দেশে প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ প্রতি লিটার অকটেনে ৪ টাকা, পেট্রোলে ৩ টাকা ও ডিজেলে ৭৫ পয়সা কমলো
সোহেল রহমান : [১] আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার অকটেনে ৪ টাকা, পেট্রোলে ৩ টাকা ও ডিজেলে ৭৫ পয়সা কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার নতুন মূল্যের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন এই দাম বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দিনগত রাত ১২টা থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। [২] প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা, অকটেন ১৩০ টাকা থেকে ১২৬ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। [৩] এর আগে গত ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট থেকে দেশের বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমিয়েছিল সরকার। [৪] নতুন দাম সমন্বয়ের আগে গত বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকদের জ্বালানি দিতে চাই। বৃহস্পতিবার থেকেই জ্বালানি তেলের দামে একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে দাম নির্ধারণ করা হবে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা চালু করতে পারলে খরচ কমে আসবে। বিশ্ববাজারে যদি কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে তেলের ক্ষেত্রে দাম আরো কমে আসবে।
[৫] প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে জ্বালানি বিভাগ। সেখানে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাস দ্রব্য হিসেবে সবসময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম বেশি রাখা হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। [৬] বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ফর্মুলা বা গাইডলাইন অনুসারে এখন থেকে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের আমদানি বা ক্রয়মূল্যের আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করা হবে। [৭] মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি বা ১৩৩ টাকা ৫৭ পয়সা (১ রুপি সমান ১ দশমিক ৪৪ টাকা হিসাবে) এবং পেট্রোল ১০৬ দশমিক ০৩ রুপি বা ১৫২ টাকা ৬৮ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। যা প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৪ টাকা ৫৭ পয়সা ও পেট্রোল ২৭ টাকা ৬৮ পয়সা বেশি।
[৮] জানা যায়, দেশে জ্বালানি তেলের আমদানি, বিক্রয় ও বিপণন করে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসি। এর মধ্যে অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করে সবসময়ই মুনাফা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ডিজেল বিক্রির উপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে থাকে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দীর্ঘ সময় ধরে ডিজেল বিক্রি করে মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
[৯] তবে জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে দাম কমানো হয়।
[১০] ভর্তুকি সমন্বয়ের কথা বলে দাম বাড়ানোর পর গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা মুনাফা করে বিপিসি। তার মধ্যে সরকারকে লভ্যাংশ দিয়েছে ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও (জুলাই-ডিসেম্বর) ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে সংস্থাটি।