চার পণ্যের শুল্কছাড় হলেও শুধু কমেছে তেলের দাম নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় রমজানে স্বস্তি মিলবে না ক্রেতাদের
মাসুদ মিয়া: [১] আর দুইদিন বাদে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় রমজানে পণ্যে কিনতে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি মিলছে না। এদিকে রোজায় পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল কিছুটা কমলেও অন্য তিন পণ্যে দাম কমেনি বরং বেড়েছে। [২] শুক্রবার রমজান মাস শুরুর আগে সপ্তাহিক ছুটির দিনে বেশিরভাগ ক্রেতা রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে এসেছিলেন সকালে। তবে আগেভাগেই বেশিরভাগ পণ্যের দর বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। [৩] ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নিত্যপণ্যের বাজার সকালে এক রকম- বিকেলে আরেক রকম পরের দিন আরেক রকম। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, সেইসব পণ্যেরও দাম বাড়ছে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই। ফলে বাজারে গিয়ে পছন্দের পণ্যই চাহিদামতো কিনতে পারছেন না অনেকেই। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রাখতে গিয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না কিনেই ঘরে ফিরছেন। [৪] ক্রেতারা বলেছেন, আগের রমজান থেকে এ রমজানে খেজুর, ছোলা, ডাল, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। যা অনেকটা নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে বলা চলে। ক্রেতারা আরও অভিযোগ করে বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে সারা বিশ্বে কমার হিড়িক থাকলেও আমাদের দেশে বাড়ার হিড়িক।
[৫] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে আরো কঠোর আইন করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বাজারে এখন এক কেজি সাধারণ মানের (জাহেদি) খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজার আগ মুহূর্তে এ ধরনের খেজুরের কেজি ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এছাড়া ভালো মানের খেজুর ৮০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে, যা গত রমজানের থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
[৬] অন্যদিকে, রমজানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। গতবছর বাজারে এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। সেই হিসেবে এবার কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। একইভাবে পিঁয়াজুর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় খেসারি ডালের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। যা আগে ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল।
[৭] মতিঝিল বাজারের মুদি দোকানিরা বলেন, এবার রোজার অনেক আগেই থেকে ছোলা খেসারি ডালসহ অন্যান্য সব ডালের দাম চড়া। চিনির দাম এখনো বাড়েনি তবে বাড়তে পারে। তেলের দাম কমলেও নতুন দরে তেল বাজারে আসে। সব মিলে রোজার কোনো পণ্যের সুখবর নেই। অন্যান্য ডালের মধ্যে প্রতি কেজি মোটা, মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর মুগ ডালের কেজি পড়ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা।
[৮] এদিকে মতিঝিল বাজারের ক্রেতা সাইফুল বলেন, দাম তো সবকিছু আগেই বাড়িয়ে রেখেছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে একটু ভালো মন্দ খাওয়ার উপায় নেই। ছুটির দিনে রোজার বাজার করতে এসেছিলাম, অনেক কিছুই টাকায় কুলায়নি। তাই না নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। বাজারে একইভাবে গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এখন কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ চিনির কেজিতে এক বছরের ব্যবধানে ক্রেতাদের বেশি খরচ করতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। [৯] অন্যদিকে, রমজান এলেও কমছে না পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম। গতবছর রোজার আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই দাম এখন প্রায় তিন গুণ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সেই হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজে বেশি খরচ হবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও রসুন ২২০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত রমজান থেকে প্রায় প্রতি কেজি ১০০ টাকা বেশি। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির এখনো গত বছরের দামকে অতিক্রম করেনি। যদিও গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দুই দিন আগে কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গত বছর এ সময় দর ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।
তবে গত বছরের এ সময়ের দরকে ছাড়িয়েছে গরুর মাংস। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। গত বছর রোজার আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা।
[১০] এদিকে রোজায় পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যে দাম সামান্যও কমেনি বরং বেড়েছে। সয়াবিন তেলেও সবাই সুফল পাচ্ছে না। কারণ বাজারে ১ মার্চ থেকে নতুন কম দামের সয়াবিন তেল সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখনো বেশিরভাগ দোকানে পুরোনো দামের তেল বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে কম দরের পাঁচ লিটারের বোতল আসলেও এক বা দুই লিটারের বোতলের দেখা মিলছে না।