারে প্রযোজ্য নয়। খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খল প্রধান খেলোয়াড়দের দ্বারা আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রিত হয় যার মধ্যে আমদানিকারক থেকে মিলার, পাইকারী-খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চেইন কম হয়। সেই চেইনের প্রতিটি কগ যেখানে দামের হেরফের হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে অন্যায়ের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে; তবুও তারা এ সম্পর্কে কিছু করতে অনিচ্ছুক (বা সম্ভবত অক্ষম)। বিদেশি বাজারে উচ্চমূল্য, ডলারের ঘাটতি, পর্যাপ্ত ক্রেডিট লেটার খুলতে না পারা ইত্যাদি অজুহাতের স্বাভাবিক লিটানি ছাড়াও কিছু ব্যাখ্যা করা যায় না। সরকার আমদানি শুল্ক মওকুফ বা কমিয়ে দিলে তার সুফল ভোক্তাদের কাছে যাবে না কেন? সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা মিল-গেটের দাম না কমানোর জন্য মিলারদের দায়ী করে।
কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিরা কেন দাম বেড়েছে সে সম্পর্কে তাদের নিজ নিজ বর্ণনায় রাখলেও আলু, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে একটি ক্লাসিক কেস রয়ে গেছে যা বাজারের অপূর্ণতা তুলে ধরে। পুরো ফসল তোলার মৌসুমে আলুর দাম বেড়ে যায়। আলুর উপচে পড়া সরবরাহ নিয়ে কর্তৃপক্ষ এমন কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি যা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও একই কথা। নীতিনির্ধারকেরা জনগণের মতামতকে যেভাবেই দেখেন না কেন, এটি একটি বিপজ্জনক খেলা যা শক্তিশালী ব্যবসায়িক কোটারির গোষ্ঠী দ্বারা খেলা হচ্ছে। আজ হতাশা ও ক্রোধের একটি আন্ডারকারেন্ট রয়েছে যা লোকেরা অনুভব করে কিন্তু জনসমাবেশে তা প্রকাশ করে না। যদিও অসাধু ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো অবাস্তব মুনাফা অর্জন করছে ও তারা এই রমজানে আবারও সেই একই কাজ করবে। এক্ষেত্রে সরকারকে দায়ী করতে হবে।
সধহংঁৎ.ঃযবভরহধহপরধষবীঢ়ৎবংং@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
গ্যাসসিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন