৪৭ শতাংশ কারখানা আগুনের ঝুঁকি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ব্যর্থ : বিডা
বিশ্বজিৎ দত্ত : [১]শিল্প দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৪৭ শতাংশ কারখানা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঝুঁকি দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
[২]গত বছরের মে মাসে বিডা চিহ্নিত হওয়া ১০৬ ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার মধ্যে ১৭টিকে তিন মাসের মধ্যে সংশোধনী কর্মপরিকল্পনা (সিএপি) বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়।
[৩]কম ঝুঁকিপূর্ণ বাকি ৮৯ কারখানাকে বছরের শেষ নাগাদ নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়। [৪]কারখানা পরিদর্শন উদ্যোগের জাতীয় সমন্বয়ক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ কারখানার মধ্যে চারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং একটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মানিকগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে।’ [৫]উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নয় কারখানাগুলো ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনের কাজ শেষ করেছে। আরও তিন কারখানায় কাজ চলছে।
[৬]২০২১ সালের ৮ জুলাই হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর শিল্প-দুর্ঘটনা রোধে দেশব্যাপী উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করেছে বিডা।
[৭]অভিজিৎ চৌধুরী জানান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ১০৬ কারখানাকে আলাদা চিঠিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য বিধি মেনে চলতে বলেছে।
তিনি বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে যখন কারখানাগুলো পরিদর্শন শুরু করি, তখন সিএপি বাস্তবায়ন ও ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলেছিলাম।’
[৮]ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সিএপি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে বিডাকে সহযোগিতা করছে।
এফবিসিসিআই অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয়ের মধ্যে আগুন ও অবকাঠামোগত সুরক্ষায় তিন পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিল।
[৯]’পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের সময় কারখানা মালিকদের মধ্যে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি,’ যোগ করেন তিনি।
[১০]কারখানা পরিদর্শনের পর বিডার অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘একক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার দাবি আছে। যাতে এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ট্রেড লাইসেন্স নবায়নসহ প্রয়োজনীয় সব ছাড়পত্র পেতে পারেন।’
[১১]কারখানা মালিকরা সরকারি সংস্থাগুলোর সময় সাপেক্ষ পরিদর্শন প্রক্রিয়া এড়াতে তাদের ইউনিটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একক সংস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দুটি বৈঠক করেছি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
[১২]রাজধানীর বেইলি রোডে সাম্প্রতিক আগুনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিডার উদ্যোগে রেস্তোরাঁ ও ভবন পরিদর্শন করা হচ্ছে না। তাই এ ব্যাপারে সংগঠনের কোনো দায় নেই।’
[১৩]প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে প্রধান করে ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশব্যাপী কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
[১৪]এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পাঁচ হাজার ২০৬ কারখানা পরিদর্শন করেন বিডার কর্মকর্তারা।
[১৫]দ্বিতীয় দফায় গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ ১৭ জেলার পাঁচ হাজার একটি কারখানা পরিদর্শন করে বিডা।
[১৬]অভিজিৎ চৌধুরী আরও বলেন, ‘এবারও সবচেয়ে বেশি শ্রমঘন কারখানাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানায় বেশি শ্রমিক রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে কাজ করেন।’
তিনি জানান, সরকার নতুন কমিটি গঠনের গেজেট প্রকাশের পর দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন কারখানা পরিদর্শন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কাছে হস্তান্তর করবে।
কারণ নবনির্বাচিত সরকার বর্তমান জাতীয় কমিটিতে রদবদল করতে যাচ্ছে।
উভয় পরিদর্শনের সমন্বিত ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রায় ৫৬ শতাংশ কারখানা আগুনের ঝুঁকিতে এবং ৪৪ শতাংশ বিদ্যুৎ, অবকাঠামোগত ও পরিবেশগত ঝুঁকিতে আছে।
[১৭]এ ছাড়া, বিডা সারাদেশে ১৫ শিল্প জেলায় ৫৮ টিমের মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে কারখানা পরিদর্শন করবে।
৭ মার্চের ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, যুদ্ধ করে স্বাধীনতা আনতেও প্রস্তুত করেছে : প্রধানমন্ত্রী
মাসুদ মিয়া: [১] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই ভাষণ জনগণকে শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে এবং তাদের স্বাধীনতাও এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন,এই ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতিই দেয়নি, যুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। সংগ্রামের পথ বেয়ে রক্তের অক্ষরে লেখা হয়েছে মাতৃভাষায় কথা বলার এবং আমাদের স্বাধীনতার অধিকার।
[২] প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর পরাধীন থাকা যাবেনা। বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে হবে। আর সেই চিন্তা থেকেই তিনি ধাপে ধাপে এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার চেতনায়। তিনি তার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আর তারই অংশ হচ্ছে ৭ই মার্চ।
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের জাতির পিতা কি বলেছিলেন তার বার বার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল এমনকি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা যারা পরবর্তীতে বই লিখেছেন তারাও তাদের বইতে লিখেছেন ‘উনি যে কি বলে গেলেন আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকলাম আমরা কোন অ্যাকশনই নিতে পারলাম না। [৩] প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতে পাকিস্তানিদের সময় চলে যায় যে বঙ্গবন্ধু কি বলে গেলেন আর কি হয়ে গেল, বাঙালিরা যুদ্ধে নেমে পড়ল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাধারে যেমন স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেন তেমনি যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে না হয় এবং জনগণ তৎক্ষণাৎ যেন পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয় সেব্যারেও প্রজ্ঞার পরিচয় দেন।
তিনি বলেন, একজন নেতার একটি ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের শুধু প্রস্তুতিই দেয়নি, যুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কথা’।
[৪] অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।
জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজিয়ে শোনানো হয়।
[৫] ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
পরে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাঙালির রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।